নারায়ণেগঞ্জে তিন নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্তকমিটির প্রতিবেদনে নির্যাতিতারা নির্দোষ উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ কথা জানান।
নারায়ণেগঞ্জে বন্দরে পাওয়া টাকা চাইতে গিয়ে তিন নারী নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিষয়টি কমিশনের নজরে আসলে কমিশন তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং তিন সদস্যের তদন্তকমিটি গঠন করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কমিটিকে একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি মর্মান্তিক এবং এতে ওই নারীদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এজন্য কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং একই বিভাগের উপ পরিচালক গাজী সালাউদ্দিনকে দিয়ে তিন সদস্যের তদন্তকমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং নির্যাতনের শিকার নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্যাতিত নারীরা নির্দোষ। তাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কমিশনের হস্তক্ষেপে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আসামিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’ বাকী আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
এসময় কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন,‘কমিশন ভুক্তভোগী নারীদের সবরকম আইনি সহায়তা দিবে।’
ভারতের আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ভুল আসামি বাদল ফরাজির প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন,‘কমিশন ইতিমধ্যে বাদল ফরাজির ন্যায় বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য কেরানীগঞ্জ কারাগারে গিয়ে আমরা বাদল ফরাজির সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের একটি দল আগামী মাসে ভারতে যাবে। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ কর হচ্ছে। এছাড়াও ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। সম্মিলিতভাবে বাদল ফরাজিকে সহায়তা করা হবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ১৩ জুলাই জুলাই বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফ ভুল করে বাদল ফরাজীকে গ্রেফতার করে। এসময় একই বছরের ৬মে নয়াদিল্লির অমর কলোনিতে খুন হওয়া এক বৃদ্ধার খুনিকে বাদল সিংকে খুজছিল পুলিশ। বাদল ফরাজীর ইংরেজি বা হিন্দি জানা না থাকায় তখন বিএসএফ সদস্যদের সে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। যে কারণে তাকে ওই খুনের মামলার আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন দিল্লির আদালত। পরে ওই দেশের উচ্চ আদালতেও তার সাজা বহাল থাকে। পরে বাদল ফরাজি নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি জানার পর ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তাকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।