স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় ১৭ ও ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ঘিরে ছিল বিশেষ আয়োজন। পত্রিকাগুলোর পাতায় থাকতো বঙ্গবন্ধু কীভাবে জন্মদিন পালন করবেন তার খবর, তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির বার্তা ও পারিবারিক আবহে জন্মদিন পালনের সচিত্র প্রতিবেদন। ১৯৭৫ সালে পত্রিকাগুলোর আয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ সংখ্যা বের করা,উপসম্পদকীয় প্রকাশসহ বিভিন্ন আয়োজন ছিল সে বছর। এরপর আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বদলে যেতে থাকে সবকিছু। ১৯৭৬ সালের ১৭ মার্চ প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কোনও উল্লেখই ছিল না।
১৯৭২ সালের ১৮ মার্চের সংবাদপত্রে দেখা যায় ১৭ মার্চ দিনটিতে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসেছিলেন সফরে। তার উপস্থিতিতে সারাদিনই রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু এরই মাঝে স্বজন, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নেন তিনি। এইদিন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্স প্রতিবেদন করা হয়।
১৯৭৩ সালের জন্মদিনেও বঙ্গবন্ধুর কাটে ব্যস্ততায়। ওই বছরের জন্মদিনেও ইন্দিরা গান্ধী শুভেচ্ছা বাণী পাঠিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী শুভেচ্ছা বাণীতে লিখেছিলেন, ‘আপনি দীর্ঘজীবী হউন এবং বাংলাদেশকে স্বনির্ধারিত ও ইস্পিত লক্ষ্যে পরিচালনা করুন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সৃষ্টিতে আপনার যে অবদান, আশা করি জাতির উন্নতি ও পুনর্গঠনের জন্য আপনার দান তারচেয়ে কোনও অংশে কম হবে না। এইদিন বাংলার বাণী ও ইত্তেফাক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর বাবা, মা ও স্ত্রীসহ পরিবারের ছবি প্রকাশ করা হয়।
এর সাথে বক্স করে জন্মদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ একটি ইতিহাস। স্বাধীন বাংলার ইতিহাস-বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস। চুয়ান্নর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পিছনের তিপান্নটি বছরের দিকে দৃষ্টি মেললে যে ইতিহাস চোখে পড়ে সে ইতিহাস এ এদেশেরই ইতিহাস।
দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রধান সংবাদ ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের খবর। এছাড়া পত্রিকাজুড়ে ছিল জন্মদিনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিজ্ঞাপন। ইত্তেফাকের প্রথম পাতার উপরের ফোল্ডে বক্স করে বঙ্গবন্ধুর জন্মজয়ন্তীর প্রতিবেদন ছাপা হয়। এছাড়া বিশেষ দুই পাতার আয়োজনও ছিল সেদিন।
১৯৭৫ সালে জাতির জনকের জন্মদিন উদযাপনের খবর নিয়ে বাংলাদেশ অবজার্ভার লিড স্টোরি করেছিল। ‘লং লিভ বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে তাদের বিশেষ পাতাও বের হয় এইদিন। দৈনিক বাংলার প্রথম ও শেষ পাতা জুড়ে ছিল বঙ্গবন্ধু আর তার জন্মদিনের বিভিন্ন খবর ও শুভেচ্ছা বার্তা। বরাবরের মতো এ বছরেও পত্রিকাগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে শুভেচ্ছাবাণী প্রকাশ হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর বদলে দেওয়া হয় বাংলার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিকে অস্বীকার করে সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর প্রতিফলন পাওয়া যায় ১৯৭৬ সালের ১৭ মার্চের পত্রিকার পাতাতেও। একবছর আগে যে পত্রিকাগুলো প্রতিযোগিতা করে জন্মজয়ন্তীর খবর প্রকাশে উৎসুক ছিল সে সব পত্রিকার পাতায় হঠাৎ অনুপস্থিত হয়ে যান জাতির জনক।
১৯৭৬ সালের এদিনে দৈনিক বাংলার প্রধান খবর ছিল জাপান বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পে পুঁজি খাটাতে পারে। আর পরিবার পরিকল্পনাকে জীবন পদ্ধতির অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা বিষয়ক প্রতিবেদন ছিল ইত্তেফাকের প্রধান খবর।
পত্রিকা কার্টেসি: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম ও সেন্টার ফর জেনোসাইড