X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কূটনীতির বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সংকট ও অভিবাসন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মার্চ ২০২০, ০১:০৪আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২০, ০২:০৪

কূটনীতির বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সংকট ও অভিবাসন

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের কূটনীতির বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সংকট ও অভিবাসন। শুধু তাই নয় মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে, যেসব সুবিধা এখন বাংলাদেশ ভোগ করছে সেগুলো হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সেগুলো ধরে রাখতে বাংলাদেশকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত এক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালে যখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো তখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে আমরা যেসব সুবিধা পেয়ে থাকি সেগুলো হারানোর আশঙ্কা আছে। আমরা ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অণুবিভাগ করেছি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই সুবিধাগুলো যেন না হারাতে হয় সেটি নিয়ে তারা কাজ করবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আমাদের সুবিধাগুলো ২০২৭ পর্যন্ত বহাল থাকবে কিন্তু অন্যান্য জায়গায় এখনও বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব সুবিধা ধরে রাখতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা আশাবাদী। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যাদের সঙ্গে কাজ করছি তারা খুব সহজ নয়। অভিবাসন চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। যেসব দেশে আমরা জনশক্তি রফতানি করি তাদের অনেকের অর্থনীতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ভারতের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। এটি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় যে, সংলাপের মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে আমারা বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছি। প্রতিবেশী দেশে কিছু অসুবিধা হলে তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে উল্লেখ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আমরা প্রতিবেশীদের বলি, এমন কিছু করবেন না যাতে করে আমাদের কোনও ধরনের অসুবিধা হয়। আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে করে জনগণের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা করতে কষ্ট হয়।

শিক্ষক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে ৬ বছর কাজ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শিক্ষক থেকে কিভাবে কূটনীতিক হলেন—এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ ডেকে বললেন, ‘আপনাকে রাষ্ট্রদূত বানাতে চাই’। আমি বললাম, ‘আমি কূটনীতিক নই’। উনি বললেন, ‘আপনাকে জাতিসংঘে পাঠাচ্ছি’। আমি বললাম, ‘এটা তো বড় কঠিন দায়িত্ব। সেখানে পণ্ডিত, ঝানু লোকেরা কাজ করে’। উনি বললেন, ‘আমি এগুলো বুঝি না, আপনি রাজি কিনা’। আমি বললাম, ‘আমার ক্লাস চলছে, আমি এ মুহূর্তে যেতে পারবো না। আমার সেমিস্টার শেষ না হলে আমি যেতে পারবো না’। উনি বললেন, ‘চাকরি ছেড়ে দেন’। তখন আমি বললাম, ‘না আমার একটি দায়িত্ববোধ আছে।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন গুরুদায়িত্ব দিতে চাইলেন তখন আমি বললাম, ‘দোয়া করেন। আমি জানি না আমাকে কী করতে হবে। তবে আপনার যখন আমার ওপর বিশ্বাস আছে, তাহলে আমার বসের অনুমতি নিতে হবে’। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘বসের অনুমতি আমি নেব, আপনি রাজি কিনা বলেন’। বস মানে আমার বউ। এভাবে আমি জাতিসংঘে গেলাম।


বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াও নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। অনেকগুলো নির্বাচনে বিজয় অর্জনও করেছেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমি দেখলাম স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে নেতৃত্ব প্রয়োজন। এজন্য আমরা অনেকগুলো জাতিসংঘ এজেন্সিতে বারবার নির্বাচন করি। এখন মন্ত্রণালয়ে এসে দেখি নির্বাচন করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেইনি। যেখানে বুঝেছি যে নির্বাচনে অংশ নিলে জিতবো সেখানেই দাঁড়াতাম। আমার ছয় বছরে আমরা ৫২ পদে নির্বাচিত হয়েছি।
নির্বাচনে জিতে কী লাভ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লাভ হলো নেতৃত্ব পেলে অন্যরা আপনার কথা শুনবে। আপনাকে পাত্তা দেয়। যদি এমনি এমনি থাকেন তবে কেউ পাত্তা দেয় না। আমার সৌভাগ্য তখন জাতিসংঘের মহাসচিব যিনি ছিলেন তার সঙ্গে একটি আলাদা সম্পর্ক ছিল।
নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচন
২০১৬-১৭ মেয়াদে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। ওই সময়ে জাপানের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ। কোন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন প্রার্থী হলাম তখন আমরা জাপানের সঙ্গে দেনদরবার করলাম। জাপানের সঙ্গে দর কষাকষি করলাম। বললাম, আমরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবো, কিন্তু আমাদের সাহায্য দিতে হবে। প্রথম দুই বিলিয়ন দিয়ে শুরু করলাম দেনদরবার, পরে ছয় বিলিয়নে উঠলো।
বড় গ্রুপ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের জন্য বড় কয়েকটি গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এর মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকা একটি গ্রুপ। তাদের খুশিতে রাখতে হয়। আরেকটি গ্রুপ হচ্ছে চীন। তারা আমাদের বড় অর্থনৈতিক অংশীদার। প্রতিবেশী ভারতকেও অবহেলা করার সুযোগ নেই। মুসলমান দেশগুলো আরেকটি গ্রুপ।
মানবাধিকার প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা আমাদের পণ্য কেনে ওইসব দেশে মানবাধিকার এবং মানবপাচার বড় ইস্যু। এগুলো খারাপ হলে তারা কেনা কমিয়ে দেবে বা ঝামেলা করবে। সেজন্য আমরা এ ব্যাপারে সোচ্চার। আমরা মানবপাচার কমানোর চেষ্টা করছি। আইন মন্ত্রণালয়ে জোরাজুরি করে মার্চের প্রথম সপ্তাহে মানবপাচারের প্রথম ট্রাইব্যুনাল তৈরি করছি।

/এসএসজেড/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি