X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু মানুষ কি পাষণ্ড হয়ে উঠলো: সন্‌জীদা খাতুন

মাহমুদ মানজুর
১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৫৯আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৩৬

সনজীদা খাতুন, ফাইল ছবি

বঙ্গাব্দ-১৪২৬ বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন। কণ্ঠে ক্ষোভের সুর মিশিয়ে তিনি বললেন, ‘নববর্ষ যদি ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতাবোধের উন্মেষ না ঘটাতে পারে, তবে নতুন দিন কী বার্তা নিয়ে আসে?’ এরপর বলেন, ‘কিছু মানুষ কি পাষণ্ড হয়ে উঠলো?’

রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ছায়ানট সভাপতির বক্তব্যের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল এমন নানা প্রশ্ন আর হতাশার প্রতিধ্বনি। অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ- এমন প্রত্যাশাও ছিল তার।

সন্জীদা খাতুন তার লিখিত বক্তব্যে বললেন, ‘বৎসরকাল পেরিয়ে আমরা আবার নতুন দিনের মুখোমুখি। কেমন সময় পেরিয়ে এলাম? চোখ মেললে কিংবা কান পাতলে নিত্যই শিশু-নারী, বল-ভরসাহীন মানুষ তথা সমগ্র মানবতার ওপরে নির্মম আচরণের সংবাদ পাই। নিয়ত মার খাচ্ছে সমাজের ধারণা। কোথায় যাচ্ছি আমরা? নিষ্কলুষ শিশুসন্তান অত্যাচারের শিকার হয় কী করে? সমাজ কি পিতামাতা, ভাইবোন, সন্তানসন্ততির গৃহ আর প্রতিবেশী নিয়ে গঠিত শান্তির নিবাস নয়? স্বার্থান্বেষী অমানুষদের আত্মসুখ সন্ধানের ফলে নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না কচিকাঁচা থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সমাজের কোনও মানুষ।’

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি সবাইকে আহ্বান করে বলেন, “আমাদের অন্তরে ইচ্ছা জাগুক, ‘ওরা অপরাধ করে’ কেবল এই কথা না বলে, প্রত্যেকে নিজেকে বিশুদ্ধ করবার চেষ্টা করি। আর আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায়-অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। প্রতিবাদে, প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল। নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে।”

এর আগে, রবিবারের (পহেলা বৈশাখ) সকালটা বৃষ্টির আশঙ্কা মুছে দিয়ে দারুণ হেসেছিল। নতুন সূর্যের আলো মুগ্ধ করেছে বাংলা প্রাণ। ছায়ানটের শিল্পীরা সেই সূর্যোদয়কে স্বাগত জানালেন রাগালাপ দিয়ে। টানা ১৫ মিনিট চলে এই রাগালাপ।

ছায়ানটের অনুষ্ঠান রাজধানীর রমনার বটমূলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের শুরু হয় রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোর সোয়া ৬টা থেকে। বর্ষবরণের ৫২তম এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ।

সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানস নিয়ে গানে গানে ১৪২৬ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেয় ছায়ানটের শতাধিক শিল্পী।

ছায়ানটের শিক্ষার্থী-প্রাক্তনী-শিক্ষক নিয়ে অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় ১৩টি একক, ১৩টি সম্মেলক গান এবং ২টি আবৃত্তি। ছায়ানটের আহ্বান অনুযায়ী রবীন্দ্র রচনা থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে আবৃত্তি দু’টি।

অনুষ্ঠানের শেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার আগে সনজীদা খাতুনের আহ্বানে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ জানান ছায়ানট শিল্পী ও উপস্থিত সবাই। নীরবতা পালন করেন এক মিনিট। নুসরাত, তনুদের ওপর অত্যাচার-অবিচারের প্রতিবাদে এই নীরবতা পালন।

এদিকে নতুন বছরের প্রথম সূর্য ওঠার আগেই রমনার ঐতিহাসিক বটমূলকে ঘিরে জড়ো হতে থাকলো অগুনতি সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ। ছায়ানটের শিল্পী-কর্মীদের জন্য বটমূল সংলগ্ন সামান্য জায়গা ছাড়া প্রায় গোটা প্রাঙ্গণই উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য। বটমূলের বর্ষবরণ আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশত বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ছায়ানটের যে যাত্রার সূচনা তা মূলত বাঙালির আপন সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে, আপন সংস্কৃতিতে বাঁচাবার অধিকার ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটাবার জন্য ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় বাংলা বছরকে আবাহনের আয়োজন।

 

/এমএম/এসটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী