X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চকবাজারের আগুনের সূত্রপাত নিয়ে যত মত

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:১৪আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:১২

চকবাজারের আগুনের সূত্রপাত নিয়ে যত মত

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় সর্বনাশা আগুন কেড়ে নিয়েছে ৬৭টি তাজা প্রাণ। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে লাগা ভয়াবহ এই আগুনের সূত্রপাত নিয়ে নানাজন নানা কথাই বলছেন। তবে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আগুনের প্রকৃত কারণ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, চুড়িহাট্টা মোড়ে যানজটে থাকা একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। আরার কেউ বলছেন, ওই মোড়ে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের সামনে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে লাগে। পড়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগুনের এই ভয়াবহতার জন্য চুড়িহাট্টা এলাকায় থাকা কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গোডাউনকেই দায়ী করছেন সবাই।

ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া কিছুই বলতে রাজি নন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনের এই ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন হাতে পেয়ে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানানো যাবে।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে।
চুড়িহাট্টার নন্দ কুমার দত্ত রোড়ের বাসিন্দা মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি চুড়িহাট্টা মোড়ের দিকে হেঁটে হেঁটে আসছিলাম, ঠিক সাড়ে ১০টার দিকে একটি বিকট আওয়াজ শুনি। কাছে এসে দেখি মসজিদের সামনে একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন বের হয়ে সামনের পিকআপে থাকা আরও গ্যাস সিলিন্ডারে গিয়ে লাগছে। এতে একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে আর উড়ে উড়ে চারপাশে ছড়াতে থাকে। এতে ওয়াহেদা ম্যানশনের দোতলার দেয়াল ভেঙে পড়ে আর বৃষ্টির মতো করে স্প্রে’র বোতল ফুটতে থাকে আর এদিক-ওদিক ছড়িয়ে যায়। আমি আগুনের তাপে সামনে যেতে পারিনি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে থাকা ওই প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-গ ০৪- ০১৭৩) আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেছে। ওই গাড়ির কিছুই অক্ষত নেই। চাকার রিম ফেটে ও ভেঙে গেছে। গাড়ির ভেতরে সব পুড়ে ছাই।
স্থানীয় যোবায়ের হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনের তাপে রাতে এখানে আসতে পারিনি। তবে ফজরের নামাজের পর এখানে এসেছিলাম। দেখেছি রাস্তায় এদিক-ওদিক লাশ পড়ে আছে। এই গাড়ির ভেতর থেকে চালকের সিট থেকে লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এরপরে আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
অনেকে বলছেন, এই গাড়ি থেকেই আগুনের সূত্রপাত যানজটের কারণে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগুনের সময় যানজটে থাকা মানুষগুলোর কেউই সরতে সময় পায়নি। নিমিষেই আগুনে পুড়ে গেছে তারা।’
চুড়িহাট্টা এলাকার বাসিন্দা ও প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সৈয়দ আসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রাস্তায় আগে এত যানজট হয়নি কখনও। ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে একটি পিকআপের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশের রাজমহল হোটেলের একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভবনের দোতলার দেয়াল ভেঙে পড়ে। সেই গোডউনে থাকা স্প্রে গুলো একে একে বিস্ফোরণ ঘটে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় থাকা সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই ভবনের নিচতলায় তিনটি প্লাস্টিক দানার গোডাউন, একটি ডেকোরেটর দোকান, একটি ফ্রিজ মেরামতের দোকান ছিল। আর চুড়িহাট্টা মোড়ের সবখানে অসংখ্য বিষ্ফোরিত স্প্রের বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার পুরোটি ছিল একটি বডি স্প্রে’র গোডাউন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এখানে এই ধরনের গোডাউন থাকার ব্যাপারে তারা কেউই জানতেন না। গোপনে গোপনে এখানে গোডাউন পরিচালনা করতেন একজন বিহারি লোক। কেউ তার নামও জানতেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গোপনে যদি ভবন মালিকরা কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দেয়, তবে আমরা জানবো কীভাবে? এখানে যে এত বড় একটি বডি স্প্রের গোডাউন আছে তা আমরা জানতামই না।’ এই বডি স্প্রের কারণে আগুনের তীব্রতা অনেক গুণে বেড়ে গেছে দাবি করেন তিনি বলেন, ‘আমার নিজের চাচাতো ভাই মাহিদ (২৪) আগুন নেভাতে গিয়ে মারা গেছে।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তের পর আগুনের আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে বলা যাবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে থেকে শুনেছি, মসজিদের সামনে একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ভবনের একটা অংশে আগুন লাগে। এতে পাশের একটি হোটেলে থাকা এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়েছে। এছাড়াও এই এলাকায় কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গোডাউন ছিল। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’
ফায়ারা সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপ পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। আমরা দুই-তিন ধরনের তথ্য পেয়েছি। ঘটনাস্থলে সব আলামাতে ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তেই বেড়িয়ে আসবে আগুনের প্রকৃত কারণ কী ছিল।’

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা