বিভিন্ন কেন্দ্রে যেতেই কর্মীরা এগিয়ে এসে তাকে খুঁটিনাটি জানাচ্ছেন। তবে কখনও কখনও সেগুলোর মধ্যে অভিযোগের সুর থাকায় মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী তাদের বোঝাচ্ছেন,আমরা এরচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।এবার ব্যাজ পরতে নিষেধ করা হচ্ছে। গতবারের কথা ভাবো। ছিল কারও ব্যাজ? ছিল না। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সারাদিন তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।
নির্বাচনের দিন ঠিক সকাল সাড়ে আটটায় বাড়ির সামনে হাজির হয়ে সদর দরজা বন্ধ পাওয়া গেল।পাশে থাকা এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, আইভী আপার বাড়ি সবার জন্য উন্মুক্ত শুনেছি,এখন যে প্রধান দরজাতেই হোঁচট।দেড়ঘণ্টার মধ্যে নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে কয়কদফা কথা বলে জানা গেল, ‘মেয়র স্যার’ নিজেই কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে মানা করেছেন।ন’টার কিছু পরে তিনি বেরিয়ে আসলেন। দরজা খুলতেই সাংবাদিকদের অনুরোধ, ‘আপা গাড়ির গ্লাসটা একটু নামান।’ গ্লাস নামালেন এবং একটু ক্লান্ত স্বরে বললেন, ‘এখন আর কী ছবি, আমি আসছি, আসেন ভোটকেন্দ্রে’,বলেই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন মাজার জিয়ারতে।
ভোট দিয়ে বের হওয়ার ফাঁকে, তার সঙ্গে সারাদিন থেকে সাক্ষাতকার নেওয়ার আগ্রহের কথা জানাতে স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেন, ‘তাহলে কী আর করবেন। আমাকে ফলো করেন।’ কথাটা বলে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই এক বয়স্ক নারী তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘আল্লায় জিতাইবো।’ আরেকটু আগে যেতেই একজন পেছন থেকে বলে উঠলেন স্নেহের টোনে- আগায়া যাও।
জানতে চাইলাম,‘এত মানুষের ভালোবাসা,কেমন লাগে?’
‘আমার আর কী আছে। আমি সবাইকে চিনি, সবাই আমাকে চেনে।’ আমরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারি অবলীলায়। এরপর এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ছুটে চলা।কেন্দ্রে নামার সঙ্গে সঙ্গে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় কথা কাটাকাটি হয় সাংবাদিকদের। কোনোভাবেই আইভী আপার কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না, বা গাড়ি বহরের পেছন নিতেই তেড়ে আসে পুলিশ। পরের কেন্দ্রে ফাঁক পেয়ে জানতে চাইলাম, ‘আপনি জনপ্রিয় না জনবিচ্ছিন্ন?’ তার জবাব, ‘এর উত্তর আপনারা বলবেন। দেখেছেন কত কাছে যেতে পারি আমি। আমার কাছে তারা আসতে পারে। এসব দিনে নিরাপত্তার বিষয়টা খেয়ালে রাখতে হয়।’ তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, ‘সাংবাদিকদের কাজ করতে দিয়েন।’
বেলা একটার পর নানা জায়গা থেকে মহিলা ভোটারদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আসতে থাকলে চেহারায় উদ্বিগ্নতা ভর করলেও মুখে স্বীকার করেন না। তিনি বলেন, ‘না, এসব হয়ই। সাংবাদিকদের ভিড়ে আমারতো মুভমেন্টই বন্ধ করে দিতে হবে মনে হচ্ছে।’
এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই গাড়ি থামিয়ে গাড়ি বসেই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছেন। কী বলছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ঠাণ্ডা করছি। নানা ছোটখাটো অভিযোগ করছে। ওদের বলেছি, কতকিছুই করছি। এরচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ২০১১ সালে আমরা জিতেছি। নিয়ম মানো।’
ভোট আদৌ সুষ্ঠু হলো মনে করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আইভী বলেন, ‘নির্বাচন সত্যি সুষ্ঠু এবং ভীষণ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে হচ্ছে।কেন্দ্রগুলোতেও আমার সঙ্গে আপনারা ছিলেন। কে জিতলো- হারলো সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচনের ফলাফলটা মেনে নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেটা করবো আগেও বলেছি।যদিও ভোটারদের ওপর আমার কনফিডেন্স আছে।’
/ইউআই / এপিএইচ/