১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সোমবার (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মশাল মিছিল থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় গণহত্যার কালরাত্রির ঘোষণাপত্র পাঠ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত দুই বছরে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়নি। বাংলাদেশের গণহত্যা অস্বীকারকারীদের উদ্যোগ নস্যাৎ এবং দেশে দেশে গণহত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে আজকের সমাবেশ থেকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের সরকার, বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এবং ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘গণহত্যার দিবসে একাত্তরের শহীদদের স্মরণ করার পাশাপাশি আমরা এই প্রত্যয় করছি যে, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা যাতে কখনও ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছিল তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। মানুষের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু এই দেশের মানুষ কখনও মৌলবাদীদের পক্ষ নিতে পারে না। স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। যখনই তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে তখনই প্রতিহত করতে হবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পুস্তিকা প্রস্তুত করে বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে সবাইকে অবহিত করার চেষ্টা করছি।'
জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'এই সরকার এই দিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রত্যেকটি দিনই গণহত্যা হয়েছিল ৷ এ দিবসটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে বলে আমরা আশাবাদী।’
অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৯টা ১ মিনিটে আলো নিভিয়ে ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে মশাল নিয়ে ‘গণহত্যার কালরাত্রি র্যালি’ অনুষ্ঠানে অংশ নেন– ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসসহ অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে আসেন। সেখানে তারা শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বালন করে সারিবদ্ধভাবে শহীদদের প্রতি সম্মান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী।