X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২০:২৫আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৩০

রোহিঙ্গা সংকট

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত এক সপ্তাহে আর্জেন্টিনায় ও নেদারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) এ নির্যাতন তদন্ত সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার করার জন্য কূটনৈতিক প্রয়াস আরও জোরালো করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই আইনি মামলার ফলে মিয়ানমারের ওপর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। এই সুযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা দরকার।

আর্জেন্টিনায় মামলা হয়েছে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে মিয়ানমার দেশটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আর্জেন্টিনার মামলার গুরুত্ব হচ্ছে, একটি জাতীয় কোর্ট ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশনের মামলা গ্রহণ করে এবং পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে অন্য দেশগুলো এটি পালন করতে সম্মত হতে পারে। তখন সুচি বা অপর অভিযুক্তরা অন্য দেশে গেলে এবং ওই দেশ যদি মানবাধিকারকে বেশি গুরুত্ব দেয় তবে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা পালন হতে পারে।’

এই মামলায় মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিষয় এসেছে। এই কারণে এর গুরুত্ব অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে কোর্ট প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন যে, সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং এটি মিয়ানমারের ওপর একটি চাপ তৈরি করবে।’

অতীতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘চিলির স্বৈরশাসক জেনারেল পিনোশের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে স্পেনের একটি কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর লন্ডনের একটি কোর্ট ওই পরোয়ানা সম্মান করলে পিনোশেকে গ্রেফতার করা হয় ইংল্যান্ডে। আমরা যদি পিনোশের মামলাটি দেখি তবে আর্জেন্টিনার করা মামলাটির গুরুত্ব বুঝতে পারবো।’ যখন কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন তখন সুচি বা মিয়ানমারের অন্য নেতারা যে এই জঘন্য অপরাধ করেছে সেটির একটি স্বীকৃতি হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

আইসিজের মামলার বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটাও একটি আন্তর্জাতিক চাপ এবং এটি একটি স্বীকৃতি যে মিয়ানমার জাতিসংঘের নিয়ম মানেনি। আইসিজে কোনও শাস্তি দিতে পারবে না; কিন্তু এর ফলে একটি মানসিক এবং নীতিগত চাপের মধ্যে থাকবে মিয়ানমার।’ আইসিজে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পারে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে নিকারাগুয়া তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নাক গলিয়েছিল বলে একটি মামলা করে এবং ক্ষতিপূরণ চায়। যুক্তরাষ্ট্র ওই সময়ে যুক্তি দেখিয়েছিল, এই মামলা করার কোনও এখতিয়ার নেই। কিন্তু পরে কোর্ট এ বিষয়ে রুলিং দেন, তাদের অধিকার আছে।’ পরে যুক্তরাষ্ট্র ওই মামলায় হেরে যায় এবং কোর্ট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করেন বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনোদিন ওই অর্থ পরিশোধ করেনি। নিকারাগুয়াও জানতো, তারা ওই অর্থ কোনোদিন পাবে না। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিল কোর্টের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করেছিল এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছিল। তারা সেই স্বীকৃতি আদায় করতে পেয়েছিল।’

এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, ‘কূটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো করার এটাই সময়।’

আইসিজে’তে গাম্বিয়া মামলা করেছে ও কানাডা সেটি সমর্থন করেছে। এ অবস্থায় আমরা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য দেশগুলোকে এ ব্যাপারে আরও বেশি সমর্থন দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করি তবে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক বেশি স্পর্শকাতর এবং তাদের এ বিষয়ে আরও সজাগ করতে হবে।’

বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হলে এই সমস্যা সমাধান করা আরও সহজ হবে বলে সাবেক এই ডিফেন্স অ্যাটাশে মনে করেন।

প্রসঙ্গত, যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং অং সান সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকারের নিপীড়নের কারণে সব সময় তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতনের কারণে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের উৎখাত করার জন্য তাদের ওপর আবারও চরম নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তাদের নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। ধারণা করা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রায় ৪০০ গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না