X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

কী অবস্থা বইমেলার খাবারের স্টল অংশের?

সুবর্ণ আসসাইফ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৫আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪০

অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রতিবারের মতো এবারও একপাশে খাবারের স্টলের ব্যবস্থা রেখেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। এমন একটি উদ্যোগ মেলায় আসা সবার জন্য আশীর্বাদ হতে পারতো। তবে বাস্তবে মেলার এই অংশটি অব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবে বাঙালির প্রাণের মেলার অসুন্দর অংশে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ দর্শনার্থী, বিক্রয়কর্মী, লেখকদের।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার খাবার স্টল অংশ ঘুরে দেখা যায়, মেলা শুরুর এক সপ্তাহ পার হলেও এখনও খাবারের নির্ধারিত মূল্য তালিকা তৈরি করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। ইচ্ছেমতো দাম বসিয়ে বেচাবিক্রি করছে দোকানগুলো। ফলে বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে বইমেলায় আসা দর্শনার্থীদের।

শুধু মূল্যতালিকা না, এখনও গুছিয়ে ওঠেনি খাবার স্টল অংশের পুরোটা। অধিকাংশই পিঠা আর ফুচকার দোকান। মাত্র একটি দোকানে পিঠার সঙ্গে রাখা হয়েছে মাংস, লুচি, রুটি। এর বাইরে একটি কফির দোকান, কয়েকটি মোমো আর আইসক্রিমের দোকান। দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেকোনও রকমের পিঠা প্রতি পিস সর্বনিম্ন ৪০টাকা, ফুচকার প্লেট ৬০ টাকা, মোমো প্রতি প্লেটে ৫টা ১০০ টাকা, কফি ৩০ টাকা। আর মাংস, লুচি, রুটির প্যাকেজ রাখা হচ্ছে ৩৫০ টাকা।

নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বইমেলায় খাবারের স্টলগুলোয় সাধারণ চুলার ব্যবহার

বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসে মোমো খাচ্ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুবা তাবাসসুম। তিনি বলেন, পিঠার দাম ৪০টাকা করে। ৫টা মোমো ১০০ টাকা। রাস্তার ধারে একই মানের পিঠা ও মোমো প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়।

মেলার খাবার দোকানের মান নিয়েও আক্ষেপ দর্শনার্থীদের। বিগত সময়েও ভাজাপোড়ার দোকানেই সীমাবদ্ধ ছিল বইমেলার খাবারের দোকানগুলো। দর্শনার্থীরা বলছেন, মেলায় খাবারের দোকানে বৈচিত্র্য রাখা যেতো। ভাজাপোড়া, ফুচকার বাইরেও সবার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী খাবার রাখা যেতো। একজন পাঠক দীর্ঘ সময় বই মেলায় থাকেন। এসময়ে তার ক্ষুধা লাগতেই পারে। ফলে বাধ্য হয়েই নির্দিষ্ট কিছু খাবারই খেতে হচ্ছে তাদের।

সন্ধ্যায় কথা হয় মিরপুর থেকে আসা সাদিয়া আফরিন মৌরির সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩টার সময়ই মেলায় আসছি। এবার আর আসা হবে না, তাই একদিনেই অনেক বই কিনবো ইচ্ছে। এখন ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা লাগায় খাবার খোঁজে আসলাম। ফুচকা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। তাও যদি ভালো মানের হতো।

এখানেই শেষ নয় বাংলা একাডেমির নিষেধ থাকা সত্ত্বেও স্টলগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ চুলা ও গ্যাসের চুলা। যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আবার গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একটি খাবার স্টলের মালিক সজীব বলেন, আমাদের বলা হয়েছিলে পরিবেশসম্মত চুলা ব্যবহার করতে। তাই আমরা ইলেকট্রনিক চুলা এনেছি। এতে আমাদের বিনিয়োগও বেড়েছে। কিন্ত মেলায় এসে দেখি সবাই সাধারণ চুলা ব্যবহার করছে।

খাবারের অতিরিক্ত দাম সম্পর্কে বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা বলছেন, তাদের অনেক টাকা দিয়ে স্টল নিতে হয়েছে। তাই বাইরের থেকে এখানে খাবারের দাম বেশি। আর বাংলা একাডেমি থেকে কোনও মূল্য তালিকা দেওয়া হয়নি। তাই লাভ রেখে ব্যবসা করছেন তারা। মূল্যতালিকা দিলেও এর থেকে কম মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে না।

যেখানে খুশি সেখানেই বসছেন আইসক্রিম ও মোমোর ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা

কুমিল্লা পিঠাঘরের বিক্রয়কর্মী সুজন বলেন, বাংলা একডেমি কোনও মূল্য তালিকা আমাদের দেয়নি। আমরা স্টল ভাড়া, ডেকোরোটিং খরচ সব খাবারের দামের সঙ্গে যুক্ত করেছি। একারণে একটু দাম বেশি। এর থেকে কম দাম নিলে আমাদের লোকসান হবে।

আইসক্রিম ও মোমো বিক্রেতা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাংলা একাডেমি সম্পর্কেই তারা জানেন না। পুলিশ আর স্থানীয় কয়েকজনকে তারা টাকা দিয়ে ঢুকেছেন। টাকার অঙ্ক কত তা বলতে তারা রাজি হননি।

একটি ভ্রামমাণ ফুডকোর্ট নিয়ে মোমো বিক্রি করছিলেন সজীব। বাংলা একাডেমির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজিমপুর এলাকায় মোমো বিক্রি করতেন। বইমেলায় বেশি বিক্রি হবে—এই কথা বলে পরিচিত একজন এখানে নিয়ে এসেছে। বিনিময়ে তাকে প্রতিদিন টাকা দিতে হবে।

মেলায় ঘুরে ক্লান্ত হলেও বিশুদ্ধ পানির বোতল বা স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়ার সুযোগ নেই বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের

খাবার ছাড়া নেই সুপেয় পানির উপযুক্ত ব্যবস্থাও। উদ্যানে লেকের পাশে কয়েকটি পানির ট্যাংকে বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের গ্লাস। একই গ্লাসে পানি খেতে হচ্ছে মেলায় আসা হাজার হাজার মানুষকে। বোতলজাত পানিও না পাওয়ায় পানি না খেয়ে কষ্ট করতে হচ্ছে অনেককে।

তরুণ লেখক সোহাগ ঘোষ বলেন, প্রতিদিনই বইমেলায় আসি পাঠকদের উৎসাহ দিতে। কিন্ত এখানে প্রতিবছরই ঘুরে ফিরে একই ভাজাপোড়া, ফুচকা। এতক্ষণ থেকে এ ধরনের খাবার খেতে তো ভালো লাগে না। বাংলা একাডেমি চাইলেও একটু ভালো ব্যবস্থা করতে পারতো।

পাঞ্জেরি পাবলিকেশনের বিক্রয়কর্মী অনামিকা শিকদার বলেন, আমাদের দুপুর থেকে রাত নাগাদ ডিউটি। ক্লাস করেই চলে আসতে হয় মেলায়। মেলায় এসে কিছু খাবো তেমন সুযোগ নেই।

লেখক ফাতেমা আবেদিন নাজলা বলেন, মেলা শুরুর প্রথম দুইদিন যেয়ে কয়েকটা চটপটি ছাড়া কোনো দোকান পাইনি। জুসের একটা দোকান ছিল, আরেকটা কফির দোকান। এগুলোতো সবাই খাই না। পুরো বইমেলায় একটা পানি কেনার জায়গা নেই। চায়ের দোকানও নেই। বাংলা একাডেমি যদি এতবড় মেলা আয়োজন করতে পারে, তাহলে তারা ২০টা খাবার দোকানও তারা সামলাতে পারবে। সবচেয়ে জরুরি স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা। বাংলা একাডেমি চাইলেই মেলা সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের হতে পারে।

লেখক, প্রকাশক ও বইয়ের ক্রেতা সবারই অভিযোগ খাবারের স্টলগুলো নিয়ে

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলা একাডেমির পরিচালক ও খাবার স্টল অংশের দায়িত্বে থাকা হাসান কবিরের সঙ্গে। ত্রুটির বিষয়গুলোও স্বীকার করে সমাধানের চেষ্টার কথাও জানান তিনি। মূল্য তালিকা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটু ব্যস্ততা ছিল। মাত্র আজ দোকান বরাদ্দ শেষ হলো। দ্রুতই মূল্য তালিকা ঠিক করে দেওয়া হবে।

খাবারের দাম, অবৈধ দোকান, সাধারণ চুলা ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মনিটরিং টিম গতকালও ঘুরে এসেছে। আগামীকালও যাবো। মূল্য তালিকা দেওয়ার পর কেউ বেশি দাম নিলে, চুলা ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনও চুলা, সিলিন্ডার গ্যাস হোক বা লাকড়ির ব্যবহার করা যাবে না মেলায়। অবৈধ দোকানের বিষয়টি আমরা আগেও লক্ষ্য করেছি। এদের কারা ঢুকতে দেয়, কীভাবে ঢোকে জানি না। মনিটারিংয়ের সময় এদের বের করে দেওয়া হবে।

বাংলা একাডেমির এই পরিচালক বলেন, পানির বিষয়ে আমরা বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওয়াসার সঙ্গে কথা হয়েছিল। তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ডিএমপির দেওয়ার কথা ছিল, তারা কী করেছে বা কবে করবে কিছু জানা নেই আমার।

ছবি: প্রতিবেদক।

/এফএস/
টাইমলাইন: বইমেলা ২০২৪
০১ মার্চ ২০২৪, ২৩:২১
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:৫৬
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০২
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:০১
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২৭
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১৫
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৪৯
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:২৬
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩৪
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৮
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৫
কী অবস্থা বইমেলার খাবারের স্টল অংশের?
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২৬
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:০৬
সম্পর্কিত
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে কিডনি ও মানবপাচারের তথ্য এখনও মেলেনি: ডিবি
শেখ হাসিনার বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পেছনে ড. ওয়াজেদ মিয়ার বড় ভূমিকা ছিল: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে দাম কমবে: খাদ্যমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
রিমান্ড শেষে কারাগারে মিল্টন সমাদ্দার
রিমান্ড শেষে কারাগারে মিল্টন সমাদ্দার
বানিয়াচংয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ২ জন নিহত
বানিয়াচংয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ২ জন নিহত
শিশু অপহরণের দায়ে বৃদ্ধের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
শিশু অপহরণের দায়ে বৃদ্ধের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের দাবি সিরিয়ার
ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের দাবি সিরিয়ার
সর্বাধিক পঠিত
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার