X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মানুষের পাশেই থাকতে চান ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’রা

সাদ্দিফ অভি
২২ আগস্ট ২০২০, ১১:০০আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২০, ১৫:২১

মানুষের পাশেই থাকতে চান ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’রা

নায়ক কী শুধুই রঙিন পর্দায় থাকেন! নাকি বাস্তব জীবনেও নায়কের আবির্ভাব ঘটে? আসলে দুটোই সত্যি। স্ক্রিপ্টে সাজানো সিনেমার নায়কের মতো বাস্তব জীবনেও কখনও অনেক নায়কের দেখা মেলে। তাদের মানবিক কাজগুলোর কোন স্ক্রিপ্ট থাকে না। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নানা পর্যায়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান তারা। এমনই পাঁচ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীকে বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃত দিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ)। আমাদের সেই নায়কেরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, স্থপতি রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নুর, মাতৃসেবায় নিয়োজিত ধাত্রী তানিয়া আক্তার ও করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তরুণী আঁখি। বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। ভবিষ্যতেও মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন তারা।    

বুধবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া এই পাঁচ জনকে। মানবিক কাজে অনুপ্রেরণা জোগাতে জাতিসংঘ তাদের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। এদের প্রত্যেকেই মানবিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করে জাতিসংঘ।

করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যান, তখন সৈকত ক্যাম্পাসে থেকে ঢাকা শহরের প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা দেওয়া শুরু করেন। এপ্রিল মাসের শুরু থেকে টানা ১১৬ দিন কার্যক্রম চালান তিনি। করোনার প্রকোপ কমে এলে তিনি সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা দিতে চলে যান সেখানে।

সৈকতের এই মানবিক কার্যক্রম পুরোটাই সাহায্যনির্ভর। সবার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে তিনি তার এই কার্যক্রম চলমান রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমি যেহেতু ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাই ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য নিজেকে তৈরি করছি। ভবিষ্যতে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো, সেটা যেভাবেই সুযোগ পাই না কেন।'  

মানবিক সহায়তা কার্যক্রম প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের আর্থিক সংকট আছে। মানবিক সহায়তা চলমান রাখতে ফান্ডের প্রয়োজন আছে। সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ আমাকে সহায়তা করেছে বলেই আমি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছি। এই মুহূর্তে কার্যক্রম চালানোর মতো অর্থনৈতিক সাপোর্ট আমাদের নেই। যদি সুযোগ থাকে, সাপোর্ট থাকে, তাহলে অবশ্যই কাজ করে যাবো।'  

‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি স্থপতি রিজভী হাসানের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। স্থাপত্যবিদ্যার পাঠ চুকিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কাজ পান। মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা স্বল্প খরচে আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ দেখতে পান তিনি। সেখানে তিনি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় আক্রান্ত নারীদের সেবা প্রদানের জন্য স্বল্প খরচে নিরাপদ স্থান গড়ে তোলা শুরু করেন। এসব স্থানে রোহিঙ্গা শিবিরের নারীদের কাউন্সেলিংসহ নানা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে পারছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।

রিজভী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমরা ইচ্ছা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা। সেটা বাংলাদেশেও হতে পারে বা যে কোনও জায়গায় হতে পারে। মূলত এখান থেকে আমার যে শিক্ষাটি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগাতে চাই। যেখানেই জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বা চলছে সেখানে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। আরেকটি ইচ্ছা হচ্ছে, আমাদের এই পেশায় যারা গ্রামে কাজ করেন যেমন- শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। এরা আসলে খুব সুন্দর মনের অধিকারী। আমাদের টার্গেট হচ্ছে এদের খুঁজে বের করা, যারা মূলত নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত। এটা আমাদের একটি সমষ্টিগত ইচ্ছা, আমাদের সঙ্গে আরও কিছু স্থপতি আছেন যারা কাজ করতে আগ্রহী।'

তিনি আরও জানান, তারা ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ, যশোর কিশোরগঞ্জের মতো জায়গায় কাজ শুরু করেছেন। তাদের টার্গেট হচ্ছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করা এবং তাদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করা।          

তানিয়া আক্তার পেশায় একজন মিডওয়াইফ। মানুষের সেবা করার জন্য তিনি এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন। নিজের কাজের মাধ্যমে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। তানিয়া বর্তমানে কুমিল্লায় স্বাস্থ্যসেবার কাজে নিয়োজিত আছেন। এর আগে তিনি কুতুবদিয়া, ভোলার তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কাজ করেছেন। তানিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের এই সংস্থা বলছে, তানিয়া রোগীদের আস্থা অর্জন করেছেন। তাই তার কাছ থেকে সেবা নিতে রোগীর ভিড় লেগে থাকে। ২০১৭ সালের শুরু থেকেই তানিয়া রোহিঙ্গা মায়েদের সেবা দেন। মিডওয়াইফারিকে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখেন তানিয়া।

তানিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমাদের কাজই হচ্ছে মা ও শিশুদের নিয়ে। আমাদের সরকার তৈরি করেছে, যাতে আমরা দেশে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করি এবং দেশে একটি মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করি। আমাদের যে অর্জন, সেটা আমরা কাজের মাধ্যমেই পেয়ে যাই। আমরা মিডওয়াইফরা যখন মানসম্পন্ন সেবা দেই এবং সেটা পেয়ে মায়েরা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা যখন হাসিমুখে বাড়ি যায় ও আমাদের জন্য দোয়া করে তখনই কিন্তু আমরা আমাদের অর্জনের স্বীকৃতি পেয়ে যাই। তারপরও আমি যে স্বীকৃতি পেয়েছি, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি সত্যি আনন্দিত। আমি এতদিন ধরে মিডওয়াইফ হিসেবে যে কাজগুলো করে আসছি, এই স্বীকৃতি আমার জন্য একটি অনুপ্রেরণা যাতে সামনে আরও ভালো কাজ করতে পারি। আমিসহ বাংলাদেশের আরও যারা মিডওয়াইফ আছেন, তারা সবাই মিলে যাতে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে পারি এবং বাংলাদেশের যেসব গর্ভবতী নারীর মানসম্পন্ন ধাত্রী সেবা প্রয়োজন, তাদের যেন আমরা সেই সেবাটি পৌঁছাতে পারি।'


 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির