X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চীনা ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ কী?

জাকিয়া আহমেদ
২৬ জুলাই ২০২০, ১৪:২৪আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২০, ০৮:২৩

চীনা ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ কী? চীনে উদ্ভাবিত করোনার একটি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেওয়ার পরও হঠাৎ করেই তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ হবে কিনা সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় জড়িত। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা উচিত। দেরি হয়ে গেলে তার খেসারত দিতে হবে।

চীনের সিনোভ্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করতে চাওয়া আইসিডিডিআরবি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির শর্তের কারণে তারা এ বিষয়ে ট্রায়াল শুরুর আগে কথা বলতে পারবে না। সবকিছু চূড়ান্ত হলেই কেবল তারা গণমাধ্যমকে সব জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা এখন আর ভ্যাকসিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন রাজনৈতিক ও ডিপ্লোমেটিক ইস্যু হয়ে গেছে। এখানে আর আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই। এটা টোটালি অন্যভাবে হ্যান্ডেল করা হচ্ছে।

১৯ জুলাই বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন পায় বলে সেদিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মাহমুদ উজ জাহান। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে। দেশটি এর আগে বাংলাদেশকে পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছিল। এছাড়া বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটি এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।’

ডা. মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইসিডিডিআরবি একটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে চাচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে যে কোনও ট্রায়ালের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয় বিএমআরসি। তারা আমাদের কাছে এই ট্রায়ালের অনুমতি চেয়েছিল, আমরা এটা যাচাই-বাছাইয়ের পর রিভিউ করে অনুমোদন দিয়েছি। ভ্যাকসিনটি দেশের সাতটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ট্রায়াল হবে।’

চীনের ভ্যাকসিন দেশে প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

চীনের ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ কী জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন করে কোনও ডেভেলপমেন্ট হয়নি। তবে ভ্যাকসিনের প্রস্তাবনা এসেছিল, এখন সরকারের অনুমোদন লাগবে, সেই অনুমোদন পেলে আমরা দিতে পারবো।’

তবে ‘এটাতো পলিসি ম্যাটার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে এখন অনেক ভ্যাকসিনই রেডি হচ্ছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও থার্ড স্টেজে রয়েছে, চীনের ভ্যাকসিনটাও রয়েছে একই ধাপে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত করবে যে, কীভাবে বিষয়টি এগোবে, তবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’

‘তবে কেউ এসে কিছু বললো, আর আমরা নিয়ে নিলাম-বিষয়টি এরকম নয়’ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইফিকেসি, কার্যকারিতা, টক্সিসিটি-এসব কিছু দেখতে হবে। কারণ আমরা তো দেশের জনগণকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারবো না। একইসঙ্গে এটা জাতীয় পরামর্শক কমিটিরও সিদ্ধান্তের একটি বিষয়। সেকেন্ডলি-একটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয় আছে…কারণ আমরা কোনটা ( ভ্যাকসিন) নেবো, কোনটা নেবো না, এটাতো একটা ডিফিকাল্ট চয়েজ। এই চয়েজটি এখনও হয়নি, হলে সবাই জানতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেককিছু দেখার আছে। সেফটি, সিকিউরিটি কোনটা আমরা আগে পাবো। কোনটা মোর ইফেক্টিভ হবে কোয়ালিটি ভেদে-সব দেখেই সিদ্ধান্ত হবে।’

‘কবে আলোচনা হবে সে বিষয়ে কিছু জানি না’ উল্লেখ করে পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চীনের ভ্যাকসিন ও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দুটোই ভালো। চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল বিএমআরসি। সেটা যদি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে, নয়তো অনেক অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।’

‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে এখনও কোনও কথা বলেনি’ জানিয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তবে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে, প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটির কী অবস্থা ছিল সব বিষয়ে পর্যালোচনা করে ১৯ সদস্যের কমিটি সিদ্ধান্ত নেবো।

তবে যে কোনও ভ্যাসকিন ট্রায়ালের পক্ষে আমি জানিয়ে তিনি বলেন, সব আইন মেনে সেটা করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ও বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অংশ নেওয়ার জন্য। আমাদের দেশে কোনও ভ্যাকসিন ট্রিটমেন্ট ইভ্যালুয়েশন ইউনিট (ভিটিইউ) নেই। অথচ এমনি গ্লোবাল রিসার্চে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল এ ভ্যাকসিন ট্রায়ালের মাধ্যমে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন যত দ্রুত আনা যাবে, তত দেশের মানুষ নিরাপদ হবে। যদি ট্রায়ালে অংশ নিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় তাহলে আমরা ট্রেন মিস করবো এবং তার খেসারত দিতে হবে।’

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে বিএমআরসির পরিচালক ডা. মাহমুদ উজ জাহানের সঙ্গে গত দু’দিন তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল এবং এসএমএস করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

/জেএ/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ৩০ দিনের মধ্যে ফেরতের দাবি
শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ৩০ দিনের মধ্যে ফেরতের দাবি
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?