আসন্ন বাজেটে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্ট সেক্টরের শ্রমিক-মালিকসহ বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু ১ কোটি মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করেছেন, সে জায়গায় আরও ৪৭ লাখ শ্রমিকের রেশনিং ব্যবস্থা করা সরকারপ্রধানের জন্য তেমন একটা কঠিন বিষয় হবে না। মালিক পক্ষ যদি সরকারের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে হয়তো বিষয়টা কার্যকর হতে পারে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আসছে বাজেটে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকার প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিক ভালো থাকলে যেমন মালিক পক্ষের সুবিধা তেমনই রাষ্ট্রেরও সুবিধা হয়। কারণ শ্রমিক সুস্থ থাকলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। শ্রমিকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে তার ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে, পাশাপাশি মালিকের ওপর চাপ অনেকাংশে কমবে। আমরা আশা করবো, আসছে বাজেটে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকবে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষকে কম মূল্যে টিসিবির পণ্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যাদের ওপর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে তাদের জন্য সামান্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু এত বড় কোনও বিষয় না।’
মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে শ্রমিকদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘মূল্যস্ফিতি বেড়ে গেলে শ্রমিকদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। রেশনিংয়ের দাবিটা এত সামান্য, যা নিয়ে সরকারের কোনও চিন্তার কারণ নেই। একজন শ্রমিক কী পরিমাণ রেশন পাবে, তার পরিবারের সদস্যরা কী পরিমাণ পাবে, তার সন্তানরা কী পরিমাণ পাবে এ সব সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে।’
গার্মেন্টস সেক্টরে রেশনিং ভর্তুকি দিলে সরকারের সুনাম বাড়বে উল্লেখ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় গার্মেন্টস সেক্টরে মেনুফেকচারের মধ্যে বাংলাদেশের হলো ২১ শতাংশ। যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের ১৪ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ চীনের ২৯ শতাংশ। সর্বশেষ তথ্যমতে দেশের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ। যে কারণে এখন থেকে শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা খুবই জরুরি।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেডইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন– মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।