বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সফররত ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শেফার বাংলাদেশের চমৎকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, তারা এদেশের উন্নয়নে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
হার্টভিগ শেফারের নেতৃত্বে বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় হার্টভিগ শেফার বলেন, ‘বাংলাদেশের আরও উন্নয়নে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
শেফার বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘বিগত এক দশকে বাংলাদেশ অতি দরিদ্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।’ তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
একইসঙ্গে, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তাদের (বিশ্ব ব্যাংক) সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য আরও অর্থায়ন করতে সক্ষম হবো।’
বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বারোপ করে এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে উইন-উইন অবস্থা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক উন্নয়ন বিশেষ করে শিশু ও মাতৃ মুত্যু হার হ্রাসের এবং বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রশংসা করেন।
শেফার ঘোড়াশাল নদীবন্দর পরিদর্শন করেছেন। তিনি যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে রেলপথের সম্ভাবনা রয়েছে।’
নিজে যেহেতু গ্রাম অঞ্চল থেকে এসেছেন তাই পল্লি উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘পল্লি উন্নয়নটা খুবই জরুরি।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকার পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য, বিশেষ করে গ্রামের উন্নয়ন করা।’
দেশের উন্নয়নে যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমরা সড়ক ও রেল পথের পাশাপাশি নদী পথে যাতায়াতকে গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা, এটি কম খরচে যোগাযোগের মাধ্যম।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ‘বিবিআইএন’ এবং ‘বিসিআইএম’ উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ‘এর ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি জোরদার হবে।’
‘বিবিআইএন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারত এক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালকে ট্রানজিট প্রদানে সম্মত হয়েছে।’
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কারণ ভারত, নেপাল এবং ভূটান বাংলাদেশের অতি নিকটে রয়েছে।’
দেশের বিদ্যুতায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী দুই বছরের মধ্যেই দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে।’
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার সরকার সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এর ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা একাজে বাধার সম্মুখীন হই। কিন্তু, আমরা তা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সর্বক্ষেত্রেই নারী বিশেষ করে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) কর্মরত রয়েছে।’
পাশাপাশি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শতকরা ৫০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য রাখা হয়েছে। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বাসস