X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের বড় ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:২৫আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩২

আসিয়ান লোগো (ছবি সংগৃহীত)
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। ১৯৭৮ থেকে শুরু হওয়া এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৭ এর আগস্টে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠির বিরুদ্ধে নশৃংস অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক জোট আসিয়ানেরও বড় ভূমিকা চাইছে বাংলাদেশ।

২০১৭ এর আগে থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। এর মধ্যে ১০-সদস্য বিশিষ্ট আঞ্চলিক জোট আসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। কারণ মিয়ানমার এই সংস্থার একজন সদস্য। তাই বাংলাদেশ চায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও বড় আকারের ভূমিকা পালন করুক।

সম্প্রতি আসিয়ানের চেয়ারম্যান থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডন প্রামোদউইনেই ঢাকা সফরকালে এ বার্তা দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। গত বছর সিঙ্গাপুর যখন চেয়ারম্যান ছিল তখনও একই বার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ।

এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা পালনে আসিয়ানের কোনও আপত্তি না থাকলেও মিয়ানমারের বাধার কারণে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারছে না আঞ্চলিক জোটটি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছর নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে জোটটি যে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল, সেখানে আসিয়ান এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছি। শুধু তাই না, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিলেন এটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে।

তিনি বলেন, ‌‘আবার গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের সভাপতিত্বে আসিয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলনে এ বিষয়টি বড় আকারে আলোচনা হয় এবং আবারও বিবৃতিতে এটি প্রকাশ করা হয়।’

রোহিঙ্গা সংকট তবে মিয়ানমারের কারণে আসিয়ানের এ আগ্রহ বেশিদূর আগাচ্ছে না এবং শুধু মানবিক সহায়তার মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই জোটের চার্টার অনুযায়ী আসিয়ান বা এর কোনও সদস্য অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে না।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আসিয়ান জোটের সদস্যরা এ বিষয়ে দুইভাগ হয়ে গেছে।’

তিনি জানান, মুসলিম তিনটি দেশ– ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাইসহ থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যথেষ্ঠ আন্তরিক। তবে অন্য চারটি দেশ– ভিয়েতনাম, লাওস, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়া- রোহিঙ্গা ইস্যুতে তেমন আগ্রহী নয়।

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা বিষয়ে যতগুলো ভোট হয়েছে সব জায়গায় ওই চারটি দেশ বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ধর্ম, বর্ণ, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কসহ আরও অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা হয় এবং আসিয়ানের দেশগুলি এর ঊর্ধ্বে নয় এই বিষয়টি আমরা বুঝি।’

উদাহারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমরা সবসময় সমর্থন দিয়ে থাকি এবং এটি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির একটি অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিটি দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে এবং আসিয়ানে সমষ্টিগতভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য তাদের নেতৃত্বে রাখাইনে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি এবং সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ করে আসছি। বিষয়টিতে আমরা জোর দিচ্ছি, কারণ আঞ্চলিকভাবে মিয়ানমার এ দেশগুলির সঙ্গে অধিকমাত্রায় সম্পর্কিত এবং আসিয়ান নেতৃত্বে যদি সেখানে নিরাপদ জোন বা অঞ্চল তৈরি করতে চায় সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করছি। আমরা তাদের বলছি- রোহিঙ্গা নির্যাতন বিশ্ব স্বীকৃত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা। এক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সমর্থনের মাধ্যমে তারাও এর সঙ্গে শামিল হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নির্যাতন শুরুর পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অন্তত ৬ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর থেকেও রাখাইনে একই ধরনের নিপীড়ন শুরুর পর অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। আর আগে গত দুই দশকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আরও প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা। নতুন পুরনো মিলিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখের ওপরে। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে মানবিক দৃষ্টিতে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, লেখাপড়া, বিনোদনসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। পরে ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের ১৫ জন সদস্য করে মোট ৩০ সদস্যের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের নেপিদো শহরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা উল্লেখ করা হয়।

 

/এসএসজেড/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি