X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা একাডেমির বইয়ের মান যাচাই নিয়ে প্রশ্ন

উদিসা ইসলাম
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৩০আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৩৪





বইমেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) প্রতিবছর বইমেলায় কিছুসংখ্যক বইকে ‘মানসম্পন্ন’ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলা একাডেমি। এবারও তেমন মান যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এই মান নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট কোনও নীতিমালা না থাকায় একেকজনের কাছে একেক ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে।
লেখক ও কথাসাহিত্যিকরা বলছেন, বইয়ের মান যাচাইয়ের কাজ বাংলা একাডেমির নয়। মেলায় স্টল বরাদ্দের সময় দেওয়া শর্তের মধ্যে ‘মানসম্পন্ন বই প্রকাশ’ অন্যতম একটি শর্ত। ফলে মান না থাকলে স্টল বরাদ্দই পাওয়ার কথা নয়।
তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরি না করে মান যাচাই করা একেবারেই সঠিক নয়। বরং প্রকাশকদের সম্পাদনা পরিষদ ও রিভিউ কমিটি গঠন করা হলে মান সেখানেই নির্ধারিত হতে বাধ্য।
গত বছর মেলার ২৭তম দিনে বাংলা একাডেমি ‘মানসম্মত’ বইয়ের তালিকা ঘোষণা করে। অর্থাৎ এর আগে ২৫-২৬ দিন ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। মেলার প্রথম দিন উদ্বোধনীসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা থাকায় সেদিন কাজ হয় না। ফলে হাতে থাকে ২৫ দিন। গতবারের মেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৯১। ২৫ দিনে এগুলো শেষ করতে প্রতিদিন পড়তে হয়েছে অন্তত ৬৪টি বই। যত দক্ষই হোন না কেন, তিন-চারজন কর্মকর্তার পক্ষে তা অসম্ভব বলেই মনে করেন প্রকাশক ও লেখকরা।
গত বছর মেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি মাত্র ৪৮৮টিকে ‘মানসম্পন্ন’ বলে চিহ্নিত করে। এর অর্থ বাকি ৪ হাজার ১০৩টি বই তাদের দৃষ্টিতে ‘মানহীন’।
কী উপায়ে মান নির্ধারণ করেন— এমন প্রশ্নে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক (বিক্রয়, বিপণন) জালাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের কয়েকজন রোজ নতুন আসা বইগুলো পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে মান নিরূপণ করেন। এজন্য এবারও একাডেমির একটি টিম কাজ করছে।’
মান নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মান বলতে যেগুলো বে-মান, মানহীন সেগুলোর বাইরের বই। আপনিও সেটি দেখলেই বুঝবেন। আমরা যখন হাই কোয়ালিটি মূল্যায়নে যাবো তখন হয়তো আরও কিছু বিবেচনায় নিতে হবে। কোনও একটি বইয়ের মান নেই, এটি দেখলেই বোঝা যায়। তারপরও আমাদের লেখক-কর্মকর্তা নিয়ে একটি কমিটি থাকবে, যারা এটি দেখবে।’
প্রত্যেকটা বই আপনারা পড়ে দেখেন কিনা— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা বই আমরা দেখি, কিন্তু আমরা প্রত্যেকটা বই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ি— এমন নয়। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি, বোঝা যায়, কোন বইটি মানসম্পন্ন। আমাদের টিমের সদস্যরা দিনেরটা দিনে যাচাই করে ফেলছেন। যারা করছেন তারা যথেষ্ট দক্ষ। মাসশেষে আমরা জানাবো।’
কোনটাকে ‘মানসম্মত’ বই বলা হচ্ছে জানতে চাইলে যাচাই টিমের সদস্য মতির রায়হান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত লেখক যারা এবং নতুনদের যে লেখাগুলো মোটামুটি পাঠ-উপযোগী সেই বইগুলোকে মোটামুটি মানসম্পন্ন বলছি।’
কীভাবে কাজটি হয়— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তথ্যকেন্দ্রে সমস্ত স্টলের বই যায় প্রচারের জন্য, ওখানে এন্ট্রি হওয়ার পর আমাদের কাছে আসে। আমরা মিলিয়ে দেখি কোনগুলো মানসম্মত।’
মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানহীন বই ‘দেখলেই বোঝা যায়’— এটি কোনও পদ্ধতি হতে পারে কিনা, জানতে চাইলে লেখক ও শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনে হওয়া জিনিসটা বিপজ্জনক। বাংলা একাডেমি শ্রেষ্ঠ বই পুরস্কার দেয়, মানসম্পন্ন বই ঘোষণা দেয়। তাদের বরং মানের মাপকাঠি কী, তা বছরের শুরুতে প্রচার করা উচিত। তাহলে প্রকাশকরা সেটি মানতে পারেন।’ বাংলা একাডেমির একটি মাননির্ধারণী কমিটি ও নীতিমালা থাকা উচিত বলে মত দেন তিনি।
বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, মেলা চলাকালে মান নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘দুই-তিনজন মানুষ হাতে বই নিয়ে এটা নির্ধারণ করলে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আরেকজন বিশেষজ্ঞ দ্বিমত করতে পারেন। যেহেতু বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দের সময় চুক্তির মধ্যেই যে শর্তগুলো আছে, মানসম্মত বই বের করার বিষয়টি সেখানে অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু ওই জায়গায় আমরা এটা যাচাই করতে পারি। তাহলে প্রকাশনা সংস্থা সম্পাদনা পরিষদ বানাতে উৎসাহিত হবে এবং রিভিউ প্যানেল তৈরি করবে। আর প্রকাশক রয়্যালটি দিচ্ছেন কিনা, মানসম্মত বই বের করছেন কিনা— এসব মনিটরিংয়ের একটি কমিটি সরকার করতে পারে। ওই পর্যায়েই যদি যাচাই-বাছাইটা হয়ে যায় তাহলে আমার আপত্তি নেই।’
বিশিষ্ট এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘পাঠকদের কাছ থেকে সক্রিয় অভিমত জানার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেটি অনলাইনেও হতে পারে। আমি সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে। এই কাজ সরকারের নয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নয়, বাংলা একাডেমির তো নয়ই।’
তিনি বলেন, ‘প্রকাশকদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যেন বাংলা একাডেমিকে বাংলাবাজারের বর্ধিত সংস্করণ মনে না করে।’
বইয়ের মান যাচাইয়ে পুরো বই পড়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন খোদ বাংলা একাডেমির পরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। লেখক-প্রকাশকরা মান নির্ধারণের নীতিমালা চান— এমন তথ্য জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিংসের কোনও নীতিমালা হয়? এটি কোনও অঙ্ক-ভূগোল পরীক্ষা দেওয়া? পুরো বই পড়ে তবেই বলতে পারি বইটি মানসম্মত কিনা।’
একাডেমি পুরো বই পড়ে মান নির্ধারণ করে না বলে টিমের সদস্যরাই জানিয়েছেন— এমন কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘যদি মান নির্ধারণটা মানসম্পন্ন না হয় তাহলে এ বছর এ ধরনের কোনও ঘোষণা দেওয়া হবে না।’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা