হত্যাকারী পাক যুদ্ধাপরাধীদর বিচার করতে হবে বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জুরিস্টরা। ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জুরিরা অভিমত প্রকাশ করেন যে, যেহেতু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, কাজেই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অপরাধের বিচার করে শাস্তি দিতে হবে। ইতালির মিলানে পাঁচ দিনব্যাপী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তারা এই মত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুই জন প্রবীণ আইনজীবী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কে এই আলোচনায় যুদ্ধাপরাধ,গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ আলোচ্য সূচিতে ছিল। আলোচনাকারীদের মধ্যে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আন্তর্জাতিক আইনে অন্যান্য অপরাধও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হয়।
জাতিসংঘের সদস্যপদ পাবে বাংলাদেশ
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিক বলেছেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ভেটো দেওয়া হয়েছে, সেটা একটি সাময়িক ব্যাপার এবং এরকম পরিস্থিতি দীর্ঘদিন বজায় রাখা যায় না।’ বাংলাদেশ সফর শেষে তিনি এসব কথা সাংবাকিদের সঙ্গে শেয়ার করেন বলে এনা ও বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। আদম মালিক ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে তার সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের কতগুলো সমস্যা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়।’ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধা করতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আহত যুদ্ধাপরাধীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
অসুস্থ ও আহত যুদ্ধাপরধীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর অসম্মতির খবর ভিত্তিহীন বলে জোরালোভাবে জানানো হয়। ভারতে অবস্থানরত অসুস্থ ও আহত অর্ধশত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাকচ করে দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে জেনেভায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ মহলে, সেটিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেন। ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদদাতা নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো এক খবরে এ অভিযোগ করেছিলেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে জানিয়েছিলেন যে, আহত এবং অসুস্থ বন্দিদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তার কোনও আপত্তি নেই। অথচ ঠিক বিপরীত খবর প্রকাশ করাকে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়।
একজনও ভারতীয় সৈন্য নেই
বাংলাদেশ সরকার দেশের মাটিতে ভারতীয় সৈন্যের অস্তিত্বের খবর সরাসরি ও দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করেছে। ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রকাশিত এক সরকারি প্রেসনোটে ঘোষণা করা হয় যে, বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের কাল্পনিক অস্তিত্ব সম্পর্কে একশ্রেণির পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সৈন্যের অস্তিত্বের এই অপপ্রচারকে সরকারি প্রেসনোটে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে অবহিত করা হয়। প্রেসনোটে বলা হয়, এ খবর শুধু যে ভিত্তিহীন ও ডাহা মিথ্যে তাই নয়, বরং ঘরে-বাইরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে কতিপয় বিদেশি শক্তির ইঙ্গিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই অপপ্রচার রটনা করা হচ্ছে। প্রেসনোটে বলা হয়, দেশে বর্তমানে সংবাদপত্রের নজিরবিহীন অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। তার সুযোগের অপব্যবহার করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব নসাৎ করতে ও সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টায় এধরনের মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে।