সদ্য স্বাধীন একটি দেশ পরিচালনায় শাসনতন্ত্রের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মাত্র ৯ মাসে তা প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় গণপরিষদের অধিবেশন বসবে বলে আশা করা হয়। ওই সময় খসড়া শাসনতন্ত্র বিবেচনার জন্য গণপরিষদে পেশ করা হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ১৯৭২ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গণপরিষদের বৈঠক বসা অবশ্য নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুর দেশে প্রত্যাবর্তনের ওপর। লন্ডনে অস্ত্রোপচারের পর বঙ্গবন্ধু সেসময় জেনেভায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শাসনতন্ত্র কমিটি বর্তমানে শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দিচ্ছেন এবং বিলটিকে বাংলায় তৈরি করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। গণভবন সূত্রের বরাত দিয়ে বিপিআই এ খবর দেয়। জেনেভায় স্বাস্থ্য উদ্ধারে অবকাশযাপনরত বঙ্গবন্ধু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। খবরে আরও জানানো হয়, তিনি দেশের প্রতিদিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
কী থাকছে তার আভাস
মূল শাসনতন্ত্রটি বাংলা ভাষায় লেখা হবে। খসড়া শাসনতন্ত্রে তিন সদস্যের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিধান থাকবে। নতুন শাসনতন্ত্র বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করা হবে। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পরিমাণ স্বাধীনতা থাকবে। ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে কোনও ধারা সম্পর্কে জটিলতা দেখা দিলে দেশের সুপ্রিম কোর্ট সে সম্পর্কে বিধান দেবে। শাসনতন্ত্র বিলে সম্ভবত ১৮ বছরের যে কোনও ব্যক্তিকে ভোটার এবং পরিষদের সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচনার বিধান থাকবে বলেও আগাম প্রতিবেদনে বলা হয়।
ছোট দেশগুলোর স্বার্থে ভেটো বাতিল হওয়া উচিত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ ইরাকে সরকারি সফরে পৌঁছালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইরাকের প্রশংসা করেন। ইরাক-বাংলাদেশে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বন্ধন আবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুর্তজা আল হাদী আবদুল বাকী তাকে অভ্যর্থনা জানান। খবরে বলা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ জাতিসংঘের ভেটো ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় ছোট ছোট দেশগুলো বিশ্ব সংস্থায় কোনও ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে না বলেও উল্লেখ করেন।
দাবি দিবস পালন
১৯৭২ সালে যখন কিনা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানো যাচ্ছিলো না তখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানো বন্ধের দাবিতে দিবস পালিত হয়। ঢাকার মহিলাদের দাবি দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে খাদ্য ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অবিলম্বে হ্রাস করার দাবি জানানো হয়। আওয়ামী লীগ মহিলা শাখা, মহিলা পরিষদ ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতি যৌথভাবে দাবি দিবস পালন করে। বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে সমাবেশে ভাষণ দান করেন আওয়ামী লীগের মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বেগম সাজেদা চৌধুরী, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বেগম, অন্যতম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী বদরুন্নেসা আহমেদসহ অন্যান্যরা। মহিলা সমাবেশে মহিলা আওয়ামী লীগের মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদিকা সাজেদা চৌধুরী বক্তৃতায় বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেছি। ঠিক তেমনি করেই দেশের কালোবাজারি মুনাফাখোর ও কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ আমলা কর্মচারীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে পারব। এদিকে এইদিন সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে দেশের বর্তমান খাদ্য সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।