নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ (সিএমএস) এবং আইন বিভাগ যৌথভাবে “শ্রম আইন ও বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় চ্যালেঞ্জসমূহ” শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস উদযাপন করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এই আয়োজন করা হয়। গোলটেবিলে সরকারি কর্মকর্তা, শ্রমিকদের সংগঠন, শ্রম অধিকার কর্মী, ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বাংলাদেশে শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণ এবং শ্রম আইনের কার্যকরিতা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
সিএমএস-এর সমন্বয়ক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিম রেজা এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আলোচকদের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রফতানি বিভাগ) মোহাম্মদ হোসেন সরকার বলেন যে, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার শ্রম সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং উন্নত দেশগুলোর সাথে দেশের শ্রম অধিকার উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও, সরকার সকল খাতে শ্রমিকদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বর্তমান শ্রম আইন সংশোধনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, বর্তমান সরকার আমাদের রফতানি গন্তব্য দেশগুলো থেকে সর্বোত্তম সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক চাপ মাথায় রেখে শ্রম শর্তগুলোর উন্নয়নে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদ মন্তব্য করেন যে, দেশের বর্তমান মজুরি কাঠামো জীবনযাত্রা নির্বাহে যথেষ্ট নয়। এমনকি বিভিন্ন অভিজ্ঞ পেশাদার যেমন ডাক্তার এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তারাও জীবন নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদেরকে সুরক্ষায় কাজ করা উচিৎ। তিনি বাংলাদেশের সকল শ্রমিকদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম মজুরি কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট খাত যেমন তৈরিপোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য কর্মপরিকল্পনা সীমাবদ্ধ না রেখে সব খাতের শ্রমিকদেরকেই বিবেচনায় আনতে হবে। এছাড়াও, তিনি মনে করেন মালিক ও শ্রমিকদের ও মধ্যের আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা উচিৎ। তিনি সব শ্রমিকদের জন্য সমানভাবে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সলিডারিটি সেন্টার, বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি প্রোগ্রাম অফিসার অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম বলেন যে, শ্রম আইনের সংশোধন অনেক শ্রমিকের জন্য মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করে। তিনি শ্রম আইনে মৌলিক সংজ্ঞাগত অস্পষ্টতা সম্পর্কিত সমস্যাগুলো উল্লেখ করেন। তিনি পরামর্শ দেন যে, সকল শ্রমিক, এমনকি যারা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজি) কাজ করছেন তাদেরকেসহ সব শ্রমিকের জন্য দর কষাকষি ও ইউনিয়ন করার স্বাধীনতা সংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশ অফিসের প্রোগ্রাম অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল অভি হোসেন শ্রম খাতের পরিবেশ ও শ্রম খাতের নানাবিধ সংশোধনের ক্ষেত্রে আইএলও-এর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তিনি যুক্তি তুলে ধরেন যে, যখন এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে বাংলাদেশ উন্নীত হবে তখন বাংলাদেশের জন্য শ্রম অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে শিশু শ্রম সমস্যাটি সমাধান করতে হবে।
আলোচকরা শ্রমিকের অধিকার সংরক্ষণে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন। নিরাপদ এবং ন্যায্য কর্মপরিবেশ নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে তারা প্রধানত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরকে জাতীয় শ্রম নীতিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সকল অংশীজনের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা থাকা রাখার জন্য জোর দেন।
সিএমএস-এর সমন্বয়ক এবং আলোচনা সঞ্চালনকারী ড. সেলিম রেজা উল্লেখ করেন যে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএমএস বিভিন্ন শ্রম ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। এটা শুধু একটি প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব নয়, বরং শ্রমিকদেরকে অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে এটি একটি মানবিক এবং নৈতিক প্রতিশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি আলোচনার থেকে উঠে আসা মন্তব্যগুলোর প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতেও সিএমএস এরকম আলোচনামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বলে আশ্বাস দেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আব্দুর রব খান তার সমাপনী মন্তব্যে ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দেন যেখানে এনএসইউ ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞদের সাথে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পাবে। এনএসইউ আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আরাফাত হোসেন খান সুন্দর আলোচনার জন্য গোলটেবিলের সকল আলোচক এবং অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।