স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্তরা যাতে আর কখনও সরকারে আসতে না পারে সেজন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের মানুষের কাছে আমার একটাই আহ্বান, এই বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি ও এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা আর যেন কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই বাংলাদেশ মুজিবের বাংলাদেশ। কাজেই এই বাংলাদেশে জনগণের অধিকার সমুন্নত হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভাষা আন্দোলনেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসামান্য অবদান রেখেছেন। হাতেগোনা দুয়েকজন সেই অবদানের কথা বললেও অনেকেই সেসব কথা বলতেন না। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, একসময় সে ইতিহাস হারিয়ে গেছে। অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও উল্লেখ করতেন না তার অবদান। ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ওই বছরই তিনি ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তার এসব অবদানের কথা অনেকেই জানতেন, কিন্তু লিখতেন না, বলতেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালকে আমরা ঘোষণা করেছি মুজিব বর্ষ। এই মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে একেবারে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি এলাকায় এখন থেকে সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতির পিতার এই জন্মদিন থেকেই আমাদের শুরু হবে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি। আমরা সেই মুজিব বর্ষের প্রস্তুতি নেবো। কারণ, তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অবদানের তথ্য একসময় মুছে দেওয়া হয়েছিল। জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যেসব রিপোর্ট করে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি সেসব রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিলাম। সেসব গোয়েন্দা রিপোর্টেই ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা কী করেছিলেন সেসব তথ্য সংগ্রহ করি। তখন আমি ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক বক্তব্য দেই। অনেকেই তখন আমার বিরুদ্ধে লিখেছিলেন, আমি নাকি তথ্য আবিষ্কার করেছি। কিন্তু আজ সেই সত্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ‘কারাগারের রোজনামচা’, গোয়েন্দা নথি- এগুলোতে সেসব ইতিহাস উঠে এসেছে। সেখানে আরও তথ্য পাওয়া যাবে যে তিনি কীভাবে আন্দোলন করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকেই কিন্তু স্বাধীনতার সূচনা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদার আন্দোলন বঙ্গবন্ধু চালিয়ে গিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময়ই বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় আসে স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। ১৯৫৮ সালে যখন আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে, তখনই সেই চিন্তা সামনে আসতে থাকে।
বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা দল নির্বাচিত হলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন দেখাতে পারছেন না। দুর্নীতি ও হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের নেতারা জেলে অথবা বিদেশে পলাতক, ঠিক সেই অবস্থায় নির্বাচন। ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। জামায়াত একটা সিটও পায়নি। বিএনপি নামকাওয়াস্তে সিট পেয়েছে। কেননা, ৩০০ সিটে যখন ৭০০-এর কাছাকাছি প্রার্থী মনোনয়ন দেয় তখন মানুষের ভোট পাবে কীভাবে?
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কমরুল ইসলাম, মহিলা সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, সদস্য আজমত উল্লাহ খান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
