X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

শান্তিচুক্তির ২২ বছর: কতটা শান্তি ফিরলো পাহাড়ে?

জামাল উদ্দিন
০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৪৭আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৪৭

১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণ (ফাইল ছবি) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২২ বছর আজ ২ ডিসেম্বর (সোমবার)। তবে বহু কাঙ্ক্ষিত এই চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে আছে বিতর্ক। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বলছে, শান্তির জন্য অস্ত্র সমর্পণের শর্ত তারা বিগত ২২ বছরেও পূরণ করেনি। শান্তিচুক্তির এই দুই পক্ষের দাবি পরস্পরবিরোধী হলেও পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় শান্তি যে ফেরেনি, তা নিয়ে তেমন মতভেদ নেই।


সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেসব শর্তে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই শান্তিচুক্তি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, তার দুই-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পক্ষে চুক্তিতে সই করা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কাছে সরকারের প্রধান শর্ত ছিল শান্তির জন্য অস্ত্র সমর্পণ। এই শর্ত বিগত ২২ বছরেও তারা পূরণ করেনি।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করে আসছেন। গতকাল রবিবারও (১ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকার জুম্ম জাতিগুলোকে চিরতরে নির্মূলকরণের হীন উদ্দেশ্যে যুগপৎ বাঙালিকরণ ও ইসলামিকরণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে।’ তার অভিযোগ, সরকার চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করেনি। পাহাড়ে এখনও অস্ত্রবাজি, খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এর প্রধান শিকার হচ্ছে পাহাড়ের সাধারণ অধিবাসীরা।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্যের লড়াইয়ে পার্বত্য অঞ্চলের চার আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্যদের রক্ত ঝরছে প্রতিদিন। গতকালও চাঁদার টাকার ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে জনসংহতি সমিতির চিফ কালেক্টর বিক্রম চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে। ১৫টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলাগুলোর প্রশাসনিক ৩৩ বিভাগের মধ্যে ১৭টি বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছে সরকার।
সূত্র আরও জানায়, জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা নিজেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বিগত ২১ বছর ধরে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন। তার জন্য বরাদ্দ সরকারি গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ে। অথচ তিনি রাষ্ট্রীয় কোনও দিবস-আয়োজনে অংশ নেন না। এলাকায় ভোটার হননি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রও নেননি।
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এম এন লারমা), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)— এই চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তাদের ৭২ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন ইউপিডিএফের সদস্য, জেএসএস-এর সদস্য ২৭ জন। তাদের হাতে নিহত হয়েছেন ৫ জন বাঙালি। এক বাঙালিসহ অপহরণ হন ৬৩ জন। গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ছয় বছরে ২০৭ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ও ১১৪ জন বাঙালি নিহত হয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৪৭ জন অপহরণ হয়েছেন। এ সংখ্যা বাঙালিদের মধ্যে ১৬৯ জন।
জানতে চাইলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যান্য এলাকার মতো পার্বত্য অঞ্চলেও উন্নয়ন হচ্ছে। লেক থেকে পাহাড়ে সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের একটি কমিটি আছে। তারা চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করছে।
রাঙামাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক ভালো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।’ তবে পাহাড়ি-বাঙালি সবার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পাহাড়ে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য সেসব গ্রুপের মধ্যে খুনখারাবি হচ্ছে।’
সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের বাঙালি বলেন আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলেন, তারা শান্তিতেই আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও আরও অনেক জাতি বাস করে। সে মানুষগুলো কী চাচ্ছে? তারা মনে করছে, এই রাষ্ট্রে তাদের সম-অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে একটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে, অন্য কোনোভাবে হবে না। গত ৭-৮ বছর থেকে শুনছি ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’ সেটা কেন বেড়ে ৪৯ হয়নি, প্রশ্ন তোলেন তিনি। 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অবৈধভাবে পালিত ১৮টি সিংহ জব্দ করলো পাকিস্তান
অবৈধভাবে পালিত ১৮টি সিংহ জব্দ করলো পাকিস্তান
পুলিশের লাঠিপেটায় ২০-৩০ বিডিআর সদস্য আহতের অভিযোগ
পুলিশের লাঠিপেটায় ২০-৩০ বিডিআর সদস্য আহতের অভিযোগ
অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত আইন শিক্ষা দেওয়া হয় না: আসিফ নজরুল
অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত আইন শিক্ষা দেওয়া হয় না: আসিফ নজরুল
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশ, শিল্প খাতে উল্লম্ফন
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৮৬ শতাংশ, শিল্প খাতে উল্লম্ফন
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
বাংলাদেশে নিজের অনেক ভক্ত জানার পর যা বললেন কেট উইন্সলেট
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
প্রসিকিউশন গণহত্যার দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি: শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’
‘আ.লীগের সদস্যরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে না পারে’
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ
আসন্ন নির্বাচনে এগিয়ে বিএনপি, দ্বিতীয় জামায়াত: সানেমের জরিপ