X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যায় পানিবন্দি ২৬ লাখ মানুষ

শফিকুল ইসলাম
২০ জুলাই ২০২০, ১৩:৩০আপডেট : ২০ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৫

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৮ জেলার ২৬ লাখ মানুষ
এই মুহূর্তে দেশের বন্যাকবলিত ১৮ জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ জন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৫টি। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে এসব মানুষ কেউ নিজের বাড়িতে উঁচু মাচা করে, কেউ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ বেড়িবাঁধের ওপর, কেউ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সরকারি ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রবিবার ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনী ও নওগাঁ। এসব জেলার ৯০টি উপজেলার ৫৩২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৩টি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ২১১ জন, নারী ২৩ হাজার ৩২২ জন, শিশু ১২ হাজার ৯৯৯ জন ও প্রতিবন্ধী ১৮৯ জন।

বন্যাকবলিত চার জেলায় কোনও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তিন জেলায় সীমিত আকারে খোলা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বন্যাদুর্গত লোকজন বাড়ি চলে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট, রংপুর, টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী জেলায় কোনও আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এর মধ্যে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর, আদিতমারি ও পাটগ্রাম উপজেলায় পানিবন্দি ৩৯ হাজার ৫৪৮টি পরিবারের মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৬ জন। রংপুর জেলায় গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৮ হাজার এবং মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজার। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতি, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায় পানিবন্দি ২২ হাজার ৪০০ পরিবারের ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ জন। রাজবাড়ী জেলায় এখন পর্যন্ত বন্যা হয়নি বলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রয়োজন হয়নি। যেহেতু এ জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী, সেহেতু বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় এ জেলা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া মানিকগঞ্জ জেলায় ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে তা বন্যাকবলিত মানুষের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এ জেলায় এখনও পর্যন্ত বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৯৬ জন। পরিবারের সংখ্যা ৬৮৮টি। জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি। তারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে মাচা করে বসবাস করছেন। আবার কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

অপরদিকে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় নেত্রকোনা ও নওগাঁ জেলায় খোলা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষজন বাড়ি চলে গেছে। ফেনীতে এখনও বন্যা হয়নি বিধায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রয়োজন পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। নেত্রকোনা জেলায় বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, খালিয়জুড়ি, বারহাট্টা ও মদন। এসব উপজেলার ৩১টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৬০০ পরিবারের ৬৪ হাজার ১০০ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

এনডিসিসিআর সূত্র জানায়, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৬০ হাজার গবাদিপশু রাখা হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলায় ৫৯৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করলেও ২১২টি টিম কাজ করছে। এসব জেলার ঘেরের মাছ ভেসে গেছে, সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তবে এর হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি। বন্যার পানি নামতে শুরু করলে এসব ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৮ জেলার ২৬ লাখ মানুষ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অতিবৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে শাখা-প্রশাখা ও ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০০ নদনদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪ হাজার ১৪০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। জুলাই মাসে আরও বৃষ্টিপাত হবে। মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। তবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর রবিবার (১৯ জুলাই) জানিয়েছেন, শনিবারের তুলনায় রবিবার বন্যার কোনও উন্নতি হয়নি। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা ও ধরলার পানি কখনও স্থিতিশীল নয়। আটকে থাকে না। পানি বয়ে যায়। তাই এ সময় এই দুই নদীর অতিরিক্ত পানিতে জেলা বন্যাকবলিত হলেও কয়েক ঘণ্টা পর নেমে যায়। এ কারণে এখানকার মানুষ বাড়িতেই থাকে, আশ্রয়কেন্দ্রে আসে না। তবে সরকারি সহায়তা বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি জানিয়েছে, জেলার শুধু ভূঞাপুরে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তবে তা জটিল নয়। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এখানকার বন্যা পরিস্থিতি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভা ও ৮৭টি ইউনিয়নের পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ২ হাজার ৩২৪টি। এসব পরিবারের মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮ হাজার ১২৯ জন। সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, সরকার সব সময় প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নিজে বন্যা পরিস্থিতি এবং সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম মনিটর করছেন। বন্যার কবল থেকে মানুষ ও তাদের সম্পত্তি রক্ষায় সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!