X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণ: আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এলো যেভাবে

এমরান হোসাইন শেখ
০৭ মার্চ ২০১৯, ১০:০৫আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৩:৪৮

৭ মার্চের ভাষণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এই ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ওই বছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণকে 'ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে' তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংস্থাটির ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি’ (আইএসি)। ওইদিন প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতরে তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি দেন। বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতার ঘোষণার’ স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে প্রায় ৯ বছর ।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের’ (বিএনসিইউ) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভাষণটির স্বীকৃতি মেলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৭ মার্চের ভাষণের বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত ফাইলের সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন ওই বছরের ৩০ মার্চ। এরপর শুরু হয় পরবর্তী কার্যক্রম। এসময় ইউনেস্কোর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার ও কর্মশালায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব, মর্মার্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরা হতে থাকে। এর অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আয়োজিত এক কর্মশালায় ভাষণটির ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিএনসিইউয়ের তৎকালীন প্রোগ্রাম অফিসার ও শিক্ষাবিদ রোকেয়া খাতুন।

‘সেকেন্ড রিজিওনাল ট্রেনিং ওয়ার্কশপ অন দ্য ইউনেস্কো, মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডের’ বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে ওই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। একটি জাদুকরী ভাষণ কীভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে ওই প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ভাষণের ওপর তৈরি প্রেজেনটেশনটি ব্যাপক প্রশংসা পায়। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম ইউনেস্কোতে ভাষণটির বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য আবেদন দাখিল করেন। আবেদন দাখিলের পর সেটি যায় এ সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটিতে। ২৪-২৭ অক্টোবর ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সব প্রক্রিয়ার সম্পন্ন শেষে আসে কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা।

সাধারণত আন্তর্জাতিক তাৎপর্য রয়েছে, এমন বিষয়গুলোকেই বিশ্ব আন্তর্জাতিক রেজিস্টারের মেমোরিতে (মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার) তালিকাভুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ১৮ মিনিট স্থায়ী এ ভাষণটিকে অনুবাদ করা হয়েছে বহু ভাষায়। নিউজউইক সাময়িকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে অভিহিত করে।

প্রসঙ্গত, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির আগেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বৈশ্বিকভাবে একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার বছরের সেরা ভাষণ নিয়ে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ২২৩ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টোরি’ নামের ওই গ্রন্থ সংকলন করেছেন জ্যাকব এফ ফিল্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ দিয়ে শুরু করা সংকলনের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের। বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি।

৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধূ যে কত বিচক্ষণ নেতা ছিলেন তার একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তার ৭ মার্চের ভাষণ। ওই দিনের বক্তৃতায় জাতির পিতা মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুরো বক্তৃতাটি জুড়ে ছিল আসন্ন জনযুদ্ধের রণকৌশল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা । আবার তিনি চারটি শর্ত আরোপ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যায় আখ্যায়িত হলেন না।’

তিনি আরও বলেছেন, বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক নেতার আলোচিত ভাষণ রয়েছে। তবে কোনও নেতার ভাষণ এমন সংগ্রামমুখর ১০ লক্ষাধিক মুক্তিকামী নিরস্ত্র মানুষের সামনে হয়নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এই ভাষণটির মাধ্যমে তিনি নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তর করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দেন। ৭১-এর ৭ মার্চে প্রদত্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে, যা সমগ্র জাতির জন্য গৌরবের এবং আনন্দের।

আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচারে রেডি ছিল ‘কল-রেডী’

/এএমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক