X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চার মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবি নিয়ে সরব বিরোধী দল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ জুন ২০১৯, ১৫:৫৫আপডেট : ৩০ জুন ২০১৯, ১৫:৫৭

জাতীয় সংসদ অধিবেশন (ছবি-ফোকাস বাংলা) আজ জাতীয় সংসদে চারটি মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবি নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। মন্ত্রণালয় চারটি হলো- কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আলোচনায় অংশ নেওয়া বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি হারুনুর রশিদ, সংরক্ষিত মহিলা আসন ৪৭ এর এমপি বেগম রওশন আরা মান্নান, ময়মনসিংহ-৪ আসনের এমপি ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান, সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খান, পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি রুস্তুম আলী ফরাজী, ঢাকা- ৬ আসনের এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ, সংরক্ষিত মহিলা আসন ৫০ এর এমপি বেগম রুমিন ফারহানা ও কিশোরগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি মুজিবুল হক চুন্নু।

রবিবার (৩০ জুন) সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ সময় ৫৯টি দাবির ওপর এই ৯জন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। তবে এরমধ্যে মাত্র চারটি মন্ত্রণালয়ের দাবির ওপর তারা আলোচনা করেন। বাকিগুলো কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা চারটি মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবি নিয়ে আলোচনা করেন।

এরমধ্যে কৃষিখাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ হলেও কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ধানের দাম না পেয়ে আগুন দিয়ে ক্ষেতের ধান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও কোথাও কোথাও ঘটেছে। হাজার-হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিরা নিয়ে গেলেও সামান্য ঋণ নেওয়ার কারণে ৪৫ হাজার কৃষকের বিরদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কৃষকদের ঋণ কখনও মওকুফ করা হয় না। অথচ ঋণখেলাপিদের বিরদ্ধে মামলা হয় না। সরকারকে কৃষকবান্ধব হতে হবে, মিলার বান্ধব নয়। কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ ও পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিতে হবে।

জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব এবং নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। এখনও ৪০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে রফতানি আয় অনেক বেশি। রফতানিকে বহুমুখী করতে না পারলে অর্থনীতি বিকশিত হবে না।’

শিক্ষাখাতে বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, যখন একটি সরকার এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে চায়, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না।

প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি শিক্ষা উন্নয়ন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, লন্ডন ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের জরিপ অনুযায়ী, এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশ থাকলেও আমাদের দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। শিক্ষার মান ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

এসব অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যারা (জিয়াউর রহমান) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র করে, শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক তুলে দেয়, হিজবুর বাহারে মেধাবী ছাত্রদের বিপদগামী করে। যারা এসব অনৈতিক কাজগুলো করে, তাদের কাছে নৈতিকতার ছবক নেওয়া একটু হাস্যকরই মনে হয়। বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়ম বিরুদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এখন সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাচাই করার সময় এসেছে। আমরা দেখেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে তারা বৈষম্য করেছে। কোনও কোনও প্রভাশালী মন্ত্রী তার নিজ এলাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। যেগুলোর মান ঠিক নেই, শিক্ষক নেই। তারা নিয়ম বিরুদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছে। কাজেই অতীতের সব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’ 

আলোচনায় স্বাস্থ্য্যখাতের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় পর্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিএনপি আমলে ডাক্তারদের দলীয়করণের কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এই অবস্থা। চিকিৎসা নিতে মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু, দেশেও ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। তবে দেশের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। ঢাক্তাররা জেলা উপজেলা হাসপাতালে না থেকে সবাই ঢাকায় কোনও না কোনও হাসপাতালে অ্যাটাচমেন্ট থাকে। এই অ্যাটাচমেন্ট বন্ধ করুন। মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ করুন।

এর জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য্য সেবার উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। বিএনপি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ফের সেটা চালু করেছি। বাংলাদেশে রাতকানা রোগ নেই। টিকাদান শতভাগ অর্জিত হয়েছে। আমেরিকায় বর্তমানে গড় আয়ু ৭৮ বছর। ইনশাআল্লাহ, আমরা দ্রুতই সেই পর্যায়ে উন্নীত হবো। দেশে সরকারিখাতে ৩৫টি মিলে প্রায় ১০০টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত আমলে ১৫টিও ছিল না। বিএনপি-জামায়াত শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট গঠন করে পোড়া মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়েছেন। সব রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। একমাত্র ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায় না। ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানরা কখনও দেশে চিকিৎসা নেননি, তাদের মুখে চিকিৎসা নিয়ে কোনও কথা মানায় না।’

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিরোদী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা বলেন, ‘বারাদ্দ প্রদানে নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। বিশেষ বরদ্দ নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন আছে। বরাদ্দ প্রদানে দুর্নীতি হচ্ছে। সোলার প্রদানে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষ কোম্পানি থেকে সোলার নিতে বাধ্য করায় বেশি দাম নেওয়া হয়। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে। শহরে সোলার কমিয়ে গ্রামে বরাদ্দ দেওয়া উচিত।’ তারা এই বৈষম্য দূর করার দাবি জানান।  

ত্রাণমন্ত্রীর প্রশংসা করে সংসদ সদস্যরা বলেন, মন্ত্রণালয়ের সমস্যা অনেক। ডিসিদের কাছ থেকে তালিকা নিতে হয়। এতে সংসদ সদস্যদের অবমূল্যায়ন করা হয়। ঈদের সময় ত্রাণ দেওয়া হয়। কিন্তু, তালিকা অনুয়ায়ী দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় স্লিপ অনুযায়ী। এতে অনিয়ম হয়। টিআর কাবিখার বরাদ্দ যাতে ঠিকভাবে হয়, তার নজরদারি করুন।

জবাবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ সহনীয় রাষ্ট্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আমরা আর ভয় পাই না। বড় বড় দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা আমরা নগন্য পরিমাণে নামিয়ে আনতে পেরেছি। বিএনপি-জামায়াত সরকার ঘুমিয়ে ছিল বলে তাদের আমলে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার-হাজার মানুষ মারা গেছে, শত শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। অথচ মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় ও সাহায্য দিয়ে সারাবিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার আরও তিনশটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে। মানুষের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় আরও ৫শটি মুজিব কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহহীনদের জন্য ৩ হাজার দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানের মতো বাংলাদেশকেও দুর্যোগ সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

/এসআই/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা