X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের ৬ বছর, কী প্রভাব পড়েছে সমাজে

মাহফুজ সাদি
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৫আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫০

বছরের প্রায় দিনই কোনও কোনও দিবস থাকে। কোনও কোনও দিন একাধিক দিবসও রয়েছে। আন্তর্জাতিকের পাশাপাশি জাতীয় অনেক দিবস রয়েছে এই তালিকায়। এত দিবসের ভিড়ে দেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনকে বেগবান করেত ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ পালনের দাবি ওঠে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট্র বিভাগের শিক্ষক থেকে শুরু করে গ্রন্থাগারিক পেশায় নিয়োজিতদের সংগঠনগুলো এই দাবি তোলে।

দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’।

১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ওই দিনটিকে নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদফতর নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছে, যা বিভাগীয়-জেলা-উপজেলা গণগ্রন্থাগার একযোগে বাস্তবায়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আয়োজনে দিবস পালন করা হয়।

জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি এবং মননশীল সমাজ গঠনে ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকা দৃঢ় করতে জাতীয় এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যে লক্ষ্যে গ্রন্থাগার দিবস পালিত হচ্ছে, সেটি কতটা অর্জিত হয়েছে?

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তাক গাউসুল হকের কাছে। একই প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির (ল্যাব) সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানকে।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। সরকার তাতে সায় দিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর সেভাবে পালন করা যায়নি। তারপরেও এই সমাজে গ্রন্থাগার দিবস ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে বলা যায়। বিশেষ একটি দিবস থাকায় মানুষ বুঝতে পারছে, তাদের গ্রন্থাগারে যাওয়া দরকার, বইপত্র পড়া দরকার। এ ক্ষেত্রে মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতনও হয়েছে।’

গ্রন্থাগারিক তৈরির এই কারিগরের মতে, ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম, সেটি সবাই বুঝতে পারছে। তবে একটি দিবসকেন্দ্রিক না থেকে সপ্তাহব্যাপী বা মাসব্যাপী নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলে আরও বেশি মানুষকে গ্রন্থাগার বা বইমুখী করা সম্ভব হতো। বিভাগীয় ও জেলা গণগ্রন্থাগারগুলো তাদের প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট গ্রন্থাগার অপরিহার্য। এক্ষেত্রে গ্রন্থাগারগুলো-ডিজিটাল করার বেলায় আইসিটি সুবিধার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ই-জার্নাল, ই-বুকসহ ই-রিসোর্সের অভাব রয়েছে। এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হতে হবে।’

অধ্যাপক কাজী মোস্তাক গাউসুল হক বলেন, ‘শুধু গ্রন্থাগারের জন্য একটি জাতীয় দিবসের প্রয়োজন ছিল। গত ৬ বছর ধরে দিবসটি পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অত্যন্ত চমৎকার এই উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এত দ্রুত সমাজের সর্বত্র এটার বিশাল প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে, সেটি আমরা আশা করতে পারি না। অনেক প্রভাব পড়েছে বা অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যাবে না।’

গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার ওপর বেশ কিছু বইয়ের এই লেখক মনে করেন, গত ৬ বছরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সরকারি সংস্থা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেকে দিবসটি পালন করছে। তবে আমরা যদি আরও বেশি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার মনস্ক হতে পারি, তাহলে পুরোপুরি প্রভাব পড়বে। সে জন্য সময় লাগবে।’

ল্যাব নেতা হামিদুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে বই পাঠ প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এতে সারা দেশের গ্রন্থাগারিকরা উজ্জ্বীবিত হন, সাধারণ মানুষ বই, গ্রন্থাগারমুখী হয়। তবে গ্রন্থাগারের উন্নয়নে এবং সাধারণ মানুষকে আরও বেশি গ্রন্থাগারমুখী করতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার।’

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর। এতে ‘স্মার্ট দেশ গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক মো. নাসিরউদ্দিন মুন্সী।

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। গ্রন্থাগার স্মার্ট করতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেখানে সব কার্যক্রম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হবে, গ্রন্থাগার সেবা গ্রহীতা ঘরে বসেই সব সেবা পাবে। সমাজের সবাইকে গ্রন্থাগার সেবা দিয়ে বৈষম্য দূর করে আনার মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিক গঠনে সাহায্য করবে।’

সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘লাইব্রেরি না থাকলে আমরা পূর্ব প্রজন্ম সম্পর্কে জানতে পারতাম না। স্মার্ট প্রযুক্তি না থাকলে ভবিষ্যত সম্পর্কেও চিন্তা করা যায় না। লাইব্রেরি এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিক ও স্মার্ট লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। বইয়ের জ্ঞান নিয়ে আমরা সূর্যের আলোর মতো আলোকিত হবো। নতুন প্রজন্ম এভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘নিজেকে স্মার্ট মনে করলে, চৌকষ মনে করলে বই পড়তে হবে। জ্ঞানমনস্ক আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারলেই জ্ঞানমনস্ক সমাজ তৈরি হবে। এটি লাইব্রেরির আধুনিক ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভব। আলোকিত মানুষ হতে অন্ধকার থেকে আলোর পথে যেতে হবে। এর জন্য গ্রন্থাগারে সময় দিতে হবে, পাঠাগার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তাহলে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে উঠবে।’

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
গ্রন্থাগার অধিদফতরের কাজে গতি আনতে কামাল চৌধুরীর আহ্বান
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসগণগ্রন্থাগারে গণফাটল, পাঠকের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক
উচ্চশিক্ষার রেফারেন্স বই চেয়ে চেয়ে আর কতদিন?
সর্বশেষ খবর
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
মালয়েশিয়ায় পুলিশ স্টেশনে হামলা, ২ কর্মকর্তা নিহত
মালয়েশিয়ায় পুলিশ স্টেশনে হামলা, ২ কর্মকর্তা নিহত
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি সই
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি সই
দেশের উন্নয়নের বিষয়টি বিএনপির সহ্য হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
দেশের উন্নয়নের বিষয়টি বিএনপির সহ্য হচ্ছে না: আইনমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক