X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

অপরাধী না হয়েও ৬ শিশু সংশোধনকেন্দ্রে !

উদিসা ইসলাম
২৪ জানুয়ারি ২০১৬, ২০:২১আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৬, ০১:১৩

মজার ইশকুলের এই ৬ শিশু মুক্ত হতে চায়

অপরাধী না হওয়ার পরেও রাজধানীর বনশ্রীতে অবস্থিত অদম্য বাংলাদেশের শেল্টারহোম থেকে ৬ শিশুকে উঠিয়ে নিয়ে  রাখা হয়েছে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে। কিন্তু, সেখানে চরম অস্বস্তি ও উদ্বেগের মধ্যে দিন পার করছে এসব শিশু। বিভিন্ন মামলার কিশোর আসামিদের সঙ্গে একত্রে থাকতে হওয়ায় ভয় থেকে এই অস্বস্তি ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে নিরাপরাধ ৬ শিশুর মধ্যে।

খোদ কিশোর সংশোধনকেন্দ্রের কর্মকর্তারাই বলছেন, সেখানে সুস্থ স্বাভাবিক শিশুকে রাখার মতো উপযোগী জায়গা নেই। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এখানকার ৯৫ ভাগ শিশু বিভিন্ন মামলায় চিহ্নিত অপরাধী।

আর এই শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সেখানে থাকতে চায় না। তারা আবারও নতুন জামা পরে ঘুরতে বের হবে আরিফ আর জাকিয়াদের সঙ্গে ।

কমলাপুর এর ১০৫ জন পথশিশু পেলো লাল সবুজ জ্যাকেট

বনশ্রীতে অদম্য বাংলাদেশের শেল্টার হোমে যে শিশুরা ছিল তাদের মধ্যে একজন রফিক। পুলিশের মাধ্যমে থানা ঘুরে এই শিশুদের জায়গা হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে। তবে তাদের ভাইয়া আপুরা নির্দোষ প্রমাণ হয়ে যেদিন জেল থেকে বের হলো সে বার্তা ঠিকই পৌঁছে গেছে তাদের কানে। আর তখন থেকেই তাদের অপেক্ষা, কখন তারা ভাইয়াদের কাছে যাবে, আবার কখন তারা বনশ্রীর শেল্টারহোম বায়ান্নোতে কম্পিউটার শিখবে।

গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর রামপুরার একটি আবাসিক ভবন থেকে শিশু পাচারকারী সন্দেহে চারজনকে আটক করে পুলিশ। অথচ আটক হওয়া এই তরুণ-তরুণীরাই হচ্ছেন অদম্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তা। এরা হচ্ছেন আরিফুর, জাকিয়া, ফিরোজ ও হাসিবুল। রাজধানীতে পাঁচ হাজার পথশিশুর পুনর্বাসন ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন তারা। কিন্তু স্থানীয়দের ভুল অভিযোগের ভিত্তিতে শিশু পাচারকারী হিসেবে সন্দেহ করা হয় তাদের। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সত্যিটা তাই আর চাপা থাকেনি। পরবর্তীতে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস ঠিকই নজরে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও তারা নিজেদের কাজে মনোযোগী হন। কিন্তু তাদের আটক করার সময়ে যে ১০টি শিশুকে উদ্ধারের নামে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো পুলিশ—তাদের মধ্যে ৪ জনকে অভিভাবকের জিম্মায় সোপর্দ করা হলেও এখনও ৬টি শিশু আছে টঙ্গীর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে যদিও তাদের কোনও অপরাধ নেই।

পথশিশু বিথী আর লাবনীর সঙ্গে মজার ইশকুলের বই উৎসবে আরিফ

কথা হয় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে থাকা রফিকের সঙ্গে। গুছিয়ে কথা বলতে পারে রফিক। সে জানায়,‘আমাদের কেউই ভালো নাই। আমরাতো পড়তাম, খেলতাম, নতুন জামা পড়ে ঘুরতে যেতাম, কত বড় বড় ভাইয়ারা আসতো, আমাদের জন্য খাবার রান্না করে আনতো। এতো আদরতো আমরা কোনওদিন পাইনি। আমরা আবার সেখানে ফিরতে চাই। দোষ না করেও কেন এখানে বন্দি জীবন কাটাবো?’

টঙ্গীর কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আদালতের মাধ্যমে ওই শিশুদের আনা হয়েছিলো। সত্যি বলতে কেন্দ্রে যেসব শিশুকে পাঠানো হয় তাদের ৯৫ ভাগই কোনও না কোনও অপরাধ বা মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখানে আসে। তাদের আচার-আচরণের সঙ্গে এই শিশুদের আচরণের আকাশ পাতাল পার্থক্য।

অদম্য ফাউন্ডেশনের সদস্য সংখ্যা এখন ৪০০। তাদের মধ্যে ২০০ জন সরাসরি শিশুদের সেবায় নিয়োজিত। 

আরিয়ান আরিফ কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমেই তাদের কারণে ধরা পড়া এসব শিশু কোথায় কেমন আছেন তার খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। আর বাইরে যারা তাদের অপেক্ষায়, স্কুল খোলার অপেক্ষায় ছিল তাদের সঙ্গে কাজে নেমে পড়েন। এরই মধ্যে শীতকালীন পোশাক বিতরণ, নতুন বছরের বই বিতরণের মতো কাজগুলো আরিফ জাকিয়ারা করেছে। আরিফ জানান, ধরা পড়া শিশুদের মধ্যে মান্না, রাসেল, মোবারক, স্বপন এখন বাহিরে। গত শুক্রবার আরিফদের বন্ধু শাকিল সংশোধন কেন্দ্রে গিয়ে রফিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওই পরিবেশে তারা থাকতে চায় না বলে আমাকে জানিয়েছে।

তাহলে কী করবেন জানতে চাইলে আরিয়ান বলেন, আইনি লড়াই করে ওদের বের করে আনবো সংশোধনকেন্দ্র থেকে। ঢাকায় যাদের শেল্টার আছে আপাতত তাদের কাছে রাখব।আর মানিকগঞ্জে স্থায়ী শেল্টার হোমটা দ্রুত বানানোর চেষ্টা করবো।

৪. অদম্য বাংলাদেশ মানিকগঞ্জে এই আদলে তৈরি করতে চায় শেল্টার হোম

গত সেপ্টেম্বরে শিশু উদ্ধারের নামে অদম্য বাংলাদেশের এই শিশুদের আটক করার পর তাদের একজন বাদে কারোর মুখ থেকেই জাকিয়া বা আরিফের নামে একটি কটু কথা বের করা যায়নি। তারা ‘উদ্ধার’ হওয়ার পর বলেছে, এখন পড়বো কি করে? বড় হব কি করে? তারা বারবারই বলছিল, তারা মজার ইশকুলেই ভালো ছিল। অদম্য বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আমরা দ্রুত আমাদের মানিকগেঞ্জের শেল্টারহোমটা বানিয়ে আইনগতভাবে যা যা করণীয় করব। কিন্তু সবার আগে ওই অপরাধীদের সংশোধনকেন্দ্র থেকে আমাদের ৬ শিশুকে বের করে আনা জরুরি।

পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে নেমে গতবছর সেপ্টেম্বরে শিশু পাচারকারী সন্দেহে আটক আরিয়ান আরিফসহ চার স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাদের রিমান্ড হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক না হওয়ায় ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর আদালতের বিচারক মো. ইউসুফ হোসেনের আদালত তাদের জামিন দেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অদম্য বাংলাদেশ পাচারের উদ্দেশ্যে ওই শিশুদের আটকে রাখেনি বলে তদন্তে উঠে এসেছে।’

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আইভীকে গ্রেফতার করে নেওয়ার পথে গাড়িবহরে হামলা, সাংবাদিকসহ ২৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আইভীকে গ্রেফতার করে নেওয়ার পথে গাড়িবহরে হামলা, সাংবাদিকসহ ২৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা কেন ভেস্তে গিয়েছিল?
২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা কেন ভেস্তে গিয়েছিল?
ব্যাটারিচালিত রিকশার উৎপাদন বন্ধ: ডিএনসিসি প্রশাসক
ব্যাটারিচালিত রিকশার উৎপাদন বন্ধ: ডিএনসিসি প্রশাসক
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি