বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস(বিইউপি) এর শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহতের প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তা অবরোধ করে রাখলেও তারা যানবাহনগুলোকে শৃঙ্খলিতভাবে চলাচল করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া তারা বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখছেন।
বুধবার নগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা গেছে সায়েন্সল্যাব এলাকায়। সেখানে আন্দোলন করছেন ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বেলা ১১ টার পর থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় তারা। ফলে নিউ মার্কেট থেকে মিরপুর, মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্সল্যাব হয়ে মতিঝিল যাওয়ার বাস, প্রাইভেট কারের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩২-২৭ সড়কে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে রাখায় মোহাম্মদপুর, গাবতলী ও আজিমপুরগামী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধের কারণে পুরো শহরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে জরুরি সেবা ও শিক্ষার্থীদের বহনে ব্যবহৃত গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
অবরোধ করলেও তারা রিকশা, মোটরসাইকেল সারিবদ্ধভাবে চলাচলে চেষ্টা করছে।
সায়েন্সল্যাবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। আমরা একটি নিরাপদ সড়ক চাই। যেখানে আমাদের আর কোনও ভাইকে রাস্তায় চাপা পড়ে মরতে হবে না।’
সায়েন্সল্যাব মোড় সংলগ্ন আড়ংয়ের পাশে সড়কে চলাচলকারী রিকশাগুলোকে লাইন ধরে চলাচলে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের একজন সিটি কলেজে আবু হুরাইরা ফাহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ সড়ক চাই। যে সড়কে আমাদের চাপা পড়ে মরতে হবে না। তাই আমরা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলের জন্য বলছি।’
রাস্তা অবরোধ করে রাখার প্রসঙ্গে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের ছাত্র আল তিহান বলেন, ‘গতবছর শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। সরকার অনেক আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা দাবিগুলো আদায়ে ও মঙ্গলবার আমাদের এক ভাই নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি।’
সড়ক অবরোধ করে রাখার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সবকিছু স্বাভাবিক চললে সরকার কোনও দাবি মেনে নেবে না। তাই আমরা সড়ক অবরোধ করেছি।
ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তায়াফ মাহমুদ বলেন, ‘জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে সেটা আমরা জানি। আমরা তো শুধু নিজের জন্য এ আন্দোলন করছি না, সবার জন্য নিরাপদ সড়ক চাইছি। আশা করি সব শ্রেণির মানুষ আমাদের এ আন্দোলনকে সমর্থন দেবে।’
ডিএমপি দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান বলেন, এই এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ। যেকারণে যানজট চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপি দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অফিসারসহ সবাই মাঠে আছে। কিন্তু যান চলাচল শুরুর ব্যাপারে ছাত্ররা সহযোগিতা না করা যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে না। আমরা অপেক্ষা করছি।’
এদিকে, রাস্তা থেকে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) সত্যকি কবিরাজ। তিনি বলেন, ২৭-৩২ পর্যন্ত একপাশের রাস্তা বন্ধ রয়েছে। ১১টার পর থেকে তারা রাস্তা অবরোধ করেছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর কুড়িলের যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসে ওঠার সময় পেছন থেকে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এ দুর্ঘটনার পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তারা মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে। সেখান থেকেই বুধবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে ফের গাড়ির কাগজ চেক করছেন শিক্ষার্থীরা
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
প্রধানমন্ত্রীকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান নুরের (ভিডিও)
ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধ জবি শিক্ষার্থীদের
শাহবাগ মোড়ে অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কমিটি হবে: মেয়র আতিকুল