স্বজনদের কান্নায় ভারি এখন চকবাজারের বাতাস। রাতভর আগুন জ্বলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনের কয়েকটি ভবনের সামনে এখনও মানুষের ভিড়। কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, করছেন আহাজারি, কারও মুখে রা নেই। ধ্বংসস্তূপের মাঝে হারানো স্বজনের শেষ চিহ্নটুকু খুঁজছেন তারা। আগুনে পুড়ে নারী-শিশুসহ নিহত হওয়া ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে উদ্ধার হওয়া নিহতদের লাশ মর্গে পাঠানো শুরু হয়। রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় স্বজনদের কাউকে ভবনগুলোর আশপাশে আসতে দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করেছেন।
প্রিয়জন হারানোর শোকে চিৎকার করে কাঁদছেন তারা। হাউ মাউ করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চকবাজার এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে।
পুড়ে যাওয়া ভবন ওয়াহিদ মঞ্জিলে আলিফ হোসেনের (৪০) হ্যান্ডব্যাগের দোকান ছিল। দোকানে পুড়েই মারা গেছেন আলিফ। বাবার লাশ শনাক্ত করেছেন ছেলে রুবেল হোসেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এসে মরদেহটি শনাক্ত করেন তিনি। এর আগে বুধবার রাত থেকেই চকবাজারের ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোডের এক প্রান্তে বসে কাঁদতে দেখা গেছে তাকে।
একই মার্কেটে কসমেটিক্সের দোকান ছিল ৪৫ বছর বয়সী সিদ্দিকের। ছেলে বাবু তার বাবা হারানোর শোকে স্তব্ধ। কোনও কথা বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে।
নিহত বা নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরাই নন, পাড়া প্রতিবেশীদের কারও মুখেই তেমন কথা নেই। শোকের ছায়া নেমেছে পুরো চকবাজার এলাকাজুড়ে। ফজরের নামাজ শেষে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদে বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন মুসল্লিসহ এলাকাবাসী। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয় সেখানে। তখন শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
চকবাজার এলাকার পাশাপাশি কান্নার রোল নেমেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। প্রিয় মুখগুলোকে হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা।
উল্লেখ্য, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চার ঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ৭০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন।
আরও পড়ুন...
মোবাইলে ছবি দেখিয়ে নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনরা
লোকারণ্য ভবনগুলো এখন ইট-কাঠের কঙ্কাল (ফটোস্টোরি)
চকবাজারে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা
পুরান ঢাকায় কোনও কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে না: সাঈদ খোকন
নিমতলীর ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিইনি: সামন্ত লাল সেন
২০০৯ সাল থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে বলে আসছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ভবনগুলো যেন ‘সেলফ্ মেইড এক্সপ্লোসিভ’: শাকিল নেওয়াজ
চকবাজারে আগুন: নিখোঁজদের খোঁজে ঢামেকে স্বজনরা
'এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে'
আগুন দেখে শাটার বন্ধ, ভেতরে দগ্ধ হয়ে বেশিরভাগের মৃত্যু
মুহূর্তেই মৃত্যুপুরি! (ফটোস্টোরি)
মৃত্যু আলাদা করতে পারেনি দুই ভাইকে
পুরান ঢাকার আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার
পুরান ঢাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে, ৭০ লাশ উদ্ধার