X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লকডাউন নিয়ে টানাটানি

শাহেদ শফিক
১৯ জুন ২০২০, ২২:৩৬আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ১৪:৫৫

লকডাউন

রাজধানীতে লকডাউন ঘোষণা নিয়ে হযবরল অবস্থা দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন বলছে, তাদেরকে জোনভিত্তিক ডিমার্কেশন তৈরি করে না দিলে লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইনে বলা হয়েছে— মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিহ্নিত জোনগুলো থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনায় জোন বা স্পট বাছাই করবে। তবে এই গাইডলাইন অফিসিয়ালি জারি হয়নি বলে তা আমলে নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন। বিষয়টি নিয়ে এখন একপক্ষ অপরপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কবে থেকে ঢাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন হবে।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটির ২৮টি ও উত্তর সিটিতে পড়েছে ১৭টি এলাকা। কিন্তু সিটি করপোরেশন বলছে, তারা গণমাধ্যম সূত্রে এলাকাগুলোর নাম জানতে পারলেও লকডাউন কার্যকর করার বিষয়ে অফিসিয়ালি মাদার প্রতিষ্ঠান (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) থেকে কোনও নির্দেশ পায়নি। এছাড়া, সিটি করপোরেশন এ সংক্রান্ত যেসব কাগজপত্র পাচ্ছে সেগুলোতে কারও স্বাক্ষর নেই। ফলে এসব কাগজপত্রের ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না তারা। উভয় সিটি করপোরেশন বলছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে তারা ধোঁয়াশায় রয়েছে।

এদিকে গত ১০ জুন দু’টি এলাকা লকডাউন করার নির্দেশনা দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। আদেশটি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে পাঠানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ‘প্রাথমিকভাবে অবিলম্বে তিনটি জেলা (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কী হবে, তা প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।’

তবে এই চিঠির পর উত্তর সিটি করপোরেশন পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় লকডাউন কার্যকর করলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ডিএসসিসি জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কথায় তারা লকডাউন করতে পারে না। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা আসতে হবে।

এদিকে লকডাউন কার্যকর করতে গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাতে বলা হয়েছে, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সভাপতি করে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ১০ সদস্যের এ কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যরা উপদেষ্টা থাকবেন।’ কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিহ্নিত জোনগুলো থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে কমিটি জোন বা স্পট বাছাই করবে। নির্ধারিত জোন বা স্পটের লকডাউনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। এছাড়া জোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটিকেও প্রয়োজনীয় গইডলাইন প্রদান করবে ১০ সদস্যের কমিটি।’

এই গাইডলাইন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা সমীচীন হবে বলে মনে করছে গাইডলাইন প্রণয়ন কমিটি। তারা গাইডলাইনের শেষাংশে বলা হয়েছে— ‘লাল বা হলুদ জোন এলাকার অফিস-আদালত পরিচালনা, কলকারখানা ব্যবস্থাপনা, দোকানপাট নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা বা বন্ধ রাখা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর হোম ডেলিভারি নিশ্চিত করা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন চক্রে অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই আইনগত এখতিয়ার সৃষ্টি এবং সমন্বিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার স্বার্থে নির্দেশিকাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি হওয়া সমীচীন হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত অধিদফতরের সেই গাইডলাইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হয়নি। আর  এই গাইডলাইনে কারও স্বাক্ষর না থাকায় এটিকে আমলে নিচ্ছে না দুই সিটি করপোরেশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, আমাদের সুনির্দিষ্ট করে এলাকাভিত্তিক তথ্য দেওয়া হোক। শুধুমাত্র একটি এলাকার নাম বলে দিলেই হবে না। কারণ, এলাকাতো অনেক বড়। পুরো এলাকা তো লকডাউন করা যাবে না। তাই আমরা বলেছি, এলাকা সুনির্দিষ্ট করে ডিমার্কেশন করে দেওয়া হোক। তাহলে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবো। তা না-হলে লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

ডিমার্কেশন করা হলে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কত সময় লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, ম্যাপিং চলে এলে আমরা কাজ শুরু করবো। আমরা ২৮টি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) রেডি করেছি। ডিমার্কেশন পেলে সর্বনিম্ন ৪৮ ঘণ্টা ও সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারবো। সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। আমাদেরকে আগে জানাতে হবে, কোন এলাকার কতটুকু লকডাউন হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো একটি সরকারি সংস্থা। আমাদেরকে নির্দেশ দিতে হবে যে, তুমি তোমার এই এলাকা লকডাউন করো। তাহলেই আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু এ ধরনের নির্দেশ কেউ আমাদের দেয়নি। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অফিসিয়ালি নির্দেশ দিতে হবে। এখনও পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনও নির্দেশনা আসেনি।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাগজপত্র পাঠানো হবে। কিন্তু তাতে কারও স্বাক্ষর থাকবে না, এটাতো হয় না। সবকিছুর একটা নিয়ম রয়েছে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) মধ্যরাত থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে আগের দিন বুধবার এলাকায় মাইকিং করেন স্থানীয়রা। তবে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী। যদিও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এই লকডাউনকে প্রথমে স্বাগত জানিয়েছিলেন। পরে জানানো হয়, এই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না। লকডাউন নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে এমন টানাটানিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিটিউট অব প্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লকডাউন নিয়ে আমাদের হযবরল অবস্থা হয়ে গেছে। শুরু থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয় দেখা যায়নি। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর এটা পরিষ্কার প্রথম অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত না করায় সেখানে সফলতা আসেনি। তাই সেখান থেকেই আমাদেরকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল।’

তিনি আরও  বলেন, ‘তালিকা প্রকাশের আগে এলাকাভিত্তিক  লকডাউন কীভাবে করা হবে, তার বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দরকার ছিল। এজন্য আগে ক্ষমতা দিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা প্রয়োজন ছিল। যদি কমিটিকে ক্ষমতা দিয়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হতো তাহলে এমন চিত্র দেখা যেতো না।’

 

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
একসময় চট্টগ্রাম বন্দর যেকোনও দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে: খালিদ
একসময় চট্টগ্রাম বন্দর যেকোনও দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে: খালিদ
অটোরিকশায় থাকা নারীকে মোটরসাইকেল থেকে ‘গুলি’, পুলিশ বলছে সন্দেহ আছে
অটোরিকশায় থাকা নারীকে মোটরসাইকেল থেকে ‘গুলি’, পুলিশ বলছে সন্দেহ আছে
অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন কাল, প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী
অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন কাল, প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন