X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে মহাপরিকল্পনার বাকি কাজ শেষ করতে নতুন প্রকল্প

বিশেষ প্রতিনিধি
২৫ মার্চ ২০১৬, ১২:১৯আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৬, ১২:৪৩


স্বাধীনতা-স্তম্ভ শাহবাগে শহীদ ​জিয়া শিশু পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে যে কেউ সরাসরি দেখতে পারবেন স্বাধীনতা স্তম্ভ গ্লাস টাওয়ার। এ জন্য শিশুপার্কের মাঝখান দিয়ে পায়ে হাঁটার ৬০ ফুট প্রশস্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হবে, যাতে মূল সড়ক থেকে দৃষ্টিসীমায় আসে আলোচিত ওই কাচের টাওয়ার।

এই টাওয়ারে নতুনভাবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো এবং পাশের জলাধারে ওয়াটার ড্যান্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিশু পার্কের নিচে ভূগর্ভে ৫০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সরিয়ে ফেলা হবে শাহবাগ থানাও।

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে নিবিড় সবুজে ঢাকা প্রায় ৬৭ একর আয়তনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এভাবেই অবকাঠামোর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দুই পর্বের কাজ শেষ হলেও উদ্যানটি এখনও পর্যন্ত সেভাবে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে​নি। এখন চলছে তৃতীয় পর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া।



 
এতদিন  যা  হয়েছেভবিষ্যতে  যা  হবে

অযত্ন- অবহেলায় মুছে যাচ্ছে ফলকের লেখাগুলো রেসকোর্স নামের এ ঐতিহাসিক ময়দানকে স্বাধীনতার পরপরই বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে বদলে ফেলা হয়েছিল। দিনে দিনে গাছগুলো বড় হয়ে নিবিড় সবুজের সমারোহে যান্ত্রিক নগরে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নানা রকমের স্থাপনায় সেই উদ্যানটিও এখন মৃত্যুপথযাত্রী।

ওই উদ্যানে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে, যার আওতায় শিশুপার্ক-সংলগ্ন উদ্যানের উত্তর প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে শিখা চিরন্তন ও ‘অ্যাপ্রোচ প্লাজা’, ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, অর্ধবৃত্তাকার জলাধার।

 এ ছাড়া একটি উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে উদ্যানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বাংলা একাডেমির সামনের অংশে। এখন এটি কার্যত ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

 আর দর্শকদের বসার জন্য গ্যালারি থাকায় সেটিকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে যৌনকর্মীরা। দিনের বেলায় জমে ওঠে তাসের জুয়া। বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়াড়িরা চলে আসে এ নিরাপদ স্থানে।

 এবার তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এ–সংক্রান্ত পাঁচটি খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনাসহ একটি খসড়া অনুমোদন করেছেন। যেটির আলোকে খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে।

মহাপরিকল্পনার শেষ পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনের ওভার পাসটি ভেঙে আন্ডার পাস নির্মাণ করা হবে।​ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের ফটকটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে জনসভার জন্য একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া উদ্যানে থাকবে বেশ কয়েকটি খাবার দোকান। বর্তমান হাজামজা পুকুরটি সংস্কার করে এবং এটিকে খননের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা আছে। নির্মাণ করা হবে মসজিদ।

তবে অক্ষুণ্ন থাকবে ছবির হাট, বইমেলার স্থান, ফুলের দোকান ও কালী মন্দির।   

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে নির্মিত ফলকের জীর্ণদশা

 

 

সরেজমিন  সোহরাওয়ার্দী  উদ্যান 

 সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফুচকা ও চটপটি বিক্রেতারা তাদের ঠেলাগাড়ির দোকান সাজিয়েছেন। ভাসমান যৌনকর্মীরাও ঘোরাফেরা করেন। বসছে জুয়ার আসর। আর গঞ্জিকাসেবীরা তো আছেনই। কিছু এলাকায় ঝুপড়ি বানিয়ে ভবঘুরেরা সংসার পেতেছেন।

 ফেরিওয়ালার তো অভাব নেই। উত্তর-পশ্চিমে বিকোচ্ছে নবীন শিল্পীদের চারুশিল্প। আর দক্ষিণ পাশে চলছে পূজা-অর্চনা। অভিজাত গলফ থেকে শুরু করে ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানা ক্রীড়ার অনুশীলন চলছে। অবশ্য মোটরসাইকেল ও গাড়ি ঢোকা কমেছে।

 সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এ স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ। ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’ নামে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে গণপূর্ত অধিদফতর।

 প্রথমে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৭ সালে। বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার বদল হওয়ায় প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের জুলাই থেকে। এ পর্যায়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৮১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ৩০ জুনে। সেই কাজ বেশ পরে শেষ হয়েছে। এখন চলছে তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর প্রস্তুতি।

 সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হলে এটি দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নকশা চূড়ান্ত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। তবে টাকার অঙ্ক এখনই বলা যাচ্ছে না। 

উদ্যানের ভেতরের পায়ে চলা পথ দিয়ে চলতে থাকলে দেখা যাবে, সারা মাঠে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ডাবের খোল, বিস্কুট-চিপসের প্যাকেট, বাঁশ-কাঠ-কাগজের টুকরা ও পলিথিন ব্যাগ। তরিতরকারির খোসা, ভাঙা ডিমের খোসা। স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশের জলাধারের পচা পানিতেই চলছে গোসল, কাপড়চোপড় ধোয়া। সম্প্রতি তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় জলাধারে বসানো পাথর ও পানি নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা বলা হয়।    ওই সভায় উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে মহাপরিকল্পনার অনুমোদিত নকশা

 

উদ্যানের দায়িত্বে তিন মন্ত্রণালয়

এই প্রকল্পের অর্থ কোন মন্ত্রণালয় থেকে আসবে এবং এটি কোন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প হবে, তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। তৃতীয় পর্যায়ের যে উন্নয়ন হবে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিন মন্ত্রণালয়ের যে কোনও একটিকে এই উদ্যান দেখভাল করা বা ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলে মত এসেছে।

এ ছাড়াও তৃতীয় পর্যায়ে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বড় ধরনের সম্পৃক্ততা। এই পর্যায়ে শিশু পার্কের ভেতর উন্নয়নকাজ হবে। পার্কটি রাখা হলেও এর রাইডগুলো প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখে এদিক–ওদিক করা হবে। শিশু পার্কটি বর্তমান স্থানে থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ওটাকে রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা সিটি করপোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,বর্তমানের শিশু পার্কটিকে আমরা আরও সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজাবো। অকেজো রাইডারগুলো সংস্কারসহ নতুন রাইডার যুক্ত করা হবে। পার্কের মধ্যদিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এবং পার্কের নীচে থাকবে ৫০০ গাড়ি পার্কিয়ের ব্যবস্থা। শিশুরা সহ সবাই পার্কের ভেতর দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে মূল স্থাপনাগুলোতে প্রবেশ করবেন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।

চারটি ফলকের চেহারা

এই উদ্যানে (সাবেক রেসকোর্স) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর এখানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল পাকিস্তানি ঘাতকেরা। কিন্তু ওই দুটি চিহ্ন সেভাবে সংরক্ষণ হয়নি। উদ্যানে ঢুকে এই দুটি জায়গা খুঁজে পেতে হাতড়ে বেড়াতে হয় নতুন প্রজন্ম ছাড়াও আগের প্রজন্মের অনেককেই।

শিশু পার্কের ভেতরে আছে ৭ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের দুটি ফলক, আবার পার্কের বাইরে উদ্যানের ভেতরেও আছে জরাজীর্ণ দুটি ফলক। অনেকেই এসব ফলক দেখে বিভ্রান্ত। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি স্থান চিহ্নিত করে সেখানে ফলক নির্মাণ করতে উচ্চ আদালতও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

উদ্যানের ভেতরে শিখা চিরন্তনের কাছে রয়েছে আরেকটি ফলক, যেটির নাম বিজয় স্তম্ভ। ১৯৯৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে এই ফলকটি উদ্বোধন করেন। ফলকটির জরাজীর্ণ অবস্থা, ঝাপসা লেখা। কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ফলকের ওপর বাজে কথা লেখা আছে।

উদ্যানের ভেতর স্থাপিত শহীদদের নামের তালিকারও জরাজীর্ণ অবস্থা। ভাসমান মানুষেরা এখানে রান্না বা জামাকাপড় শুকানো ও আবাসিক স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। শহীদদের নামগুলো ঝাপসা হয়ে গেছে।  

এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক