আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা। মাদকের প্রভাব পুরুষের ওপর পরলেও নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও প্রজননজনিত কারণে সেটা আরও তীব্র হয়— যা নারীর শারীরিক, মানসিক, সন্তান ধারণ, জন্ম ও লালন-পালনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মাদক সেবনকারী নারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ইয়াবা ও গাঁজায় আসক্ত। মাদক গ্রহণকারী নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও তারা চিকিৎসায় পিছিয়ে রয়েছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর কল্যাণপুরে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের ‘নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ সংগঠনটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাদকাসক্ত নারীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে গত ১০ বছরে ৭৬২ জন নারীকে মাদক ও মানসিক সমস্যাবিষয়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৩ জন মাদকজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯৯ জন।
তিনি বলেন, তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা যায় যে, চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণকারী, ৩৯ গাঁজা, ২৫ শতাংশ ঘুমের ওষুধ, ২৩ শতাংশ একইসঙ্গে বিভিন্ন মাদক গ্রহণকারী, ৭ শতাংশ মদ ও ৩ শতাংশ শিরায় মাদক গ্রহণকারী, বাকিরা অন্যান্য মাদক গ্রহণকারী।
তিনি জানান, পুনর্বাসন কেন্দ্রে আগত নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ণ করেছেন, মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছেন ২২ শতাংশ এবং বিভিন্ন কারণে ৪ শতাংশ রোগীকে রেফার করা হয়েছে এবং ৪ শতাংশ রোগী বর্তমানে চিকিৎসারত আছেন। আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘ডাম হেলথ অ্যাপের’ মাধ্যমে রোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘মাদক গ্রহণকারী নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও, মাদকের চিকিৎসায় তারা পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু মাদকনির্ভরশীলতা একটি মানসিক রোগ, তাই মাদকমুক্তরা পুনরায় মাদক গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। সেক্ষেত্রে সমাজের সব পর্যায় থেকে সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।