X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
এফ আর টাওয়ারের ভেতরের চিত্র

চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাই, বাকিগুলো ডাস্টে ভরা

নুরুজ্জামান লাবু ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম
২৯ মার্চ ২০১৯, ২২:৫২আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৯, ২৩:৪০

এফ আর টাওয়ারের ভেতরের চিত্র ভয়াবহ আগুনে বনানীর এফ আর টাওয়ারের চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আট তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোরে পোড়ার মতো আর কিছুই বাকি ছিল না। সাত ও ১২ তলায় কিছুটা কম ক্ষতি হয়েছে। নিচের দিকের ফ্লোরগুলোর তুলনায় ওপরের ফ্লোরগুলো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় ডাস্টে ভরে গেছে। খসে পড়েছে সিলিং। ছোট ছোট টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে জানালার কাচ। যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে এফ  আর টাওয়ারের এই ঝকঝকে করপোরেট অফিসগুলো।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ভবনের ভেতরে গিয়ে নিজ নিজ কার্যালয় সরেজমিনে দেখেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। ভবন থেকে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে ধ্বংসস্তূপের এসব তথ্য জানিয়েছেন তারা। তাদের ভাষ্য— সব ধুয়েমুছে পরিষ্কার ও সংস্কার করা ছাড়া ভবনের কোনও প্রতিষ্ঠানই সহসা তাদের কাজ শুরু করতে পারবে না।

ফ্লোরজুড়ে পড়ে আছে কাচের টুকরো বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ওই ভবনে আগুন লাগার পর বিভিন্ন তলায় অবস্থানরত ও আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়েছে ২৫ জন। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধ শতকেরও বেশি নারী-পুরুষ। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় ভবনে আটকে পড়া শতাধিক ব্যক্তিকে। বনানীর এই ভয়াবহ আগুনে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহায়তা করেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। আগুনের কারণ ক্ষতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফ্লোরে ধ্বংসস্তূপ শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ভবনটি পুলিশের হেফাজতে বুঝিয়ে দেন। এরপর পুলিশের ২২টি পৃথক টিম প্রতিটি ফ্লোরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কেউ কেউ ভেতর গিয়ে অক্ষত থাকা তাদের অতিপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তা নথিভুক্ত করে প্রতিনিধিদের হাতে দেওয়া হয়।

পোড়ার বাকি নেই কিছুই ভবনের যে তলায় আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই আট তলার এম্পায়ার গ্রুপের কর্মকর্তা আব্দুল করিম ভবনের ভেতর থেকে বের হয়ে এসে বলেন, ‘আট তলার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পোড়ার কিছুই বাকি নেই। আমাদের এমডির রুম থেকে শুরু করে অন্যান্য কক্ষের সব কাগজপত্র, আসবাপত্র, কম্পিউটার-ল্যাপটপ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুরো আটতলা যেন একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’

আব্দুল করিম জানান, আগুনে মোস্তাফিজুর নামে তাদের এক সহকর্মী মারা গেছেন। এছাড়া, আরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই তলায় অবস্থিত সিএনএফ  নামের একটি অফিসের কর্মকর্তা জিলানী জানান, আট তলার দক্ষিণ পাশে তাদের অফিস। অফিসের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে কিছুই পোড়ার বাকি নেই। কাচ ভেঙে নিচে ছাইয়ের সঙ্গে মিশে আছে, পা ফেলারও উপায় নেই। জিলানী বলেন, ‘অফিসের ভেতর থেকে নিয়ে আসার মতো কিছুই পাইনি। আগুনের সময় আমাদের অফিসে ২৫-৩০ জন কর্মী ছিলেন, তাদের অনেকেই হতাহত হয়েছেন।’

পুড়ে গেছে মূল্যবান কাগজপত্রও এফ আর টাওয়ারের ১৬ তলায় অবস্থিত ডার্ড গ্রুপের কর্মকর্তা প্রকৌশলী হাসিব জানান, চারটি ফ্লোর বেশি পুড়েছে। আট থেকে ১১ তলা পর্যন্ত সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভবনটিতে তাদের মোট চারটি অফিস রয়েছে। তাদের অফিস না পুড়লেও ডাস্টে ভরে গেছে। প্রকৌশলী হাসিব বলেন, ‘আমাদের ১২, ১৩, ১৬ ও ১৯ তলায় অফিস রয়েছে। অফিসগুলোতে ডাস্ট জমে আছে। সিলিং ভেঙে পড়েছে। জানালার গ্লাস ভেঙে পড়েছে। এগুলো ঠিকঠাক করতে কয়েক মাস লেগে যাবে। কবে আমাদের অফিস আবার চালু করা যাবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।’

আগুনের তাণ্ডবে খসে পড়েছে সিলিং ১৮ তলায় অবস্থিত ‘আমরা নেটওয়ার্ক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানালেন, তাদের অফিস আগুনে না পুড়লেও সেখান থেকে দুটি ল্যাপটপ খোয়া গেছে। আরও কিছু খোয়া যেতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি। জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুরো অফিস ডাস্টে ভরা, এলোমেলো হয়ে আছে। দুটো ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্ধকারের কারণে সবকিছু দেখাও যায়নি।’ ভবনের ১১ তলায় রয়েছে ইউরো গ্রুপের অফিস। ইউরো’র কর্মকর্তা মারুফ বলেন, ‘আমাদের অফিসের দরজা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমাদের ল্যাপটপ-কম্পিউটার সব পুড়ে গেছে। প্রয়োজনীয় অনেক নথিপত্রও পুড়ে গেছে।’

আগুনে পোড়া লোহার গ্রিল ডার্ড গ্রুপের আরেক কর্মকর্তা শামীম বলেন, ‘আমাদের অফিসের আসবাবপত্র আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র পেয়েছি। ওপরের দিকের অফিসগুলোর ভেতরে আগুন যায়নি, কিন্তু জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। পানির বোতল, জুতা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে আছে। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষগুলো বাঁচার জন্য ছটফট করছিল।’ ২১ তলাতে গিয়ে রক্তের দাগ দেখেছেন বলেও জানান তিনি।

ভবনের ২০, ২১ ও ২২ তলায় রয়েছে কাশেম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। এই গ্রুপের প্রতিনিধি হয়ে ভবনে গিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সিকিউরিটি ইনচার্জ শাহবুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভ্যর্থনা কক্ষের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, অফিসের ভেতরে আর কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে আশেপাশের দুই ভবনের সঙ্গে লাগানো বলে সেখানের কাচের জানালা ভাঙা রয়েছে। সেখান দিয়ে আমাদের অফিসে লোক ঢোকার ভয় রয়েছে।’

চারটি ফ্লোরে এখন কেবলই ধ্বংসের চিহ্ন

এফ আর টাওয়ারের নিচ তলায় রয়েছে শাওমি ও স্যামসাং মোবাইলের দুটি শোরুম। স্যামসাং মোবাইল শোরুমের হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভেতরে গিয়ে আমরা শোরুমের মোবাইলগুলো লকাপে রেখে দিয়েছি। এছাড়া, ৩৫ হাজার টাকা ছিল, তা নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে তদন্ত সংস্থার নির্দেশে যা করণীয় তা করবো।’

আরও পড়ুন:
এফ আর টাওয়ারের মালিক ২৪ জন

এফ আর টাওয়ারের অবৈধ অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির

পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এফ আর টাওয়ার

এফ আর টাওয়ারে নিহত যারা

আমাকে মাফ করে দিও!

ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল রুমকি-মাকসুদার

এখন কে বলবে, মা তুমি ওষুধ খেয়েছো?

এফ আর টাওয়ারে প্রবেশ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের