X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি’র সন্তান মেঘের প্রশ্ন

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

রিয়াদ তালুকদার
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৭আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫৩

রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বহুতল একটি ভবন। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই এই ভবনে আসা-যাওয়া করছেন বিশিষ্টজন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ‘কালিন্দী অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আয়োজন করা হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির স্মরণে এক বিশেষ প্রদর্শনী। সেখানে থরে-থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সেগুলোই ঘুরে ঘুরে দেখছিল তাদের একমাত্র সন্তান মাহিন সরওয়ার মেঘ। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রক্তের মধ্যে বসে থাকা ছোট্ট সেই মেঘ এখন কৈশোর পার করছে। একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে সে। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মায়ের স্মৃতিও ভুলতে বসেছে সে, তবে সেই বিভীষিকাময় দুঃসহ স্মৃতি তাকে বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। বাবা-মায়ের এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় হতাশা জন্মাচ্ছে মেঘের। তার প্রশ্ন, ‘এ ঘটনার পেছনে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যে, এত দীর্ঘ সময় পরও তদন্তকারীরা কোনও কূল-কিনারা পাচ্ছে না।’

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির স্মরণে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রদর্শনীতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখার এক ফাঁকেই কথা হয় মেঘের সঙ্গে। কেন বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে— নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে এসব কথা বলছিল সে। আবার মুহূর্তেই সব সামলে নিয়ে রাষ্ট্র এবং সরকারের কাছে দাবিও তুলে ধরলো। মুখস্ত বুলির মতোই বলে গেলো, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয়। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের যেন বিচারের মুখোমুখি করা হয়।’

মেঘকে উদ্দেশ করে প্রদর্শনীতে আসা আজিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলছিলেন, ‘আমি জানি, তুমি কতটা স্ট্রং। ধৈর্য ধরো, শক্ত থাকো, দোয়া করো। ইনশাআল্লাহ, বিচারটি হবেই।’

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

সান্ত্বনা পেলেও তাকে আর ঠিক কতবার এই দাবি জানাতে হবে, সেটা জানা নেই এই কিশোরের। ২০১২ সালে সংগঠিত এই হত্যাকাণ্ডের পর সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার সেই আল্টিমেটাম শেষ হয়নি ১১ বছরেও। মাঝে কেটে গেছে ৯৬ হাজার ৩৬০ ঘণ্টারও বেশি সময়। এত সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা। কিন্তু এখনও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। সেই হতাশা ব্যক্ত হলো মেঘের কথাতেও। 

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে প্রদর্শনীটি। সাগর ও রুনির বাসায় ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় এবং হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন বেশ কয়েকজন শিল্পী। তারা নিজেদের মতো করে সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি শিল্পের ছোঁয়ায় তুলে ধরেছেন।

তিন রুমের বাসাটিতে বিভিন্ন রুমে তুলে ধরা হয়েছে সাগর, রুনি ও মেঘের সেই সময়কার বিভিন্ন চিত্র। হত্যাকাণ্ডের পর কি পরিস্থিতি ছিল, সে বিষয়টিও শিল্পের মাধ্যমে উঠিয়ে এনেছেন শিল্পীরা। এরই মধ্যে প্রদর্শনীতে সাংকেতিকভাবে স্থান পেয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে একের পর এক সময় পেছানোর আদেশও। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন শিল্পী ইমরান আহমেদ। এছাড়া সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার ‘ধামাচাপা পড়ছে’— শিল্পের মাধ্যমে এমন একটি বিষয় তুলে ধরেছেন শিল্পী ফাইজুল ইসলাম। 

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

প্রদর্শনীর আয়োজক মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাগর-রুনির ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে এই প্রদর্শনী আমরা আগেও করেছিলাম, মাঝখানে বন্ধ ছিল। আবার এই বছর চালু হয়েছে। আগামী বছর এই হত্যাকাণ্ডের একযুগ পূর্ণ হবে, আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এই প্রদর্শনী করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমরা এ প্রদর্শনী করে যাচ্ছি। সাগর সরোয়ার ও মেহরুন রুনির সঙ্গে কী ঘটেছিল, আমরা তা জানি না। আমরাও আট-দশটা পরিবারের মতো সাধারণ একটি পরিবার। আমাদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আমাদের আপনজনকে হত্যা করা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এসব বিষয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। সবাই চুপ হয়ে গেলেও আমরা আমাদের মতো করে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো।

কী এমন রহস্য যে কিনারা মিলছে না

প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিচার চাই, মেঘের কাছে দায়মুক্ত হতে চাই।’

সাদিয়া নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘ইতিহাসের পাতা উল্টাবেই। সত্য আড়াল করা হয়েছে, তা একদিন প্রকাশিত হবে। সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাই।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
মুঠোফোন কানে, ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ