X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে ছাত্রশিবির, প্রহরী ছিলেন জামায়াত নেতারা!

সালমান তারেক শাকিল
২৬ মার্চ ২০১৬, ১৬:০২আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৬, ১৭:৫০

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় শিবিরের র‌্যালি যে সংগঠনটির প্রথম দুই সভাপতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং একজনের ফাঁসি নিশ্চিত হয়েছে, সেই ছাত্রশিবিরের দাবি—বাংলাদেশের স্বাধীনতা তারাই এনেছেন; সে স্বাধীনতা রাখবেন তারাই। শনিবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই দাবি সংবলিত স্লোগান দিয়ে সারাদেশে র‌্যালি বের করেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবির। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এই স্লোগানে র‌্যালি করেছে সংগঠনটি। পাশাপাশি শিবির নেতারা র‌্যালি করতে গিয়ে দাবি করেছেন, তারা  এই দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন। বলেছেন, ‘আমাদের সেই প্রিয় ইসলামী নেতৃবৃন্দকে আজ বিচারের নামে হত্যা করা হচ্ছে এবং কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে।’ বিষয়টিকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেয়াদবি হিসেবেই দেখছেন একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধারা। বলছেন, যে সংগঠনের প্রথম সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, দ্বিতীয় সভাপতির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, সেই সংগঠন স্বাধীনতা বিষয়ে র‌্যালি করার মানেই হচ্ছে বিষয়টিকে নিয়ে তামাশা করা। 

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে শিবিরের র‌্যালি এদিকে, স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন দলীয় অনুগত কয়েকজন ‘মু্ক্তিযোদ্ধা’কে সম্মাননা দিয়েছে শিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা। শুক্রবার রাজধানীর একটি ছোট্ট মিলনায়তনে গোপনে এ সম্মাননা  দেওয়া হয়। এতে ছাত্র শিবিরের সভাপতি আতিকুর রহমান অংশ নেন। তবে, অনুষ্ঠানে কয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তাদের পরিচয়, এ সব তথ্য গোপন রেখেছে শিবির। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র শিবির স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে  সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত, শাখা পর্যায়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান, সাধারণ জ্ঞান, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, এতিম ও পথ শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে খুলনায় শিবিরের র‌্যালি সারাদেশে র‌্যালি

লাল সবুজের জাতীয় পতাকা নিয়ে শনিবার সকালে রাজধানীতে শিবিরের মহানগরী উত্তর শাখার উদ্যোগে র‌্যালি  বের করা হয়। ঝটিকা এই র‌্যালিতে শিবিরের কয়েকশ’ নেতাকর্মী অংশ নেন।  

সকাল ৮টায় রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকা থেকে এই দৃষ্টিনন্দন বর্ণাঢ্য র‌্যালিটি শুরু হয় এবং নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ড গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

শাখা সভাপতি হাসান জারিফের পরিচালনায় র‌্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ খান।

র‌্যালিতে শিবির নেতারা বলেন,  ‘অবিলম্বে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ইসলামী আন্দোলনের সব নেতাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাদের কারারুদ্ধ রেখে কখনও স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ সম্ভব নয়।’

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে শিবিরের র‌্যালি ময়মনসিংহ মহানগরী ছাত্রশিবির শনিবার র‌্যালি করেছে। তাদের ব্যানারে ছিল, ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব’ শীর্ষক স্লোগান। খুলনা মহানগরী শাখার আয়োজিত র‌্যালির ব্যানারে ছিল,  ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখব, স্বপ্নীল স্বাধীনতা অন্তরে আঁকব’ স্লোগান। এছাড়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা র‌্যালি করেছে শিবির।

দলীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা

শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়ার কথা জানায় শিবির। তবে এই মুক্তিযোদ্ধারা কারা, তাদের নাম, ঠিকানাসহ কোনও তথ্যই প্রকাশ করেনি সংগঠনটি। প্রতি বছরই শিবির এ ধরনের সম্মাননা দেয়। জামায়াত ঘরানার কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগঠনের নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, ঢাকা মহানগরের সভাপতি হান্নান হোসেন, অর্থ সম্পাদক তাজিরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। ছাত্র শিবিরের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দরিদ্র ও অভাবীদের খুঁজে খুঁজে প্রতিবছর সম্মাননা ও নগদ অর্থ দেয় শিবির। তবে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না।

এটা ঔদ্ধত্য-মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেয়াদবিআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা

ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা র‌্যালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার বিষয়টিকে ঔদ্ধত্য ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেয়াদবি হিসেবেই দেখছেন একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধারা। বলছেন, যে সংগঠনের প্রথম সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, দ্বিতীয় সভাপতির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, সেই সংগঠন স্বাধীনতা বিষয়ে র‌্যালি করার মানেই হচ্ছে বিষয়টিকে নিয়ে তামাশা করা। তবে, ছাত্রশিবিরের এ ধরনের র‌্যালি বাধাহীনভাবে করার জন্যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করছেন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা। বলছেন, সরকার তাদের সুযোগ দেয় বলেই তারা ঔদ্ধত্য দেখায়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাশেম আলী। জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এই প্রভাবশালী সদস্য ছাত্র শিবিরের প্রথম সভাপতি। তিনি ১৯৭৭-১৯৭৮ সেশনে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। গত বছর ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যুবরণকারী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান শিবিরের ৭৮-৭৯ সেশনের সভাপতি ছিলেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে শিবিরের র‌্যালি সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাদের যাদের বিচার হচ্ছে তাদের ৭১-এর কার্যক্রম ও অপরাধ প্রমাণিত। যেকোনও দেশেই এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৭১-এ যে জঘন্য অপরাধ তারা করেছেন, সে বিষয়ে এখনও তারা যদি  ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু তারা ক্ষমা চাননি, উল্টো যারা ৭১-এর ছাত্রসংঘ, জামায়াতের যারা আল বদর বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন করেছেন, তাদের প্রহরী বলে, এবং তারা চলমান বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তখন তাদের এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে জাতি এবং পরবর্তী প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে। জাতির অবস্থানের বিপরীতে কেন তাদের এই সুযোগ করে দেওয়া হবে?

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈকত মল্লিক বলেন, শিবির এটা এ বছর শুধু করছে না। বছরের পর বছর ধরে এই রকম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে আসছে। যারা একাত্তরের বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন, তারা কিভাবে মিছিল করেন। এটার দায় সরকারের নিতে হবে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে কোন-কোন স্থানে র‌্যালি হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান। এরপর তিনি বলেন, পাগলে কী না বলে ছাগলে কী না খায়। তারা কী করেন, কী বলেন, এটা নিয়ে জাতির কোনও মাথাব্যাথা নেই।

এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, এটা করতে হবে মিনিস্ট্রি থেকে। আমাদের দেশে আইন কর্মকর্তার মামলা করার ক্ষমতা আছে। এর বাইরে কিছু না। হোম নিস্ট্রি চাইলে করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা শুনে রাখলাম, দেখি কী কা যায়।

এ বিষয়ে জানতে  বিএনপির কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নেতাকে প্রশ্ন করা হলে, তারা মন্তব্য করতে আগ্রহী নন বলে জানান।
/এপিএইচ/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
তীব্র গরমে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
তীব্র গরমে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
হিজবুল্লাহর ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
হিজবুল্লাহর ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
কমিটিতে পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমায় ফি নেওয়া যাবে না
কমিটিতে পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমায় ফি নেওয়া যাবে না
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ