X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ!

উদিসা ইসলাম
১৯ মার্চ ২০১৯, ১২:২৭আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ১৭:৩৫

ভোট

একাদশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর এবার উপজেলাতেও ভোটকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব— এই আস্থা ফের জাগাতে পারলে তবেই ভোটাররা কেন্দ্রে ফিরে আসবেন।

সিলেটের একটি  ভোটকেন্দ্র সোমবার (১৮ মার্চ) উপজেলা নির্বাচনে শ্রীমঙ্গলের দি বাডস্ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল বেলা ছিল ভোটারশূন্য। প্রিজাইডিং অফিসার নোমান সিদ্দিকী জানান, প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট কাস্টিং হয়েছে মাত্র ৭৬টি। ভোটারদের আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিকাশ চন্দ্র সাহা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটাররা না আসলে কী করবো?’ কেন্দ্রে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মানসিকতা জানা গেছে।

সিলেট সদরের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ভোটার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভোট দিলেই কী আর না দিলেই কী? বাসার সবাইকে না করেছি ভোটকেন্দ্রে যেতে। কারণ, ভোটকেন্দ্রে হঠাৎ মারামারি শুরু হলে সমস্যায় পড়তে হবে।’

দিনাজপুরের একটি ভোটকেন্দ্র এদিকে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান আছকির খান অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন। আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে বল প্রয়োগ, কেন্দ্র দখল, পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা, জালভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন তিনি।

যদিও দিনশেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম ছিল। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ভোটাররা। এছাড়া, নির্বাচনে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী  না থাকায় তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে আনা যাচ্ছে না।

শ্রীমঙ্গলের একটি ভোটকেন্দ্র জাতীয় নির্বাচনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে মানুষ পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে কেন্দ্রমুখী হচ্ছে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে— জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার প্রভাব রয়ে গেছে। এখন নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে, কিন্তু সেই চেষ্টাগুলো ভোটাদেরকে কেন্দ্রে আনতে যথেষ্ট শক্তিশালী না। মানুষের মনে এই সংশয় তৈরি হয়েছে, আসলে তাদের মতামত শেষ পর্যন্ত ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হবে কিনা। এই আস্থার সংকট থেকে যতক্ষণ ফেরাতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা ভোটারদের সক্রিয় করতে পারবো বলে মনে হয় না।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো.শাহনেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন নির্বাচনে বড় দল আসে না এবং বিভিন্ন পদে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যেই কেউ জিতবে বলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়, তখন ভোটাররা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ভোটাররা এখন কতটা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারবে— সেটি নিয়েও সন্দিহান হয়ে আছেন। ফলে তারা কেন্দ্রে যান না।’

এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের আস্থা ফেরাতে ভোটের পরিবেশ যে সুন্দর করা গেছে, সেই বোধটা গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিবিদদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে হবে। কেবল একটা দল বড় থাকলে এবং বিপরীতে অন্য প্রার্থীরা যদি দুর্বল থাকেন, মানুষ কেন আগ্রহ ধরে রাখবে।’

নওগাঁর একটি ভোটকেন্দ্র সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন- এর সম্পাদক বদিউল আলম  মজুমদার মনে করেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে মানুষের ভেতরে অনীহা আর অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মানুষ ভোট দিলে কিছু আসে যায় না, ভোট দিতে গেলে দিতে পারে না। এই যে ঘটনাগুলোর মধ্যদিয়ে তারা যখন যাচ্ছে, তখন অংশগ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। এগুলো গণতান্ত্রিক অবস্থার জন্য অশনিসংকেত। জনগণের মধ্যে যদি সম্মতি সৃষ্টি না হয়— সেটা গণতান্ত্রিক হয় না।’ করণীয় বিষয়ে ড. মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। কারণ, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কারোর জন্যই সুখকর হবে না।’

যখন কোনও একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে মানুষ অংশগ্রহণ করে না, তখন সেই প্রক্রিয়ার ওপরে মানুষের আগ্রহ নেই বলে ধরে নিতে হয়—  এমনটা মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। মানুষ কেন নিজেকে এই প্রক্রিয়াগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করলো, সেটাও যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতি বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে যদি ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখতে না পান, তাহলে তিনি পরবর্তীতে আর ভোট দিতে যাবেন না— এটিই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন:

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে: ইসি সচিব

‘ইলেক্টেড না সিলেক্টেড?’

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম