X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে যেসব চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩০আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩৫





বাংলাদেশ- ভারত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ অক্টোবর সরকারি সফরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আসছেন। শুরুতে তিন দিনের এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইন্ডিয়া ইকনোমিক সামিটে’ যোগদান। তবে পরে ভারতের অনুরোধে এতে ‘দ্বিপাক্ষিক মাত্রা’ও যোগ করা হয়েছে। এর ফলে এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
শুধু তা-ই নয়, আগামী ৫ অক্টোবর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে একগুচ্ছ চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে ঠিক আড়াই বছর পর দিল্লিতে শেখ হাসিনার সফর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে আলাদা মাত্রা যোগ করবে, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১৭ সালের ৭ থেকে ১০ এপ্রিল দিল্লি সফর করেন শেখ হাসিনা।
ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাংলা ট্রিবিউন শেখ হাসিনার আসন্ন এই সফরের সম্ভাব্য একটি রূপরেখা পেয়েছে।
অর্থনৈতিক এজেন্ডা
আগামী ৩ অক্টোবর দুপুরে দিল্লিতে পা রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি যাবেন তাজ প্যালেস হোটেলে ইন্ডিয়া ইকনোমিক সামিটে। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম আয়োজিত এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধির কাহিনি শুনতেই শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গেই এই অনুষ্ঠানে কো-চেয়ার হিসেবে থাকবেন সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হেং সুইই কিট, টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, অ্যাপোলো হাসপাতাল শিল্পগোষ্ঠীর অন্যতম কর্ণধার শোভনা কামিনেনি প্রমুখ।
গত আড়াই বছরে বাংলাদেশ শুধু স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের (ডেভেলপিং) পর্যায়েই উন্নীত হয়নি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেরই এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি (৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ)। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্পই শোনা যাবে ইন্ডিয়া ইকনোমিক সামিটে শেখ হাসিনার মুখে।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও এখন ১০-১১ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে। আর বাংলাদেশের নতুন এই ‘গ্রোথ স্টোরি’ কাজে লাগিয়ে সেখানে আরও বেশি করে ভারতীয় লগ্নি আকৃষ্ট করারও চেষ্টা চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে তিনি ৪ অক্টোবর ভারতে কনফেডারেশনস অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)-সহ ভারতের শীর্ষ বণিকসভাগুলোর সঙ্গেও মতবিনিময়ে বসছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মাটিতে ভারতকে যে ৩টি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা (এসইজেড) দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারতীয় শিল্পপতিদের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করে ‘বাইব্যাক’ পদ্ধতিতে সেটা যে আবার তারা লাভজনকভাবে ভারতেও রফতানি করতে পারবেন, মনে করিয়ে দেবেন সেটাও।
সফরের প্রথম দিনেই শেখ হাসিনার সম্মানে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস একটি অভ্যর্থনা সভা ও নৈশভোজের আয়োজন করবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন দিল্লির নেতা-মন্ত্রী-নীতি নির্ধারকরা।
দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডা
ইন্ডিয়া ইকনোমিক সামিটের বৈঠক (৩ ও ৪ অক্টোবর) শেষ হওয়ার পর শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর হাসিনার সফরের দ্বিপাক্ষিক অংশ। ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে মুখোমুখি একান্ত বৈঠকের মধ্যে দিয়ে এর সূচনা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার দিগন্তকে প্রসারিত করতে এই মুহূর্তে ৫০টির বেশি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে। সেগুলোর কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে দুদেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে। সব শেষে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতাপত্র সই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক. বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বা এয়ার কানেক্টিভিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই দেশের রাজধানীর মধ্যে এখন প্রতিদিন ৩টি ফ্লাইট (ইন্ডিাগো, স্পাইসজেট ও বাংলাদেশ বিমান) চলাচল করছে, যা কয়েকদিন আগেও অকল্পনীয় ছিল। সেটার সংখ্যা আরও বাড়ানো ছাড়াও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোর সঙ্গেও (গৌহাটি, শিলচর, আগরতলা, তেজপুর, ডিমাপুর, আইজল) বাংলাদেশের সরাসরি বিমান সংযোগ চালু করার কথা বলা হতে পারে সমঝোতাপত্রে।
দুই. সাগরপথেও কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ সম্ভবত চোখে পড়বে। দুই দেশের মধ্যে কোস্টাল শিপিং (উপকূলীয় নৌযাত্রা) শুরু হয়েছে সম্প্রতি। সেটাকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা হবে। এর চেয়েও বড় কথা, এক দেশ যাতে অন্য দেশের বন্দরগুলোর সুবিধা ও অবকাঠামো (পোর্ট ফেসিলিটি) ব্যবহার করতে পারে, সমঝোতা হতে পারে তা নিয়েও।
তিন. সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও আশা করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি বড় ঘোষণার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন শুরু হতে আর ৬ মাসও বাকি নেই। সেই উৎসবে ভারতের যোগদানও প্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। এই ধরনের আরও নানা সহযোগিতাও আগামী দিনে দেখতে পাওয়া যাবে।
চার. বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের মাটিতে আরও বেশি সংখ্যায় দূতাবাস চালু করা ও পরস্পরের নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করার ওপরেও জোর দেওয়া হবে। চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের একটি মিশন স্থাপনের জন্য তৎপরতা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সেই উদ্যোগেও হয়তো আলো পড়বে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরেই।
পাঁচ. ভারত-বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়েও উভয় দেশের সম্মতিতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো এই সফরে চূড়ান্ত হতে পারে।
৫ অক্টোবর যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শেষে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
তবে আড়াই বছর আগে দিল্লিতে এসে তিনি যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও তার পারিবারিক সুহৃদ প্রণব মুখার্জির আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন, এবারে শেখ হাসিনার সেই প্রিয় ‘কাকাবাবু’র সঙ্গে তার দেখা হবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। শেখ হাসিনার এই ভারত সফরের সময়টায় হিন্দুদের দুর্গাপূজা। বছরের এই সময়টায় প্রণব মুখার্জি তার দেশের বাড়ি পশ্চিমঙ্গের কীর্ণাহারে যান। ফলে এবার শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দেখা হবে কিনা, তা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আগামী ৬ অক্টোবর (রবিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরে যাবেন।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী