X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৫৭আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৮

বাংলাদেশ গত এক দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, অতীতে বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনৈতিক দরবারে এগিয়ে গেলেও বর্তমানে ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে বিশ্ব রাজনীতিই বাংলাদেশের কাছে আসছে। যারা একসময় দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতো, তারা এখন বিনিয়োগকারী হিসেবে সম্পর্ক মজবুত করছে।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ড সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিরে একটি রাইজিং রাষ্ট্র মন্তব্য করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একসময় ধরে নেওয়া হয়েছিল যে বাংলাদেশ কোনোমতে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে। এখন ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে। আমাদের বর্তমান অর্থনীতি সেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।’

বৈঠকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘বিশ্বের চোখে এখন সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে যে বাংলাদেশ আগের মতো নয়। এই দেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে; সামনে আরও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক ভালো। এই জায়গায় বাংলাদেশের ওপর সবারই আগ্রহ আছে। সেটা চীন, পশ্চিমা বিশ্ব আর জাপান—যা-ই বলি। এর কারণ মূলত অর্থনৈতিক।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা একাত্তরে এবং একাত্তর-পরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য উক্তি শুনেছি। আজ ৫০ বছর পর বাংলাদেশ যে মূল্যায়নটা পাচ্ছে বিশ্বজুড়ে, সেটাই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশের কতখানি উন্নতি হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, রাজনৈতিক উন্নতিও ঘটেছে দেশের। এখন একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল হচ্ছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানুষ ভোট দেয়। বাংলাদেশে মাঝখানে যে অরাজনৈতিক সরকারগুলো এসেছে, তারাও অনেক উন্নত হয়েছে। তারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে দেখছে যে তাদেরও উন্নতি হবে, যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে। তাই তারাও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।’

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের যদি যোগাযোগ করতে হয় ল্যান্ডে, তাহলে বাংলাদেশের ওপর দিয়েই যেতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান, যার অর্থনৈতিক গুরুত্ব আমাদের আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বহির্বিশ্ব বিনিয়োগের জন্য একটা পজিটিভ রোল খুঁজবে। সর্বশেষ গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সে ১২০টি দেশের মধ্যে ২০ বছর আগে বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে চলে গিয়েছিল। গত ১৫ থেকে ১৮ বছরে নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পর এই সংকট কমে এখন আমাদের অবস্থান ৪৩ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড এমনকি ভারত থেকেও অনেক এগিয়ে। এভাবে যত নম্বর বাড়বে, বাংলাদেশ ততই নিরাপদ হবে। যেমন ভুটান ৯৯ অবস্থানে আছে। তার মানে তারা খুবই ভালো অবস্থানে আছে। আবার এর উল্টো অবস্থানও আছে; গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে ১৬৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬ নম্বরে। ফলে ২০ বছর আগে যে জাপান আমাদের বড় দাতা ছিল, আজ তারা আমদের বড় বিনিয়োগকারী।’

সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করীম বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে। এই ৫২ বছরে সত্যিকার অর্থে গর্ব করার মতো কিছু হয়ে থাকলে অবশ্যই বলতে হবে গত ১০ থেকে ১২ বছরে তা হয়েছে। আমাদের গর্ব করার মতো বিষয় হলো আর্থসামাজিক উন্নয়ন। এ জন্য বড় ভূমিকা আমাদের কৃষক, পোশাকশ্রমিক ও প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের; যাদের কারণে আজ বাংলাদেশ এই শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতি অবস্থান ও উন্নয়ন দুই কারণেই বাংলাদেশের কাছে আসছে। কারণ আমরা সবার জন্য সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন যে সম্পর্ক বজায় রেখে আসছি, তা আরও শক্তিশালী করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, ‘আজকের বিষয় নিয়ে আমরা যে ধরনের মাইনসেট ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলছি, ২৯ থেকে ৩০ বছর আগে সেই পরিবেশ ছিল না। বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এত বেশি পলিটিক্যাল, এত বেশি কনজারভেটিভ যে এই সফলতাকে মানতে চায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বহির্বিশ্বের সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ওপর গবেষণা করছে এবং বাংলাদেশের আগামীর দিনগুলো অনুধাবন করছে। যেমন বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ান ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি হচ্ছে। এটা বাংলাদেশ থেকে বলা হচ্ছে না, এই বিষয়গুলো জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রও অনুধাবন করতে পারছে। অতীতে আমরা বিশ্ব রাজনীতির কাছে গিয়েছি আজ তারা আসছে। আজ বিশ্ব রাজনীতি আমাদের কাছে আসছে।’

সম্প্রতি জাপান সফর বাংলাদেশের সক্ষমতার স্বীকৃতি পেয়েছে মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ জমির বলেন, ‘এত আলোচনায় দুটি শব্দ কেউ ব্যবহার করেনি, সেটা হলো জাতীয় স্বার্থ। যখন বলা হয় যে আমরা বিনিয়োগ করবো, সেখানে তখন প্রশ্ন আসে, সেই বিনিয়োগ করার প্রয়োজন কি এবং তাতে কতটা সক্ষমতা বাড়বে যেখানে বিনিয়োগ করা হচ্ছে? আমাদের আমদানি যতটা হচ্ছে, রফতানি হচ্ছে না। তবে যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসছে, তাদের যেন উলটো পথে যেতে না হয়।’

/জেডএ/এনএআর/
সম্পর্কিত
শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে: প্রধানমন্ত্রী
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
সর্বশেষ খবর
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ