X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের অনুবাদ বাড়লেও মান বাড়েনি

উদিসা ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৮আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৫১

অনুবাদ বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন

বিশ্বসাহিত্যকে পরিচিত করিয়ে দিতে অনুবাদের বইয়ের কদর চিরকালের। প্রতিবছর বাংলা একাডেমি থেকে হাতে গোনা তিন চারটে অনুবাদের বই এলেও বাংলাবাজারের প্রকাশনা সংস্থাগুলোয় অনুবাদের বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এসব অনুবাদগ্রন্থের সংখ্যা বাড়লেও মানহীনতায় প্রশংসার চেয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বেশি। অনুবাদককে সময় দিয়ে যথেষ্ট সম্মানী দিয়ে কাজটি করতে সুযোগ না করে দেওয়ায় ভাল অনুবাদক পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। আর প্রকাশকরা বলছেন, অনুবাদ মূলধারার সাহিত্য হিসেবে জায়গা পায় না বলে কেবল অনুবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চায় না কেউ। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলছেন, বাংলাবাজারকেন্দ্রিক অনুবাদগুলো অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক, মূল টেক্সট থেকে সরে যাওয়া, ভুলত্রুটিতে ভরা, যার ওপর আস্থা রাখা যায় না।

যেমন হচ্ছে অনুবাদ 

ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি উভয় ভাষায় বই অনুবাদের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। বাজারে এসব বইয়ের কাটতিও বেশ। দুই অনুবাদের ক্ষেত্রই শঙ্কাজনক উল্লেখ করলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের মান বেশি খারাপ।  তাদের ভাষায়, ‘এই অনুবাদ হয় না বললেই চলে’। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির অনুবাদ বহির্বিশ্বে পাঠিয়ে দেখেছি তারা গ্রহণ করেনি। তারা বলেছে, এটি ইংরেজিতে সঠিকভাবে অনূদিত হয়নি। বরং ইংরেজি থেকে বেশকিছু ভালো বাংলা অনুবাদ আমাদের হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়াও পালি, সংস্কৃতসহ বিভিন্ন ভাষায় যে শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয় সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়ছে ওই ভাষা কিন্তু পরীক্ষা দেয় বাংলাতেই। ফলে ভাষাটার সঠিক শিক্ষা হচ্ছে না এবং ওই ভাষা রপ্ত করে যে অনুবাদ করা সেটা প্রকৃত অর্থে তারা শেখে না।

বইমেলার একটি স্টলে অনূদিত বই প্রদর্শন করা হচ্ছে

যে কারণে মানহীন অনুবাদ

বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ভালো অনুবাদক থাকার পরও আশান্বিত হতে পারছেন না কেউ। বাংলা একাডেমির অনুবাদ উপ-বিভাগের অনুবাদ কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এখন বেশকিছু ভালো অনুবাদক আছেন যারা সিরিয়াসলি কাজটি করতে চান। কিন্তু সময় নিয়ে ভালো করে অনুবাদ করতে চাইলে তাকে যে সুযোগ সুবিধাগুলো দেওয়া দরকার সেটা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনুবাদকে মূলধারার সাহিত্যের বিষয় হিসেবে বিবেচনা না করার কারণে লেখক বিপন্ন বোধ করেন।

তিনি বলেন, প্রাইভেট প্রকাশনা সংস্থার কয়েকটি বাদে, ৯০ ভাগ প্রকাশনা সংস্থা যারা অনুবাদের বই করে তাদের কোনও রিভিউয়ার থাকে না। অনেক সময় ভালো ভালো বই করছেন নিম্ন মানের অনুবাদক। বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক নামে নিম্নমানের অনুবাদ বাজারে নিয়ে আসছে প্রকাশকরা। কোনও বই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত হলে বাজারি অনুবাদকরাই কাজটা ধরেন এবং অধিকাংশ সময় নিজের ভালোলাগার জায়গা থেকে কাজটি না করার কারণে কাজটি ভালো হয় না। অনুবাদকেরও যে নিজের বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার পৃথক পৃথক ক্ষেত্র থাকে সেই কনসেপ্টই তৈরি হয়নি দেশে।

অনুবাদ হলেও বিদেশে যায় না বই

১৯৫৬ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার সময় এর লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ ছিল বিশ্বসাহিত্যকে এবং বাংলাভাষাকে অনুবাদ করা। সেই জায়গা থেকে সরে এসে একাডেমি এখন মূলত গবেষণা কাজে মনোযোগ দেওয়ায় অনুবাদ গৌন কাজ হয়ে গেছে কিনা প্রশ্নে একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এখনও অনুবাদকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি। একাডেমি সাহিত্যনির্ভর আরও টেক্সট অনুবাদে জোর দিবে আগামীতে। বিভিন্ন ভাষায় বাংলাকে অনুবাদের চেষ্টা করা হবে। বাংলা একাডেমি বাংলা থেকে ইংরেজি করলেও বিশ্বদরবারে পৌঁছানোর সুযোগ না করতে পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের বাইরে এইসব অনুবাদগ্রন্থ পাঠাতে নিজস্ব এজেন্ট ও ব্যবস্থাপনা দরকার, সেসব করে উঠতে আরও সময় লাগবে। তবে আমি মনে করি বইগুলো পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার আগে আরও মানসম্পন্ন অনুবাদের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

বাংলাবাজারকেন্দ্রিক অনুবাদ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে, মূল টেক্সট থেকে সরে যাওয়া, ভুলত্রুটিতে ভরা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অনুবাদের ওপর আস্থা রাখা যায় না। তারা কোনও সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করে না, সায়েন্স ফিকশন, শিশুদের যে বইতে ব্যবসা হবে সেসবের মানহীন অনুবাদ প্রকাশ করছে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। কোনও মতে একটা কিছু দাঁড় করিয়ে দেয়।

করণীয় বলতে গিয়ে শামসুজ্জামান খান বলেন, বিদেশে আমাদের যে ছেলেমেয়েরা আছে তাদেরকে ভালো বাংলা শিখিয়ে ভালো অনুবাদ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাংলাটা জানলে, এর ঐতিহ্যর সঙ্গে পরিচয় থাকলে ভালো করবে।

বইমেলার আরেকটি স্টলে অনূদিত বই প্রদর্শন

প্রকাশকদের বক্তব্য

বেশ কিছু ভালো অনুবাদের প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড এর পরিচালক (ইউপিএল) এর পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাহরুখ বলেন, ভালো অনুবাদ না পাওয়ার দায় প্রকাশক ও পাঠক উভয়ের। অনুবাদের বইয়ের চাহিদা আছে বলে মূল বইটির প্রকাশকের অনুমতির তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে অনুবাদ করে দেওয়ার প্রবণতা যেমন আছে, পাঠকও বিবেচনা না করে কিনছেন। আমরা একটা বইয়ের পেছনে দুইবছর সময় নিয়ে, লেখককে যথাযথ সম্মানী দিয়ে কাজটা যখন করছি, অন্য প্রকাশক যেনতেন ভাবে সেটা আমাদের আগে বের করে পাঠকের হাতে দিচ্ছেন, কারণ চাহিদা আছে। কিন্তু পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে সেটা ভেবে দেখছেন না।    

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক ও ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনুবাদকদের নিয়ে নার্সিংকরা হয় না। আবার, অনুবাদ মূলধারার সাহিত্য হিসেবে জায়গা পায় না বলে কেবল অনুবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চায় না কেউ। আগে অনুবাদ সাহিত্যের পুরস্কার ছিল এখন তাদের সেই প্রণোদনাও নেই বললেই চলে। অনুবাদের পাঠক আছে এবং অতিরিক্ত বাণিজিক মনোভাবাপণ্য হওয়ায় মান থাকে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে কাজটিকে সিরিয়াসলি নেওয়া হচ্ছে না। যে কয়টি প্রকাশনী বিশেষ করে অনুবাদের কাজ করে তাদের বিক্রি এতো বেশি যে তারা বাণিজ্যটা করতে গিয়ে মান হারাচ্ছে।

/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা