X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা, আছে স্বস্তির আশাও

শাহেদ শফিক
২৭ মে ২০১৯, ২১:৫২আপডেট : ২৮ মে ২০১৯, ০৮:৫৬

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা, আছে স্বস্তির আশাও
প্রতিবছরই ঈদে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ বছরও সেই শঙ্কা আপাতত কাটছে না। তবে,  পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। তাদের দাবি, দুই-একটি সড়ক ছাড়া বেশিরভাগেরই অবস্থা ভালো। ঈদ উপলক্ষে এবার টানা ৯ দিনের ছুটি থাকবে। এতে যাত্রী পরিবহনে কিছুটা দুর্ভোগ কমবে বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্য বলছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও সড়ক-মহাসড়কের এক-চতুর্থাংশ এখনও এবড়োখেবড়ো।  সওজের  আওতায় থাকা প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশের অবস্থা বেহাল। যা, গত বছর ছিল ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ বছর মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভালো হলেও দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা প্রায় চলাচলের অযোগ্য। এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ রাস্তাও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন ঈদযাত্রায়।

এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কাপূর্ণ স্পটগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়ক অন্যতম। এই সড়কটিতে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। যে কারণে সড়কের পাশ অনেক কমে গেছে। এছাড়া, বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে পানি জমে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এবারের ঈদে এই সড়কটি যানবাহনের চাপে ‘বিষফোঁড়া’ হয়েও দাঁড়াতে পারে। এই সড়কে উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের যানবাহন চলাচল করে।

তবে, খানিকটা সুখবর রয়েছে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, চন্দ্রা সড়কে। বরাবরই যানজটপ্রবণ এই সড়কে ঈদের আগেই দু’টি ফ্লাইওভারসহ চারটি আন্ডারপাস ও দুটি ব্রিজ চালু করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার (২৫ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলোর উদ্বোধন করেন। তবে এখনও বেশ কয়েকটি আন্ডারপাসের কাজ চলছে।

উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার ১১৮টি রুটের যানবাহন চলাচল করে গাজীপুরের ওপর দিয়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গাজীপুরের যানজট। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কে সংস্কার কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

আর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় সরু হয়ে গেছে চলাচলের পথ। ফলে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যানজটের মাত্রা ঈদের আগে আরও বাড়ার আশঙ্কা এই পথের যাত্রীদের।

এদিকে, নির্ধারিত সময় পার হলেও শেষ হয়নি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চারলেন প্রকল্পের কাজ। এখনও চলছে নির্মাণ কাজ। এজন্য সড়কের বেশ কিছু এলাকায় এক পাশ দিয়ে যান চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট হতে পারে। এ কারণে দুর্ভোগ নিয়েই এই সড়কে ঈদযাত্রা শুরু হবে উত্তরবঙ্গে যাওয়া লাখ লাখ মানুষের। নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় যানবাহনের গতি কমে যায়।

মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, ঘারিন্দা বাইপাস, ভাতকুড়া বাইপাসে একলেনের কাজ চলমান রয়েছে। করটিয়া হাট বাইপাস, জামুর্কি বাসস্ট্যান্ড, ধল্লা বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ড ও গোড়াই এলাকায় মহাসড়কের আন্ডারপাস ও ওভারপাসের কাজও চলমান। এই এলাকাগুলোয় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। ফলে গাড়ির বাড়তি চাপ বেড়ে গেলেই যানজটের সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন চালক ও যাত্রী সাধারণ।

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা, আছে স্বস্তির আশাও

এছাড়া, রাজধানী ঢাকায়ও চলছে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। এর ফলে বেশ কয়েকটি সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা ত্যাগ করতেই বেশ বেগ পেতে হয় নগরবাসীকে।

অন্যদিকে স্বস্তির বার্তা রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এই মহাসড়কের কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগের চেয়ে অনেক কম সমসয়েই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে যানাবহন। কমেছে যানজটও। এ অবস্থায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা হবে নির্বিঘ্ন ও স্বস্তির। রেলপথের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নৌপথ ও সড়ক পড়ের অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়া ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ বছর ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তির ও আরামদায়ক হবে। কারণ, আগের বছরগুলোর তুলনায় এই বছর সড়কের অবস্থা অনেক ভালো। আর আমাদের পর্যাপ্ত পরিবহন রয়েছে। অতিরিক্ত তিন হাজার বাস রিজার্ভ রেখেছি। প্রয়োজন হলে শহরতলীতে যেসব পরিবহন চলে, সেখান থেকে ভালো ভালো পরিবহনগুলো ঘরমুখো মানুসের সেবায় নিয়োজিত করবো। এরপর যেন যাত্রীদের কোনও ভোগান্তি না হয়, সেদিকে সজাদ দৃষ্টি রাখছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনও সুযোগ নেই। প্রতিটি কাউন্টারে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। আমরাও বিষয়টি নজরদারি করছি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২ জুন রাত থেকে ৪ জুন পর্যন্ত টিকিটের অনেক চাপ রয়েছে। ওই দিনগুলোতে সড়কে বাসের যথেষ্ট চাপ থাকবে। আশা করছি, সড়কে কোনো দুর্ভোগ হবে না। তবে গাজীপুর সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সেখানে কিছু সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। সড়কটিতে বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। সমস্যাটি সমাধানের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অনুরোধ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’

রমেশ চন্দ্র ঘোষ আরও বলেন, ‘এ বছর ট্রেনের সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারবে। কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’

এদিকে, ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে ৩২টি পদক্ষেপ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, যানজট মুক্ত রাখা, টার্মিনালগুলোয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ভিজিলেন্স টিম গঠন করা, দুর্ঘটনার পর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সড়কে অস্থায়ী বা ভাসমান বাজার অপসারণ, মহাসড়কের অপব্যবহার বন্ধ করা, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার বন্ধ করা, এক্সেল লোড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, টোল প্লাজার সব বুথ খোলা রাখা, সিএনজি স্টেশন চালু রাখা, বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস চালু করা, ফেরির সংখ্যা বাড়ানো।

কাজ চলছে ঢাকা চট্টগ্রাম সড়কে

ঈদযাত্রার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঈদের সময় দুর্ভোগের জায়গাগুলোয় এবার যাত্রা অনেক সহজ ও স্বস্তির হবে। তবে গাজীপুরে সড়কে একটু সমস্যা রয়েছে। সেখানে বিআরটির কাজ চলছে। আমি বলে দিয়েছি, গাজীপুরের সড়কে ঈদ পর্যন্ত কোনও পাইলিং হবে না। এখানে কিছুটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। বাকি রাস্তা যান চলাচল উপযোগী রয়েছে। পরিবহনগুলো যদি শৃঙ্খলা মেনে চলে, তাহলে সড়কে যানজট থাকার কথা নয়। সড়কপথে একটা স্বস্তিদায়ক যাত্রা যেন নিশ্চিত করতে পারি, সেজন্য কাজ করছি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কার পাশাপাশি স্বস্তির আভাসও রয়েছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়ক উন্নত হয়েছে।’

মোজাম্মেল হক চৌধুরীর আশঙ্কা, ‘সেতুগুলোয় টোল আদায়ে ধীরগতি, সড়কে দুর্ঘটনা ও অযান্ত্রিক বা ধীরগতির পরিবহন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো অপসারণ করা না গেলে যানজট বাড়বে। গণপরিবহনের একটাও সংকটও রয়েছে। ঈদ মৌসুমে এই সংকটতে পুঁজি করে ভাড়াবাণিজ্য শুরু হয়। এতে দুর্ভোগ বাড়ে। তবে, একটা লম্বা ছুটি পাওয়া যাচ্ছে।’ যদি সুযোগটি সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে সড়কে ওভার লোডিং কমানো যাবে বলেও তিনি মনে করেন।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুক্তি পাওয়া আসামির প্রবেশন মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন, অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
মুক্তি পাওয়া আসামির প্রবেশন মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন, অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
মতিঝিলে ফুটপাত থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
মতিঝিলে ফুটপাত থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
মননের প্রথম আইএম নর্ম, হাতছানি জিএম নর্মের
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও