X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান ঢাকায় পুনঃউন্নয়নে না এলে ছয়তলার বেশি অনুমোদন নয়

শাহেদ শফিক
১০ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৬আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৯





পুরান ঢাকাকে আধুনিক শহরে রূপান্তর করতেই পুনঃউন্নয়ন প্রকল্প (ছবি: সংগৃহীত) অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকা নিয়ে রি-ডেভেলপমেন্ট (পুনঃউন্নয়ন) প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—রাজউক। এর মাধ্যমে একাধিক ছোট ছোট প্লট এক করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে এবং প্লটের মালিকদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে দেওয়া হবে। এভাবে এলাকার সড়ক প্রশস্ত, পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা, ভবনের উন্মুক্ত জায়গাসহ আধুনিক আবাসিক এলাকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
তবে রাজউকের এ প্রস্তাবে কোনও প্লট বা ভূমির মালিক সাড়া না দিলে ওই মালিককে তার জায়গায় ছয়তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না। রাজউকের রিভাইস ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এমনটাই সুপারিশ করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর পুনঃউন্নয়ন (আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ, অপ্রতুল নাগরিক সুবিধার কোনও এলাকাকে বাসিন্দাদের চাহিদা ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সুবিধার পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে আরবান রি-ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে সফলতা পাওয়া গেছে।
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহতসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘিঞ্জিপূর্ণ ও সরু রাস্তার কারণে জরুরি মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। বিষয়গুলো বিবেচনা রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এমন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শহর উন্নয়ন করা হয়েছে। এ জন্য আমরা ভূমি মালিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে কেউ যদি আমাদের এই প্রকল্পের আওতায় না আসে তাকে ৬ তলার বেশি ভবন বানানোর অনুমোদন দেওয়া হবে না। ড্যাপে আমরা পুরান ঢাকাকে হাইট সিটি করে দেবো। আমরা পুরান ঢাকা ও হাজারীবাগকে একটি আধুনিক শহরে রূপান্তর করতে চাই।’
প্রকল্পটি গ্রহণের শুরুতেই পুরান ঢাকার বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে রাজউক। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ও জরাজীর্ণ ভবন, অপর্যাপ্ত আলো বাতাস ও ঘিঞ্জি পরিবেশ অপরিকল্পিত, ফুটপাতবিহীন ও সংকীর্ণ রাস্তাঘাট, অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ, অপ্রতুল খোলা জায়গা ও গাছপালাবিহীন পরিবেশ। এ ছাড়া রয়েছে ভূমিকম্প ও অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য অতিমাত্রার ঝুঁকি।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরান ঢাকা বিষয়ে আমরা রি-ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ওই এলাকার লাগালাগি ভবনগুলো ভেঙে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী আমরা মান ও পরিবেশসম্মত ইমারত করে দেবো। বিনিময়ে জমির মালিকদের রেশিও সেই অনুযায়ী ফ্ল্যাট করে দেবো। ফুলে পুরান ঢাকার আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থাকবে না।’
বংশাল ও হাজারীবাগের পুরাতন ট্যানারি এলাকাসহ পুরান ঢাকা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে রাজউক। কমিটি সরেজমিন ঘুরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে ওই এলাকাকে সাতটি সেক্টরে ভাগ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেক্টরগুলো হচ্ছে ইসলামবাগ, চকবাজার, মৌলভীবাজার, বংশাল, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ। এর মধ্যে ইসলামবাগের কমবেশি ১৪.৯৪ একর, চকবাজারের ১.৪৭৪ একর, মৌলভীবাজারের ০.৬০ একর, বংশালের ১২.৭১ একর, হাজারীবাগের ১১১.০৩ একর, কামরাঙ্গীরচরের ৩৩.৭৬৩ একর ও লালবাগের ৩২.৭২ একর জমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাজউক বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ভূমি মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় চলছে। পাশাপাশি নগর বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পুরান ঢাকার স্থানীয় ভূমি মালিক ও হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা একমত পোষণ করে রাজউকের কাছে চিঠি দিয়েছে। এ জন্য রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (২০১৬-২০৩৫ সাল) নগর পুনঃউন্নয়ন বা আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প গ্রহণের বিষষে বিস্তারিত অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির বিষয়ে রাজউকের ওই কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। যেমন, পুরান ঢাকার হেরিটেজ ভবনগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘প্রকল্পটি অবশ্যই ভালো। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে স্থানীয়দের আস্থা ফেরাতে হবে। আস্থা না ফিরিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ঠিক হবে না।’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ