X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগুনের ঝুঁকিতে ঢামেক বার্ন বিভাগ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
২১ মার্চ ২০১৯, ১৪:০৯আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৯, ১০:২৩

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ

দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। অথচ সেই ঢামেক বার্ন বিভাগই রয়েছে আগুনের ঝুঁকিতে। ২০১৭ সালে দুই দফা পরিদর্শনের পর ঢামেক হাসপাতালের এই বিভাগের ভবনটি অগ্নিঝুঁকির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এরপর ভবনের অগ্নিপ্রতিরোধ, নির্বাপণ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছু সুপারিশমালাও দেয় সংস্থাটি। কিন্তু গত দুই বছরেও সেসব সুপারিশের বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করা হয়নি।

ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিটি তলায় কিছু্ এক্সটিংগুইশার রাখা আছে। তবে সেগুলোর মেয়াদকাল ২০১৬ সালেই ফুরিয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওইসব এক্সটিংগুইশার এখনও একইভাবে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও ভবনের প্রতি তলায় হাইড্রেন্ট হোজরিল বক্স স্থাপন করা হলেও বক্সের ভেতরে ফায়ার হোজরিল (পাইপ) থাকতে দেখা যায়নি। হোজরিল বক্সের ভেতরে ফাঁকা।

তবে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র হিসেবে আমাদের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে পর্যাপ্ত এক্সটিংগুইশার রয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস থেকে যেসব যন্ত্রপাতি দিয়েছিল সেগুলোও আছে।’ এ বিষয়ে তিনি হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার

বার্ন ইউনিটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এখন যেমন: ঢামেক জরুরি বিভাগের বিপরীত পাশে ছয়তলা একটি ভবনে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। ঢামেক বার্ন বিভাগের প্রবেশদারের বাম পাশে রয়েছে জরুরি বিভাগ। এর বাইরে রয়েছে রোগী ও স্বজনদের বসার ব্যবস্থা। সরেজমিন দেখা যায়, ছয়তলা ভবনে ওঠানামার জন্য একটি লিফট, দুই পাশে দুটি সিঁড়িপথ রয়েছে। এছাড়াও রোগীর ট্রলি আনা নেওয়ার জন্য রয়েছে একটি র‍্যাম। তবে প্রতিটি তলায় র‍্যামের মুখে রোগীর ট্রলি থাকতে দেখা গেছে। র‍্যামের রেলিংয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভেজা কাপড় মেলে রাখতেও দেখা গেছে।  বিদ্যুতের তারের পাশেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে দুই ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার (Co2 fire extinguisher এবং dry powder fire extinguisher)। নিচতলায় রয়েছে দুটি এক্সটিংগুইশার। দ্বিতীয় তলায় রোগীদের এইডিইউ ও আইসিইউ’র সামনে রোগীর স্বজনদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে এখানে কোনও এক্সটিংগুইশার ছিল না। ভবনের তৃতীয়তলায় (রেড-ইউনিট) ৬টি, চতুর্থতলায় (ব্লু-ইউনিট) ৭টি এবং পঞ্চমতলায় (গ্রিন-ইউনিট) ৩টি এক্সটিংগুইশার রয়েছে। এদিকে ভবনের ষষ্ঠতলায় (কেবিন ব্লক) কোনও এক্সটিংগুইশার দেখা যায়নি। বার্ন বিভাগের ভবনটিতে সর্বমোট ১৮টি এক্সটিংগুইশার থাকতে দেখা গেলেও এর সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব এক্সটিংগুইশারের গায়ে মেয়াদকাল ২০১৪ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৬ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত লেখা থাকতে দেখা যায়। এক্সটিংগুইশারগুলো মেয়াদ দুই বছর ৯ মাসের বেশি  সময় আগে শেষ হয়ে গেলেও সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি। ভবনের কোনও তলায় স্মোক/হিট ডিটেক্টর এবং ফায়ার অ্যালার্মের ব্যবস্থা থাকতে দেখা যায়নি। 

এদিকে, বার্ন ইউনিটের পঞ্চমতলার (গ্রিন ইউনিট) বারান্দার শেষ প্রান্তে দেয়ালে রয়েছে একটি হোজরিল বক্স। বারান্দার দুই দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে দুটি বেড। সেখানে রোগীও রয়েছে। সেখানে থাকা হোজরিল বক্সটি রোগীর খাটের ওপর এসে পড়েছে। ওই বক্সের ওপরে রোগীর সব ওষুধ রাখা ছিল। এমন চিত্র বার্ন বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থতলায়ও দেখা গেছে। ভবনের পঞ্চমতলায় বারান্দার একটি বৈদ্যুতিক ইউনিটের কক্ষ রয়েছে। সেই কক্ষের দরজার সামনে রোগীর বেড থাকতে দেখা গেছে।  হোজরিল বক্সের সামনে রোগীদের বেড

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা: ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দুই দফা রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। তালিকা অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ডের ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হাসপাতাল হিসেবে ১৭৩টি এবং ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ২৪৯টি এবং 'সন্তোষজনক' হিসেবে মাত্র ১১টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করে সংস্থাটি। এরমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর তালিকায় রয়েছে। 

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে এ পর্যন্ত তাদের তিন দফা নোটিশ ও স্মরণিকা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’ হোজরিল বক্সের সামনে রোগীদের বেড

এর আগে, ২০১৬ সালের ১৭ মে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের তৃতীয়তলার ৩১৭ নম্বর কক্ষে এসির শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের স্পেশাল স্টাফ হাবিল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বার্ন বিভাগে সরকারি আটজন এবং স্পেশাল (বেসরকারি) ৬৮ জনসহ মোট ৭৬ জন স্টাফ পোড়া রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সবসময় নিয়োজিত রয়েছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন সময় অন্তত ৫০ জনকে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র চালানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ 

ঢামেক বার্ন বিভাগের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল মালেক জানান,  ‘আনসার সদস্য সবাইকে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়ে থাকে।’

কর্তৃপক্ষ যা বলছেন: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে দুই ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি হলো, কোথাও আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে দুই ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা হয়েছে। একটি সিওটু ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং অপরটি ড্রাই পাউডার এক্সটিংগুইশার। এগুলো হাসপাতালের সব ভবনেই রাখা আছে। এক্সটিংগুইশারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেগুলো রিপ্লেস করা হয়ে থাকে। অপরটি হলো হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা। হাসপাতালের বার্ন বিভাগে হাইড্রেন্ট হোজরিল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এসব হাইড্রেন্ট দীর্ঘদিনের  হওয়ায় কিছু কিছু যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাছাড়া সেগুলো চালিয়ে দেখতে হবে কতটুকু কার্যকর রয়েছে। ফায়ার ফাইটারদের দিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, “পুরো হাসপাতালের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য একটি ‘স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন’ স্থাপন করার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনা করেছি, চিঠিও দিয়েছি। সেখানে ফায়ার ফাইটিংয়ের একটি গাড়ি থাকবে, ৫/৬ জনের একটি টিম থাকবে। তারা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকবে, যখনই কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে তখনই যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।" 

 

 

/এসজেএ/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ