X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

গরম থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে ভিড়

আতিক হাসান শুভ
২০ এপ্রিল ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২২:০০

গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না মানুষ। তাই তারা স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছে ফুটপাতের শরবতে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরবতের চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কেও গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে এসব দোকানে বেশি ভিড় করছে রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা।

বিভিন্ন রকমের শরবত বিক্রি হচ্ছে ভাসমান এসব দোকানে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ সময় লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, আখের রস এবং বেল, পেঁপে, মাল্টা, শাহিদানা ও উলটকম্বলের শরবত।

গরম থেকে বাঁচতে ও সাময়িক স্বস্তি পেতে স্বল্প আয়ের মানুষ এসব শরবতে ঝুঁকে পড়ছে। ক্ষতিকর নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মুখরোচক এসব শরবত যে স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তা বেশির ভাগ মানুষই জানে না। তাই যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা কিংবা ফুটপাতের এসব দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।

গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তৃপ্তিসহকারে তা পান করছে আগের রস

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ও বিভিন্ন অলিগলিতে নানা ধরনের মুখরোচক শরবত বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তৃপ্তিসহকারে তা পান করছে সাধারণ মানুষ।

যা বলছেন সাধারণ মানুষ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভরদুপুরে শরবত পান করছিলেন জব্বার আলী (৪০) নামের এক রিকশাচালক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অনেক ঘামছি, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে সব খ্যাপ নিতে পারছি না। একেকটা খেপ শেষ করে লম্বা সময় বিশ্রাম নিতে হয়। আজ সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তখন থেকে এ পর্যন্ত সাত গ্লাস শরবত খেয়েছি। এখনই একসঙ্গে দুই গ্লাস খেলাম। রাত ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালাবো। ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো আরও পাঁচ-সাত গ্লাস খাওয়া হবে।’

কবি নজরুল কলেজের সামনে লেবুর শরবত পান করছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আফরান। তিনি বলেন, ‘গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। যতই ঠান্ডা পানি পান করি কোনও কাজ হচ্ছে না।’ কিন্তু এসব শরবত স্বাস্থ্যসম্মত নয়, জানতে চাইলে বলেন, ‘বাইরের শরবত অস্বাস্থ্যকর ও ধুলাবালুযুক্ত, এটা জানি। কিন্তু তৃষ্ণা মেটাতে সহজলভ্য এই শরবতের বিকল্প কিছু নেই।’

ক্ষতিকর নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মুখরোচক শরবত পান করছে পথচারীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বেলের শরবত পানরত পথচারী আরমান হোসেন বলেন, ‘ইসলামপুরে এসেছি দোকানের জন্য কেনাকাটা করতে। গরমে একেবারে ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। জ্যামের কারণে গুলিস্তান থেকে হেঁটে এই পর্যন্ত এসেছি। হাঁটতে হাঁটতে দু-এক গ্লাস লেবুর শরবত এবং এক গ্লাস আখের রস পান করেছি। এখানে এসে এখন বেলের শরবত পান করছি।’ স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও সাময়িক তৃপ্তির বিষয়ে বললেন তিনিও।

পাঁচ বছর ধরে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন শফিকুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। আগে এই এলাকাতেই দুই-তিনটি দোকান ছিল। এখন অন্তত ১০ থেকে ১২টি দোকান আছে। গরম বাড়ার সঙ্গে মানুষের শরবত পানের চাহিদাও বেড়েছে। তাই দোকানও বেড়েছে। তবে বেচাকেনা কমেনি, বেচাকেনাও বেড়েছে।’

শরবতের দাম ও উপকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পাঁচ টাকা করে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি করেছি। এখন ১০ টাকা রাখি। সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি জার পানি ৫০ টাকা করে কিনতে হয়। এ ছাড়া বরফ, লেবু, চিনি এসবের দামও আছে। দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয়। ফুটপাতে বসার জন্য চাঁদা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে লাভ থাকে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। তবে গতবারের তুলনায় এবার লাভ কম হচ্ছে। কারণ দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।’

শরবতের পাশাপাশি ডাব, আনারস ও তরমুজের চাহিদাও বেড়েছে  (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

চাহিদাও বেড়েছে ডাব, আনারস, তরমুজেরও
গরমের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে রাজধানীতে শরবতের পাশাপাশি ডাব, আনারস ও তরমুজের চাহিদাও বেড়েছে। রায়হান নামের এক তরমুজ বিক্রেতা বলেন, রমজানের শেষ পর্যায়ে তরমুজ বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। তবে এখন গরমের কারণে বেড়েছে। এখন দামও মোটামুটি কম। মাঝারি সাইজের একটা তরমুজ দুই থেকে আড়াই শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট সাইজের তরমুজ ১০০ টাকা। আবার যারা এক পিস খেতে চায়, সেই ব্যবস্থাও আছে। পিস করেও তরমুজ বিক্রি করা হয়।

পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ডাব বিক্রেতা শাহ আলম জানান, আগের তুলনায় ডাব বিক্রি বেড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সচেতন যারা আছে, তারা ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর শরবত পান করেন না। দাম একটু বেশি হলেও তারা ডাব খান। কারণ এটা নিরাপদ।

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আশঙ্কা
ফুটপাতের মুখরোচক শরবতের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ফুটপাতের শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এগুলো থেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন: টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস এসব হতে পারে। ফুটপাতে শরবত পানের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি বহন করাই সবচেয়ে ভালো।

আরও পড়ুন
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?

/এনএআর/
সম্পর্কিত
রিকশাচালকদের ছাতা বিতরণ করলেন মেয়র আতিক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
সর্বশেষ খবর
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
৭৮ দিন পর গ্রামের বাড়িতে তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের মরদেহ
৭৮ দিন পর গ্রামের বাড়িতে তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের মরদেহ
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত