X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন পার্বত্য জেলায় স্থলবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম স্থবির যে কারণে

শফিকুল ইসলাম
২৪ মার্চ ২০১৯, ০৯:৪৬আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫৯

রামগড় স্থলবন্দর ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। তবে এ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে একটি স্থলবন্দরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম কিছুটা এগুলেও দুটি স্থলবন্দর নির্মাণে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে কবে নাগাদ এ সংশয় কাটবে তা এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার তেগামুখ ও ভারতের মিজোরাম প্রদেশের দেমাগ্রী এলাকার মধ্যে একটি, বান্দরবান জেলার নাইক্ষাংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও মিয়ানমারের তমব্রু’র মধ্যে একটি এবং খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম এলাকার মধ্যে একটিসহ মোট তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৩০ জুন তেগামুখ ও ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর রামগড় স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বান্দরবানের ঘুমধুম স্থলবন্দরকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। 

সূত্র জানায়, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে রামগড়ের সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তবে রামগড় থেকে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত বারৈয়ারহাট এলাকা পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে কয়েকটি সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এছাড়াও রামগড় থেকে সাব্রুম এর মধ্যবর্তী স্থানে সীমানা লাইনে খরস্রোতা ফেনী নদী রয়েছে। এই নদীর ওপর রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য সংযোগকারী ব্রিজ ও  অ্যাপ্রোচ সড়ক নাই। এছাড়া বর্তমানে রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য কোনও বিকল্প সড়ক যোগাযোগও নাই। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই স্থলবন্দরটি চালু করার কথা ছিল।  

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই তিনটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু করা গেলে বাংলাদেশ থেকে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী যেমন ইট, বালু, সিমেন্ট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য- শুঁটকি মাছ, তামাকজাত পণ্য, মানুষের মাথার চুল, প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক, আলু, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, তৈরি পোশাক, ডিম, টিউবঅয়েল, প্লাস্টিক সামগ্রী, পুরান কাপড়, চিপস ভারত ও মিয়ানমারে রফতানি করা যাবে। অপরদিকে ভারত ও মিয়ানমারের অংশ দিয়ে শাড়ি, ওষুধ, গরম মসলা, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ, মাছ, আচার, তেঁতুল, হলুদ, সেন্ডেল, মাটির সানকি, গাছের ছাল, সুপারি আমদানি করা সম্ভব হবে। 

রামগড় স্থলবন্দর অপরদিকে তেগামুখ ও ঘুমধুম স্থলবন্দর নির্মাণে আইন জটিলতায় জমি নির্বাচন করা হলেও তা অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। রাঙামাটির বরকলের তেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থানটি অত্যান্ত দুর্গম ও পর্বতময়। ভারতীয় অংশের সঙ্গে তেগামুখ স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলা থেকে তেগামুখের দূরত্ব ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটি জেলা সদর হয়ে বরকল উপজেলার তেগামুখ পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য ১২৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। এর মধ্যবর্তী স্থানে একটি নদীর ওপর একটি ব্রিজও নির্মাণ করতে হবে। এই বন্দরের নির্ধারিত স্থানের ৫০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে কোনও পুলিশ থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি নেই। 

এদিকে বান্দরবানের ঘুমধুম এলাকা থেকে মিয়ানমারের তমব্রুর দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার।  আবার ঘুমধুম থেকে নাইক্ষাংছড়ির দুরত্ব ৩২ কিলোমিটার। বর্ডার লাইনে নাফ নদীর একটি শাখা রয়েছে। যার স্থানীয নাম দেবীন্না খাল। খালটির প্রস্থ ১৫ থেকে ২০ ফুট হলেও গভীরতা ৮ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। বর্তমানে ঘুমধুম থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি পাকা রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি দেবীন্না খালের ওপর লাল ব্রিজ নামে একটি ব্রিজের মাধ্যমে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাস্তাটি প্রশস্ত করার কাজ চলছে। এর জন্য ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এই রাস্তাটিকে এশিয়ান হাইওয়ে বলা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈ শা হ্লা মারমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সামান্য কিছু জটিলতা রয়েছে। তা অচিরেই কেটে যাবে। তবে এই বন্দরের জন্য কাস্টমসের অফিস কক্সবাজারের বালুখালীতে করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যেখানে বর্তমানে সহকারী কমিশনার, কাস্টমস অফিস ছিল। এখানেই ছিল গবাদি পশুর করিডোর যা বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের আপত্তি রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবশ্যই এই স্থলবন্দরের জন্য কাস্টমস অফিস বান্দরবান জেলার ভেতরে হতে হবে। এটি এলাকাবাসীর দাবি।’  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই তিনটি স্থলবন্দরের মধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দিলেও বাকি দুটি স্থলবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম শুরুই করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে বলে বংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে। এর জন্য বিশ্বব্যাংক ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘স্থলবন্দর তিনটি নির্মিত হলে তিন পার্বত্য জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। একটির কাজ তো চলছে। বাকি দুটো স্থলবন্দর নির্মাণে যেখানে যেটুকু সমস্যা রয়েছে তা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।’

আরও পড়ুন-

রামগড় স্থলবন্দর: মামলা জটিলতায় আটকা ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া

আরও দুই পার্বত্য স্থলবন্দর হবে কবে?

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন