২২০ দিন পর আগামী ১ নভেম্বর সীমিত পরিসরে খুলবে জাতীয় জাদুঘর। করোনার কারণে ২৬ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকলেও এসময় দাপ্তরিক কাজ অব্যাহত ছিল জাদুঘরে। গ্যালারি বন্ধ থাকায় নিরাপত্তা কর্মীরা ছিলেন কর্মহীন। তারা বলছেন, জাদুঘর খুললে আবারও কর্মচঞ্চলতা ফিরবে। তবে জাদুঘরে প্রবেশের জন্র আগের মতো টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। অনলাইনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্লোরে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। জাদুঘরের প্রধান ফটকে বসানো হয়েছে দু’টি সংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল। নিচ তলায় তৈরি করা হচ্ছে কাঠের নাম ফলক। এছাড়া প্রতিটি গ্যালারির নিরপত্তা কর্মীদের তাদের গ্যালারি পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত দেখা গেছে।
৩৬ বছর ধরে জাদুঘরে কাজ করেন মো. হাসিবুর। তিনি বলেন, ‘জাদুঘরের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় কখনও এটি বন্ধ ছিল না। লোকজন থাকলেই আমাদের ভালো লাগে। একা বসে থাকলে আমাদের ভালো লাগে না।’
একটি গ্যালারির নিরাপত্তা কর্মী শান্তি মোহন চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় লোকজনের সঙ্গে থাকতে থাকতে হঠাৎ একা থাকা খারাপ লাগে। এখানে নানা ধরেনের মানুষ আসতো ও বিভিন্ন কিছু জানতেও চাইতো। সেসময় তাদের সঙ্গে কথা বলতে ও উত্তর দিতে ভালোও লাগতো। শুনলাম ১ তারিখ থেকে জাদুঘর খুলবে। নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি এখন বিশেষভাবে তাদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে জাদুঘর।’
১ নভেম্বর থেকে খুললেও জাদুঘরে প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকবে সীমিত সংখ্যক মানুষের জন্য। আগে যেখানে দিনে ৩-৪ হাজার মানুষ পরিদর্শন করতেন, সেখানে এখন পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন মাত্র ৫০০-৮০০ জন। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য গেটে টিকিটের ব্যবস্থা থাকবে না। টিকিট কাটতে হবে অনলাইনে। সেই টিকিটের ডাউনলোড কপি বা প্রিন্ট কপি বা টিকিট নম্বর গেটে দেখানো সাপেক্ষে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা এমনটাই জানিয়েছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। আরও নিদের্শনা আছে, জাদুঘরে প্রবেশের জন্য প্রতিটি দর্শনার্থীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকে জাতীয় জাদুঘর রি-ওপেনিং হবে। সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর জন্য এটা ওপেন করবো। আমরা চাচ্ছি সকালের শিফটে ২০০ এবং বিকালে শিফটে ৩০০ জনের মতো যেন পরিদর্শন করতে পারেন। গেটে কোনও টিকিট বিক্রি করবো না আমরা। টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। আমাদের ওয়েবসাইটে টিকেট বাটন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ক্লিক করে দর্শনার্থীরা টিকিট কাটতে পারবে। দর্শনার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানে কিনা সে বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য প্রতিটি ফ্লোরের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার দর্শক এখানে আসতো। এছাড়া চারটি হল রুমও ভাড়া হতো। এখান থেকে ভালো রকমের একটা পয়সা আসতো জাদুঘরে। দীর্ঘ সময় এটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে জাদুঘর। আর অবশ্যই এটা জাদুঘরের লস হয়েছে।’
যারা অনলাইন ব্যবহার করতে পারে না, তারা কীভাবে টিকিট কাটবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগেই বলেছি সীমিত পরিসরে একটি খোলা হচ্ছে। তাই সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকছে না। অবস্থার উন্নতি হলে আমরা একটা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব আরও দর্শনার্থী একসঙ্গে প্রবেশ করতে দিতে পারবো কিনা এবং আগের টিকিটিং প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারবো কিনা।’
অনলাইনে টিকিট কাটবেন যেভাবে
অনলাইনে টিকিট কাটার জন্য প্রথমেই যেতে হবে (http://nationalmuseumticket.gov.bd/) এই লিংকে। সেখান থেকে Buy Ticket ডায়লগ বক্সে যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর Purchase eTicket অপশনে ক্লিক করে জাদুঘরে ভ্রমণের তারিখ, টিকিট সংখ্যা লিখে Add বাটনে ক্লিক করতে হবে। একের অধিক টিকেট কিনতে Add More Ticket বাটনে ক্লিক করা লাগবে। Make Payment বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করে Print Ticket অপশনে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। জাদুঘরে প্রবেশের সময় প্রথম গেট সংলগ্ন ই-টিকিট কাউন্টারে প্রিন্ট কপিটি প্রদর্শন ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।
জাদুঘরের প্রবেশ ফি
জাদুঘরে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা এবং অন্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।