X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে বিএনপি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নেয়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ মার্চ ২০১৬, ১০:২৪আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৬, ১১:৫৭

বিএনপি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ও কাজী রকিবউদ্দীন কমিশনের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না,সেটি প্রমাণ করতেই স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা হেরে গেলেও পৌর নির্বাচনে ২২জন প্রার্থী জিতে। আর চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৩৪জন দলীয় প্রার্থী জেতার খবর মিলেছে। দলটি মনে করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। এই বিষয়টি হাতে-কলমে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক মহলকে দেখানো উচিৎ। এতে করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে কোনও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে,বিএনপির এমন দাবি আরও গ্রহণযোগ্য হবে। বিএনপি নেতারা এ বিষয়টি এখন প্রকাশ্যেও বলছেন।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন,এই নির্বাচন কমিশন যে সরকারের আজ্ঞাবহ এবং নির্বাচন যে একটা তামাশা সেটা দেখাতেই আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। জনগণও এই তামাশা দেখেছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা এই নির্বাচনে থাকবো।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন,গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির সামনে বিকল্প কোনও পথ নেই। বিএনপি কোনও বিপ্লবী দল নয়, গণতান্ত্রিক দল। সে কারণে ইউপিসহ সব নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এবং নিচ্ছে।

 পৌরসভায়বিএনপিরবেহালদশা

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছিলেন ২২টিতে। ওই নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপি ফল প্রত্যখ্যান করে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হল, যাতে সংসদ নির্বাচনের মতোই মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।  

দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করার সাত বছর পর নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের লড়াই নিয়ে দেশবাসীর মধ্যেও আগ্রহ ছিল এই পৌর নির্বাচন ঘিরে। বাংলাদেশের মোট ভোটারের মাত্র ৭ শতাংশের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে থাকলেও সবগুলো জেলায় ভোট হওয়ায় তা মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের তৎপরতায়।

সন্ধ্যার দিকে ভোট গণনায় যখন পরাজয়ের আভাস পাওয়া যায়, তখন দল ও জোটের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন,২০০টি পৌরসভায় কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনরা নির্বিচারে সিল মেরেছে ব্যালটে। ‘সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমারা যে আশঙ্কা করেছিলাম, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’

পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কারচুপির অভিযোগ করলেও সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট হয়েছিলো ওই নির্বাচনে। ২০১১ সালে চার ধাপের পৌর ভোটে বাক্সে পড়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময় শামসুল হুদা কমিশনের নির্বাচনে ২৫৪ পৌরসভায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মেয়র পদে সমান সমান অবস্থানে ছিল।


কিন্তু দলীয়ভাবে প্রথম মেয়র পদে ২৩৩ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১৭৮টি ও বিএনপি পেয়েছে মাত্র ২২টি। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে চট্টগ্রাম জেলার ১০টির একটিতেও জিতেনি বিএনপি। ২০১১ সালে বিএনপি দু’টিতে বিজয়ী হয়-রাউজান ও সাতকানিয়ায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতেও ভরাডুবি হয়েছে। ২০১১ সালে সেখানে বিএনপির ছিল জয়জয়কার। ঘরের মাঠ বগুড়ায় ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি ৯টির মধ্যে ৭টিতে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ছিল। ওই সময় আওয়ামী লীগ পায় মাত্র দুইটি মেয়র পদ। এবার আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ৫ পৌরসভায়। বিএনপি জয় পেয়েছে ৪টিতে। বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিল একাধিক স্থানে। সব পৌরসভায় একজন করে মেয়র,সংরক্ষিত ৭৩১টি ও সাধারণ কাউন্সিলরের ২ হাজার ১৯৩টি পদের এই নির্বাচনে অংশ নেন ১২ হাজার প্রার্থী। এর মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মুখোমুখি লড়াইয়ে ছিলেন।

তবে সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন দাবি করেন, সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, সরকার তো ঘরেই থাকতে দেয়নি। তাহলে কীভাবে নির্বাচনের কাজ করা যাবে।

ইউপিতেএগিয়েআওয়ামীলীগ, বিএনপিরঅভিযোগ

মঙ্গলবার দেশের ৭১২টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ৬৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ার কয়েকটি ইউপিতে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৫৫৯ এর প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আ’ লীগ: ৪৩৬, বিএনপি: ৩৪, জাতীয় পার্টি: ০৪, স্বতন্ত্র ৭৮ ও অন্যান্য ০৭ প্রার্থী ও স্থগিত ২৭ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার কারণে বিভিন্ন জেলায় বিএনপির ২৭ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত ৩৪ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দু’জন, জাতীয় পার্টির একজন এবং স্বতন্ত্র চার প্রার্থী রয়েছেন।

বরাবরের মতো এবারও বিএনপি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বুধবার দুপুরেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তুমুল সহিংসতা হয়েছে। সহিংসতায় ১২ জন নিহত ও ৫০০ জন আহত হয়েছেন। এসব জায়গায় প্রশাসন ছিল নীরব। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্ন আসে দেশে সরকার আছে কিনা? ’

দুইকারণেস্থানীয়নির্বাচনেঅংশনিচ্ছেবিএনপি

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে,বিগত বছরের শেষ দিকে পৌরসভা নির্বাচন, তার আগে তিন সিটি নির্বাচন এবং চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মূলত দুটি কারণে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। একটি হচ্ছে, ২০১৫ সালে নির্বাচনের দাবিতে তিন মাসব্যাপী অবরোধ-আন্দোলনের সময় থেকে কোণঠাসা ছিল নেতাকর্মীরা। কয়েক লাখ নেতাকর্মী ছিল মামলাজালে বন্দি। নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা এই অচলায়তন ভাঙতে পেরেছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও নেই, সেটি দেশি-বিদেশি সচেতন মহলে বারবার স্মরণ করাতে চায় বিএনপি।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন,সরকারের রোষানলে পড়ে নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে ঘুমাতে পারেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক। নেতাকর্মীরা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছে,এই জন্যই জাতীয় কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেছে।

সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন,পৌর নির্বাচনের সময় বিদেশিরা আমাদের বারবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, যে আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব কিনা, নাকি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করব। আমরা কিন্তু নির্বাচনে ছিলাম।

যদিও ৩১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন,তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারচুপি,ভোটডাকাতির কারণ দেখিয়ে বিএনপি সেই ফল মেনে নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেছেন,সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে দুপুরের দিকে আমরা সরে এসেছিলাম। কিন্তু পৌর নির্বাচনের আগে ঢাকাস্থ বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা আমাদের নির্বাচনে থাকা না থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হতে চেয়েছিলেন। আমরা কিন্তু সরে আসিনি।

প্রাইভেটাইজেশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান দাবি করেন,আমরা বারবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, এর কারণ তৃণমূল চাঙ্গা হচ্ছে, সক্রিয় হচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন, সেই দাবিও তরান্বিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল বলেন,বিএনপি প্রথম যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় তখন থেকেই এ কথা বলে আসছে যে,সহিংসতার মধ্যদিয়ে অযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তারা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়ে যাবেন। তারপরও বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এসব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। 

ফখরুল বলেন, নির্বাচনগুলোতে নেতাকর্মীরা আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা ত্রাসের সৃষ্টি করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ফলাফল ছিনিয়ে নিচ্ছে, সেখানেও সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।

/এসটিএস/ এমএসএম/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গণমাধ্যমের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: আরাফাত
গণমাধ্যমের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: আরাফাত
প্রাণহানি ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে: কাদের
প্রাণহানি ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে: কাদের
কেন্দ্রে ভোটার দেখি নাই: মঈন খান
কেন্দ্রে ভোটার দেখি নাই: মঈন খান
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন