X
শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের তৈরি, তাদেরই সমাধান করতে হবে: শেখ হাসিনা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:১৮আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৫৫

হত্যা-নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সংকট মিয়ানমারের তৈরি। নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে নেপিদোকেই এই সংকট সমাধান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বিশ্বনেতাদের রোহিঙ্গা সংকট অনুধাবনের তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।  রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের তৈরি, তাদেরই সমাধান করতে হবে: শেখ হাসিনা

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।  হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার আলামত। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে সক্ষম হননি। বরং গণহত্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতেও কোনও উদ্যোগ নেননি সু চি। বরং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কোনও অগ্রগতি না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়ও অস্বীকার করে আসছেন তিনি।
জাতিসংঘ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এটি দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় আজ এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে। হত্যা-নির্যাতনের মুখে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। আমি অনুরোধ করবো এই সংকট যেন সবাই অনুধাবন করেন। এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান স্থান সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়ানমারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণভাবে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। আজ আমি আরও কিছু প্রস্তাব পেশ করছি:

   ১। রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।

   ২। বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।

   ৩। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

   ৪। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সংস্থাটি স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এমপি/বিএ/
সম্পর্কিত
‘চরম হতাশা’ থেকেই মে মাসে সমুদ্রে ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু, ইউএনএইচসিআর’র শঙ্কা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো রাশিয়া
সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবুকে হুমকি, উদ্বেগ জানালো ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডার্স
সর্বশেষ খবর
বিজিএমইএ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে
বিজিএমইএ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে
পিএসজি-ইন্টার ফাইনাল, উৎসব হবে প্যারিসে নাকি মিলানে?
চ্যাম্পিয়ন্স লিগপিএসজি-ইন্টার ফাইনাল, উৎসব হবে প্যারিসে নাকি মিলানে?
প্রস্তাবিত বাজেটে থাকছে রাজস্ব আহরণের নানা কৌশল
প্রস্তাবিত বাজেটে থাকছে রাজস্ব আহরণের নানা কৌশল
সকালে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ, আছে বৃষ্টির শঙ্কাও
সকালে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ, আছে বৃষ্টির শঙ্কাও
সর্বাধিক পঠিত
ভুয়া কাগজপত্রে আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা, ইমিগ্রেশনে ধরা বিমানের কেবিন ক্রু
ভুয়া কাগজপত্রে আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা, ইমিগ্রেশনে ধরা বিমানের কেবিন ক্রু
ইসলামী ধারার ব্যাংক একীভূতকরণে এনবিএল থাকছে না: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ইসলামী ধারার ব্যাংক একীভূতকরণে এনবিএল থাকছে না: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ট্রাক আটকে চাঁদা দাবি, সেনাবাহিনীর হাতে এনসিপি নেতা গ্রেফতার
ট্রাক আটকে চাঁদা দাবি, সেনাবাহিনীর হাতে এনসিপি নেতা গ্রেফতার
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেত্রীকে  রাস্তায় ফেলে মারধর
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেত্রীকে  রাস্তায় ফেলে মারধর
ফারুকের দেশ ছাড়ার গুঞ্জন
ফারুকের দেশ ছাড়ার গুঞ্জন