X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরেক সুরাইয়া!

জাকিয়া আহমেদ
২৫ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:৩৭আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৬, ০৯:৫২

হাসপাতালে অসুস্থ সুরাইয়া কন্যা সন্তান বলে বাবা-মা দু’জনেরই ফেলে যাওয়া সেই নবজাতক মেয়েটি এখন হাসপাতালের সবার আপন। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, ওয়ার্ডবয় তো বটেই, ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীর স্বজনেরাও তাকে কোলে তুলে নিচ্ছে পরম মমতায়, আগলে রাখছে বুকে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০৫ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা গেল এমনটাই। শনিবার (২৩ এপ্রিল) তার একটি অপারেশন হয়েছে এবং সে এখন স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটে (নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-স্ক্যাবু) রয়েছে।
সুরাইয়ার মতোই আরেক সুরাইয়াকে পেয়েছি আমরা। বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে, তবে আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি, চিকিৎসকরা ওকে রক্ত দিয়েছেন। ওর জন্ম ১৫ এপ্রিল এখন মাত্র ১০ দিন বয়স ওর,এরই মধ্যে দুই-দুইটা অপারেশন হয়েছে, এখন আছে স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে। ওর জন্য দোয়া চাই সবার,শিশুটি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়, বলছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.কানিজ হাসিনা শিউলি। এসময় স্মৃতি রোমন্থন করেন মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার।বলেন, এ আমাদের আরেক সুরাইয়া,আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছি ওর জন্য।
ডা. কানিজ বলেন,এখন অনেকেই শিশুটিকে দত্তক পেতে যোগাযোগ করছেন আমাদের সঙ্গে, শিশুটিকে যারা চিকিৎসা, সেবা-যত্ন দিয়ে এ পর্যন্ত এনেছেন সেই চিকিৎসক-নার্সরাও অনেকে বলছেন শিশুটিকে তারা নিতে চান।কিন্তু আমি সবাইকে বলেছি,ও আগে সুস্থ হোক তারপর এসব ভাবা যাবে।
ডা. কানিজ বলেন,জন্মগতভাবেই দুটো নাড়ির মধ্যে (ক্ষুদ্রান্তে) কিছুটা অংশ তৈরি হয়নি।এটার একটা অপারেশন হলো,কিন্তু তার ষষ্ঠদিনে দেখা গেল সেলাই ছুটে গেছে। ছুটে যাওয়ার কারণও আছে, বয়স কম,শারীরিক অবস্থা খারাপ।এতো ছোট শিশুর জোড়া দেওয়াটা টেকে না বিশেষ করে যে জায়গাটায় ছিল অপারেশনটা।সেজন্যই গতকাল আবার অপারেশন হয়েছে। এখন আর জোড়া দেওয়া যাবে না, যেহেতু সেটা টিকবে না।সেজন্য আমাদের অন্য এক উপায়ে এর সমাধান করতে হয়েছে-এটা লাইফ সেভিং,এভাবে যদি সে টিকে যায় তাহলে এক থেকে দেড় মাস পরে আমরা বিকল্প পন্থা যেটি করেছি সেটি খুলে দিতে পারবো,তখন আর সমস্যা থাকবে না।তখন মুখে নল দিয়ে খাবার দেবার চেষ্টা করবো,তখন যদি কোনও সমস্যা না হয় মুখে খাবার দেব-এখন দেখা যাক।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতা টুকুর রহস্যজনক মৃত্যু

ডা. কানিজ বলেন,এরকম শিশুদের ইনফেকশন অনেক বেশি হয়,তাই আমরা চেয়েছি ওকে আইসোলেটেড রাখতে।প্রথমবার অপারেশনের সময় যেখানটাতে পেট কাটা হয়েছিল সেখানে ইনফেকশন হয়েছিল,তারপরতো জোড়াটা দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু সেটাও ছুটে গেছে।আর আমাদের এরকম একটি জায়গায় যেখানে একটি বেডে দু’তিনজন করে শিশু থাকে সেখানে ইনফেকশন হতেই পারে।এবারও ইনফেকশন হতে পারে ভেবে,সাবধানে থাকার জন্য স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে এসেছি। একইসঙ্গে যতোটুকু ওর উপযোগী উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক সে নিতে পারে সেটাও দিচ্ছি অর্থ্যাৎ এরকম একটা পাবলিক হাসপাতালে যতোটুকু প্রিকোরসন নেওয়া যায় সবটুকুই আমার নিচ্ছি।বাকিটা অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা।
ডা. কানিজ বলেন,১৫ এপ্রিল শিশুটির জন্ম হয় ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালেই।জন্মের পরদিনই তার বাবা আমাদের এখানে নিয়ে আসে পেটের সমস্যার জন্য।পরে এক্সরে করে দেখা গেল দুই নাড়ির মধ্যে (ক্ষুদ্রান্তে) তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তখন তাদের বলি,অপারেশন করতে হবে, ১৭ মে শিশুটির মাও আসে আমাদের কাছে।সে আরেকটি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। মা তখন বলেন,আমি আমার ওয়ার্ড থেকে একটু আসি।কিন্তু সেই যে তিনি গেলেন আর আসেননি,বাবা তারপর একদিন ছিলো। কিন্তু পরে আর আসেননি। যখন দেখলাম বাবা-মা কেউ আসছে না তখন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমানকে জানালাম।এখন শিশুটিকে অনেকে দত্তক নিতে চাচ্ছেন,প্রতিদিনই ফোন  পাচ্ছেন জানিয়ে ডা. কানিজ হাসিনা বলেন,যে অবস্থায় তাকে ফেলে গিয়েছিল বাবা-মা, সেখান থেকে আমাদের সব কর্মীরা যত্ন করেছে,তাদের মধ্যেই অনেকে নিতে চাচ্ছে ওকে।প্রথম থেকেই তারা যত্ন করে যাচ্ছেন। তা নাহলে এই পর্যন্ত তাকে আনা যেত না। ওর যা যা দরকার আমরা সব করেছি।এখন মানুষ জানছে বলে মানুষ নিতে চাচ্ছে।আমাদের একজন চিকিৎসক ওকে নিতে চাচ্ছেন এবং তার ইচ্ছা ওকে বড় করে ডাক্তার বানাবেন।  

আরও পড়তে পারেন: কমলো জ্বালানি তেলের দাম

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে রেখে বাবা-মা উধাও হয়ে যায় বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।এই দম্পতির এই শিশুটি তৃতীয় সন্তান। তাদের আগের দুটি সন্তানও মেয়ে।তৃতীয় সন্তান মেয়ে হওয়াতে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাকে তালাক দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এই ভয়ে প্রথমে মা এবং পরে বাবাও শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।

/এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি