X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি কত দূর?

শফিকুল ইসলাম
০৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩৪আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৪:৪৮

ভূমি মন্ত্রণালয় আমিনবাজার ভূমি অফিসে ৪ জুলাই প্রথমবারের মতো নিজের জমির খাজনা দিতে এসেছিলেন সাভারের হেমায়েতপুরের বলিয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নাফ মিয়া। পেশায় শিক্ষক মান্নাফ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘খাজনা দিতে এসে বিভিন্ন প্রকার হয়রানির শিকার হচ্ছি। ১৭২ টাকার খাজনা দিতে ৫ হাজার টাকা বকশিস চাইছে এখানকার লোকজন। কেউ বলছেন জমির নামজারির কাগজ লাগবে। এনে দিলাম। কেউ বলছেন দলিল লাগবে। তাও এনে দিলাম। এখানকার একজন কর্মচারী যার নাম বা পদবি কিছুই জানি না, তবে তিনি এ অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম করেন বলে মনে হয়েছে। এমন একজন নামজারির কাগজ দেখে তা বালাম বইয়ে খুঁজতে বকশিস চেয়েছেন ৫ হাজার টাকা।’

এত টাকা বকশিস কেন- জানতে চাইলে ওই কর্মচারী মান্নাফ মিয়াকে বলেন,  জমির মালিকানা প্রমাণে দলিল বা নামজারির চেয়েও বেশি দামি কাগজ হচ্ছে খাজনার রশিদ। তাই বকশিসের পরিমাণও বেশি। পরেরবার এত টাকা লাগবে না।

মান্নাফ মিয়া বলেন,  ‘এই টাকা না দিলে বালাম বই খুঁজতে যে কতদিন লাগবে তা আল্লাহ মাবুদ জানে।’

এভাবেই সামান্য বিষয়ে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ধরনের হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতেই সরকার জমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়। তবে  ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র কিছু অগ্রগতি হলেও এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ উদ্যোক্তারা। তবে উদ্যোগ অব্যাহত  রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অনাগ্রহের কারণেই এ কার্যক্রম সেভাবে এগুচ্ছে না। যদিও জমি ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশন করার বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকদের শতভাগ আগ্রহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।  

এদিক সরকারের এক শ্রেণির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, এটি এত সহজ কাজ নয়। ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় জমি ব্যবস্থাপনায় অনেক সময় লেগেছে। বাংলাদেশে ২/৪ বছরে এটি সম্ভব নয়।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,  ভূমি জরিপ কার্যক্রমটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করতে সময় লেগেছে ২০-২৫ বছর। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে ভূমি তথ্য ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন এ সময়ে সম্পন্ন করা জটিল। কারণ ভূমি তথ্য ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার বিষয়টি একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন,  ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার বিষযটি বর্তমান সরকারের একটি পুরনো অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য কাজ কর্ম চলছে। নেওয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নানা পরামর্শ রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে বিবেচনায় নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কাজটি যতই চ্যালেঞ্জিং হোক সরকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবেই।’ 

সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, দেশে ফৌজদারি মামলার ৮০ শতাংশেরও বেশি মামলার সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ দায়ী। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে মারামারি হানাহানির পছনেও অন্যতম কারণ জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে জমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন।

সূত্র জানিয়েছে, এরইমধ্যে অনলাইনে জমির খতিয়ান সরবরাহ, ই-নামজারি ও ই-সেটেলমেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক ও ল্যান্ড জোনিং এর কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত সংখ্যক জনসাধারণ এ সুবিধা পাচ্ছেন না। মাঠ পর্যায়ের জনসাধারণের কাছে এ সুবিধা পৌঁছে দিতে হলে এখাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন,  ‘এরই মধ্যে অনলাইনে জমির খতিয়ান সরবরাহ, ই-নামজারি ও ই-সেটেলমেন্ট কার্যক্রম,  ডিজিটাল ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক ও ল্যান্ড জোনিং এর কার্যক্রম জোরদার করতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে।’

তিনি জানিয়েছেন, সরকারি কাজে জমি পাওয়ার পাশাপাশি জমির মালিকদের সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও  হুকুম দখল আইন-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। যা জমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন কার্যক্রমের অংশ বিশেষ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জমি ব্যবহার সংক্রান্ত সেবা আধুনিকায়নের জন্য ডিজিটাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জমি সংক্রান্ত সেবা সহজ করতে সারাদেশের জমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদান পদ্ধতিকে অটোমেশনের আওতায় আনাতেই ডিজিটাল জমি ব্যবস্থাপনা সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য।’   

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবদুল জলিল বলেন,  ‘এই সার্ভিসকে দক্ষ, জনবান্ধব ও বাজারবান্ধব করতে বর্তমান সরকার ভূমি প্রশাসন, ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা এবং ভূমি নিবন্ধন বিষয়ে নানাবিধ কৌশল গ্রহণ করেছে। যে কারণে এই বিষয়টি সরকারের সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। মৌজা ম্যাপ ও স্বত্ত্বলিপি প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণ এবং এসব সংশ্লিষ্ট সেবা ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকীকরণ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূমি অধিদফতরের সদর দফতর, খতিয়ান ও ম্যাপ প্রিন্টিং প্রেস, কেন্দ্রীয় রেকর্ড ব্যবস্থাপনা (ম্যাপ ও খতিয়ান) কার্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক কম্পিউটার, স্ক্যানার, ল্যাপটপ সরবরাহসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। অধিদফতরের হিসাব শাখা ও লাইব্রেরি অটোমেশন করা হয়েছে। কম্পিটারের মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৌজা ম্যাপ এবং স্ক্যানকৃত প্রিন্ট কপি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। অধিদফতরের ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে। অধিদফতরে ওয়াই-ফাই চালু করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ২০ হাজার মৌজার এক কোটির ও অধিক স্বত্বলিপি  ডাটা বেইজ এ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ১ লাখ ১৫ হাজার মৌজা ম্যাপ স্ক্যানকরত পিডিএফ রূপে সার্ভারে সংরক্ষণসহ  ডিজিটাল ব্যবহার চালু করা হয়েছে।

 

 

/এসটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী