(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২ নভেম্বরের ঘটনা।)
যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বহু সংখ্যক মামলার তদন্ত শেষ করেছে। এসব মামলার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় অফিসারদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাও রয়েছে বলে তদন্ত সংস্থার মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান। মাসব্যাপী ত্রাসের রাজত্বকালে বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও জানানো হয়।
মুখপাত্র জানান, মাস কয়েক আগে তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করে। জনসাধারণের কাছ থেকে সংস্থা অসংখ্য অভিযোগ নিয়েছে। সংস্থা এখন দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর লোকদের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত চালাচ্ছে।
অভিযোগগুলো কী ধরনের তা জিজ্ঞেস করা হলে মুখপাত্র জানান, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন, লুট, শহর, হাট-বাজার কলেজের ব্যাপক ধ্বংস সাধন এবং বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো। মুখপাত্র আরও জানান, জনসাধারণের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের ফলে এমন সব ভয়াবহ তথ্য জানা গেছে যেগুলোর অনেকগুলোরই কোনও যুক্তি নেই। মুখপাত্র বিশেষভাবে প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের ভয়াবহ চিত্রটি তুলে ধরেন। অনেক পরিবার নারী ধর্ষণ ও অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের জন্য সরকার পদস্থ আইনজীবী ও পুলিশ কর্মচারীদের নিয়ে তদন্ত সংস্থা গঠন করেছে। তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে যুদ্ধের ৯ মাসব্যাপী ত্রাসের রাজত্বকালে বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত সংস্থা এই তথ্য প্রকাশ করে। পাকিস্তানের সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তের জন্য সরকার এজেন্ট নিয়োগ করেছে। এজেন্সি তথ্যানুসন্ধানে নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের পাশবিক আচরণ ঘটনার বিবরণ প্রকাশ পাচ্ছিল। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের যৌন লালসা চরিতার্থ নারী নির্যাতনের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। তাদের বর্বর ও পাশবিক নিপীড়নে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারী নিঃস্ব ও বিধবা হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রামাণ্য দলিল
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও সাংস্কৃতিক বিভাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য দলিল প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সরদার আমজাদ হোসেন ও সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্পাদক মোস্তফা সারোয়ার ১৯৭২ সালের ২ নভেম্বর এক যুক্ত বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রামাণ্য দলিল মুক্তিযুদ্ধে নিহত কর্মীদের পাসপোর্ট সাইজ ছবি, আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আরও সাতাশটি অনুচ্ছেদ গৃহীত
গণপরিষদে ১৫টি সংশোধনীসহ আরও ২৭ টি অনুচ্ছেদ গৃহীত হয়েছে। ফলে তিন দিনের বৈঠকে ৬৯টি অনুচ্ছেদ গৃহীত হয়। বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে বাতিল হয়ে যায়। এরমধ্যে দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৬টি এবং নির্দলীয় সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা দুটি এবং আব্দুল আজিজ চৌধুরী ৩টি সংশোধনী দেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চার-পাঁচটি সংশোধনীর আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। বিকালের বৈঠকে সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী পেশ করার পর এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যেকোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর উক্ত ব্যক্তি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা বহিষ্কার হন তাহলে তিনি সংসদ সদস্যপদ হারাবেন এবং তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। এ সম্পর্কে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে সংশোধনী এনেছেন তাতে বলা হয় যে, উক্ত সদস্য যদি দল পরিত্যাগ করেন তাহলে বিধি অনুযায়ী তাঁর আসন শূন্য হবে এটি পরিষদে বাতিল হয়ে যায়।
নয়া যুব সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত
সারা বাংলাদেশের তরুণ সমাজবাদীরা আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। ২ নভেম্বর শেষ হওয়া দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলনে দেশের বর্তমান সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং একটি কার্যকর যুব সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। একজন মুখপাত্র একথা জানান। স্থানীয় কারিগরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের টানা তিনটি অধিবেশন চলে এবং ২৭ জন যুবনেতা এতে ভাষণ দেন। মুখপাত্র বলেন, সম্মেলনে একটিমাত্র প্রস্তাব গৃহীত হয় যে প্রাক্তন ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি প্রস্তাবিত সংস্থার নাম, সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।