সরকারের চেয়ে বড় কোনও প্রভাবশালী নেই মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘নদীর নাব্যতা ঠিক রাখা ও দূষণরোধে অবৈধ দখল উচ্ছেদে যে অভিযান চলছে তা অব্যাহত থাকবে। এর থেকে পিছপা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
এর আগে পীর ফজলুর রহমান তার সম্পূরক প্রশ্নে নদী রক্ষায় চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে অভিনন্দন জানিয়ে জানতে চান, ‘আপনি প্রভাবশালী মহলের দখল থেকে নদী উচ্ছেদ করছেন; এই বিশাল কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে পারবেন? এতে কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে কি?’
জবাবে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণরোধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। দেশবাসী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। গণমাধ্যম সমর্থন যুগিয়েছে। সচেতন সমাজ ও পরিবেশবাদীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। সবাই আমাদের পাশে আছেন। সরকারের থেকে প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তি হতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি, এখান থেকে পিছপা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে।’
নদী পথের উন্নয়নে ১০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌপরিবহনসহ সব সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। প্রত্যেক সেক্টরের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তার বাইরে নয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর নদীমাতৃক দেশকে আমাদের জীবন ও অর্থনীতিতে যুক্ত করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরে এই সেক্টরের দিকে কেউ আর দৃষ্টি দেয়নি। কোনও সরকার নদীর দিকে তাকাইনি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তারা রাজনীতি করেছে। এখন আমরা নদীগুলোকে রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে ওই অনেক নদী নাব্যতা হারিয়েছে। অনেক নদী মেরেও গেছে। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১০ বছরে নদী পথ প্রশস্ত করেছি। নদীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে।’
চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছোট-বড় ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় চার হাজার ৭৩২ জন নিহত হয়েছেন। এসময় নৌ-দুর্ঘটনাসহ নৌযান পরিচালনার বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য ২৬ হাজার ৮৯৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নৌ-দুর্ঘটনায় মামলা হচ্ছে ৪৪৮টি। নৌ-দুর্ঘটনায় ২০৪টি মামলার আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়েছে এবং বাকি মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে।
এই সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নৌ-যানের সঠিক পরিসংখ্যানসহ একটি ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, মৃতপ্রায় শুকিয়ে যাওয়া ১৩টি নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারের কাজ চলামান রয়েছে। নদীগুলো হলো– কংস, মগড়া, চলতি, দুধকুমার, রক্তি, বাউলাই, রকসা, নালার, আড়িয়াল খাঁ, আত্রাই, বুড়ি, ময়নাকাটা ও নতুন নদী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।