(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড এবং তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৭ আগস্টের ঘটনা।)
১৯৭২ সালের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের পর বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে অবস্থান করছিলেন তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর কাছে টেলিফোন করেছিলেন। ২৭ আগস্ট অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে এ কথা জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে জানান, ভুট্টোকে এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনও বৈঠকে হতে পারে না। সম্প্রতি রেডিও পাকিস্তানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভুট্টো জানিয়েছিলেন যে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে ছিলেন তখন তার সঙ্গে ফোনে আলাপ করছিলেন। নজরুল ইসলামের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ খাদ্য পরিস্থিতি জানার জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিপিআই পরিবেশিত খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু ভালো হয়ে উঠছেন
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অস্ত্রোপচারের জায়গায় যে রস জমে ছিল তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলাম স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক বুলেটিনে ঘোষণা করেন, বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো।
স্বাধীনতা বানচালের চেষ্টা হচ্ছে
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এতদিন চীন এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার মানুষের সঙ্গে তার যে বিপ্লবী সংহতির দাবি করে এসেছে তা অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বুলি মাত্র। জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন লাভের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করে চীন তার এই দাবির অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রকাশ করেছে। ভেটো প্রদান বিষয়ে সাংবাদিকদের মন্তব্য প্রকাশের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি স্থাপনের সকল প্রগতিশীল প্রচেষ্টার রুদ্ধ করে উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে চায় চীন।
চীনের উদ্দেশ্য উত্তেজনা জিইয়ে রাখা
ভারতীয় উপমহাদেশে যদি পাকিস্তান শান্তি চায় তাহলে তার সীমানা ব্যাখ্যা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ। ইরাক যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে কলকাতায় গিয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চীনা ভেটো পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সীমানার এক ইঞ্চি পরিমাণ জমির ওপর তার দাবি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বাস্তব সত্য এবং বিশ্বের এক বিপুল সংখ্যক দেশ একে স্বীকার করে নিয়েছে। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান- এই সত্যের ভিত্তিতে সিমলায় ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এটাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
রেকর্ড সংখ্যক রেশন কার্ড
ঢাকা শহরে সাড়ে ১৯ লাখ রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ১৯৭২-এর এই দিন পর্যন্ত রোজ আরও ৪শ’ করে নতুন আবেদনপত্র জমা পড়ছে। রেশন কার্ড সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন ভোর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের ভিড় লেগে আছে। চালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রেশন কার্ড সংগ্রহের এই ভিড় অত্যধিক বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের হিসেবে ১৯৭২ সালের নভেম্বরে রেশন কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৬০ হাজার। স্বাধীনতার পর সেই সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু আবার বাড়তে শুরু করে। মে মাসে কার্ডের সংখ্যা ১৮ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আগস্টে তা ১৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৫-তে এসে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভুয়া নাম দিয়ে রেশন কার্ড সংগ্রহের ফলে রেশন কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।